হোম জাতীয় সুন্দরবন রক্ষায় কারও সঙ্গেই আপস নয়: হাইকোর্ট

জাতীয় ডেস্ক :

সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্য এবং উদ্ভিদ বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য কারও কোনো অন্যায় দাবির সঙ্গে কোনোভাবেই আপস করা যাবে না। এজন্য বন বিভাগসহ সুন্দরবনের অভ্যন্তরে চলাচলকারী আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর এই রায় ঘোষণা করেন।

৭ দফা নির্দেশনা, অভিমতসহ মোট ১৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি বুধবার (১০ আগস্ট) প্রকাশিত হয়।

উচ্চ আদালত বলেন, কোনো অবস্থাতেই সুন্দরবনের অভ্যন্তরে সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত এলাকার খালের ভেতরে কোনো প্রকার ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ট্রলার চলাচল করতে পারবে না। জেলেরা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সুন্দরবনের সংশ্লিষ্ট স্টেশন অফিসে রাজস্ব দিয়ে পাস সংগ্রহ করে কেবল বৈঠাচালিত নৌকা এবং দোন দড়ির মাধ্যমে নির্দিষ্ট ওজনের কাঁকড়া আহরণ করতে পারবেন। পাস নিয়ে কাঁকড়া আহরণের জন্য সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশের সময় বন বিভাগের স্টেশন অফিস থেকে কঠোরভাবে সংশ্লিষ্ট নৌকা ও নৌকার লোকদের পরীক্ষা করতে হবে।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, পাস নিয়ে কাঁকড়া আহরণের জন্য সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশের সময় বন বিভাগের স্টেশন অফিস থেকে কঠোরভাবে সংশ্লিষ্ট নৌকা ও নৌকার লোকদের পরীক্ষা করতে হবে। যাতে কোনো প্রকার চারু (কাঁকড়া ধরার জন্য বাঁশের শলা নির্মিত চাই যা স্থানীয়ভাবে চারু নামে পরিচিত) এবং ‘বিষ’ কিংবা অন্য কোনো বেআইনি জিনিস বনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে। এক্ষেত্রে দিনের বেলায় তাদের নৌকা পরীক্ষা করে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি দেয়া সমীচীন হবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত ইঞ্জিন চালিত নৌকার/ট্রলারের কাঁকড়া পরিবহনের জন্য সুনির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করতে হবে এবং ওই সব ইঞ্জিনচালিত নৌকা/ট্রলার সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশকালে স্থানীয় স্টেশন অফিস কর্তৃপক্ষ উক্ত নৌকা/ট্রলার কঠোরভাবে পরীক্ষা করে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি দেবে, যাতে কোনো প্রকার বেআইনি জিনিস যা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য ধ্বংস করতে পারে, তা যেন সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করাতে না পারে।

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, সুন্দরবন সংলগ্ন স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কৃষি বিভাগ, মৎস্য বিভাগ ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়মিতভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন স্থানীয় বাজার, ওষুধের দোকানসহ কৃষির জন্য সার, ওষুধ ও বীজ বিক্রির দোকানগুলোতে অনুসন্ধান করতে হবে যাতে ওই এলাকায় অননুমোদিত কোনো বিষ বিক্রি করা না হয়।

বিষ নিয়ে মাছ শিকার করলে কিংবা চারু পদ্ধতির মাধ্যমে কাঁকড়া শিকার করলে ওই নৌকার সকল আরোহীকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।

পাস সংগ্রহ করে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশকালে কিংবা সুন্দরবনে অবস্থানকালে কাঁকড়া জেলেসহ মৎস্য জেলে এবং অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাছে কোনো বেআইনি দ্রব্য পাওয়া গেলে তাদের কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি নৌকা পাস নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশকালে তাদের জন্য কী কী করণীয় এবং কী করা দণ্ডনীয় সে সম্পর্কিত হ্যান্ডবিল/পোস্টার সরবরাহ করা যেতে পারে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলেছেন, সুন্দরবন বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট যা বাংলাদেশের মানুষকে ঝড় জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্মরণাতীতকাল থেকে ঢাল হিসেবে নিজেকে ব্যবহার করে জনজীবনকে স্বাভাবিক রাখছে। সুন্দরবন প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি। দক্ষিণাঞ্চলের এক বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার একমাত্র মাধ্যম সুন্দরবন এবং এই বন থেকে আহরিত বনজ ও জলজ সম্পদ বাজারজাত করে তাদের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে।

তবে সুন্দরবনের সংক্ষরিত ও সুরক্ষিত এলাকার বাইরে ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ট্রলারে করে এখন কাঁকড়া পরিবহন করা যাবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন