নিজস্ব প্রতিনিধি:
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের নদী-খালে মাছ ও বন্য প্রাণীদের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় আজ শনিবার (১জুন) থেকে আগামী তিন মাসের জন্য বন্ধ করা হয়েছে সুন্দরবনের দুয়ার। এসময় পর্যটক প্রবেশ এবং নদী ও খালে মাছ শিকার বন্ধ থাকবে।
একই সাথে ৩৬ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসে তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ায় জেলেদের পাশাপাশি বনজীবীসহ সকল প্রকার পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকবে সুন্দরবন প্রবেশের সব পাস-পারমিট। পারমিট নিয়ে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও জেলে-বনজীবীসহ সব ধরনের পর্যটকরা সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
এদিকে, নিষেধাজ্ঞা সামনে রেখে গহিন সুন্দরবন থেকে ইতিমধ্যে লোকালয়ে ফিরে এসেছেন সাতক্ষীরা উপকূলীয় অ লের বনজীবী হিসেবে পরিচিত জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালরা। তবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দীর্ঘ ৯২দিনের নিষেধাজ্ঞায় কীভাবে সংসার চালাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বনজীবীরা। বনজীবীরা বলছেন, বন্ধের দিন গুলোয় তাদের জন্য সরকারি যে সহায়তা দেওয়া হয়, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এজন্য সরকারি সহায়তার বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
বন বিভাগ ও মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনে এখন ২৫১ প্রজাতির মাছের প্রজনন মৌসুম। তাই বন বিভাগ থেকে জেলেদের জন্য সব ধরনের পারমিট বন্ধ রাখা হবে। বনের নদী ও খালে নৌযান চলাচল করলে মাছের ডিম ছাড়তে সমস্যা হবে তাই সব ধরনের নৌযানও বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া বনে ৩১৫ প্রজাতির পাখি, ৩৫ প্রকারের সরীসৃপ, ৪২ প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। এখন তাদের প্রজনন মৌসুম চলছে। এসব প্রাণীর মধ্যে রয়েছে বাঘ, হরিণ, শুকর, বানর, কুমির, ডলফিন, ভোঁদড়, বন বিড়াল ও মেছো বাঘসহ অন্যান্য প্রাণী। সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক এক পাঁচ ভাগ। সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে।
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এমকেএম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী জানান, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বৈশ্বিক বিপর্যয় সংক্রান্ত নানামুখী প্রতিকূলতা রোধ করে উপকূলীয় অ লে ডেলটা প্ল্যান এর সফল বাস্তবায়নের আওতায় বিশ্বের ম্যানগ্রোভ বনভূমির ইকোসিস্টেম পূনরুজ্জীবিতকরণ এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-এর ১৩ ও ১৪ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা প্রত্যক্ষভাবে অর্জনের লক্ষ্যে জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে সর্বপ্রকার পর্যটন ও বন নির্ভর পেশা স্থগিত রাখা হয়েছে। এ আইন অমান্য করলে বন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, এই সময়ের ভিতরে সংরক্ষিত এলাকাটির উপর জীবন জীবিকার তাগিদে নির্ভরশীল বাওয়ালি, মৎস্যজীবী অথবা নির্ধারিত সময়গুলোতে বিশেষ খাদ্য সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে পুনরায় সবার জন্য সুন্দরবনের দুয়ার খুলে দেওয়া হবে।