হোম খুলনাবাগেরহাট সুন্দরবন থেকে অবৈধ কাঁকড়া শিকার ও চাঁদাবাজি, তারপরও ছাড় পেয়ে গেল নৌকা ও ব্যক্তি

সুন্দরবন থেকে অবৈধ কাঁকড়া শিকার ও চাঁদাবাজি, তারপরও ছাড় পেয়ে গেল নৌকা ও ব্যক্তি

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 40 ভিউজ
মোংলা প্রতিনিধি:
মোংলায় সুন্দরবন থেকে অবৈধভাবে শিকার হওয়া কাঁকড়ার নৌকায় চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। কাঁকড়ার নৌকার জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা নিতে গিয়ে স্থানীয় তিন চাঁদাবাজ গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। ওই সময় মিলন মল্লিক নামের এক চাঁদাবাজকে ধরে স্থানীয়রা পুলিশে দেয়। পরে প্রভাবশালীদের তদবিরে ওই চাঁদাবাজকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এছাড়া সুন্দরবনের নিষিদ্ধ সময়ে অবৈধভাবে আহরণকৃত কাঁকড়ার নৌকা জব্দ করলেও রহস্যজনক কারণেও তা ছেড়ে দেয় পুলিশ।
পুলিশের দাবি, মানবিক কারণে কাঁকড়াসহ নৌকা ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর রাজনৈতিক নেতাদের তদবিরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে চাঁদাবাজকে। অবৈধ কাঁকড়ার নৌকা ও চাঁদাবাজকে ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় জনমনে ক্ষোভোর পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের বাঁশতলা বাজার সংলগ্ন খালে সোমবার রাত ১টার দিকে সুন্দরবন থেকে অবৈধভাবে শিকার করা ২০টি কাঁকড়ার নৌকা আসে। নৌকাগুলোতে বিপুল পরিমাণ কাঁকড়া ছিল। খালে কাঁকড়া নৌকা আসার খবর পেয়ে স্থানীয় তিন চাঁদাবাজ কাঁকড়ার নৌকায় গিয়ে জেলেদের কাছে চাঁদা দাবী করেন। নিষিদ্ধ সময়ে অবৈধভাবে কাঁকড়া আহরণ করা হয়েছে তাই তাদেরকে চাঁদা দিতে হবে। অন্যথায় কাঁকড়াসহ জেলেদের পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান তারা।
তখন জেলেরা নিরুপায় হয়ে প্রথমে চাঁদাবাজদের কিছু (এক হাজার) টাকা দেন। তাতে চাঁদাবাজরা সন্তুষ্ট না হলে দ্বিতীয় দফায় তা আরেকটু বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা দেন। তাতেও চাঁদাবাজরা রাজি না হলে তারা উভয় (চাঁদাবাজ ও জেলে) বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে জেলেরা মিলে চাঁদাবাজদের গণপিটুনি দেন। আর ওই সময় জেলেরা ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করলে আশপাশের বিপুলসংখ্যক লোক ছুটে আসেন। তারা এসে এক চাঁদাবাজকে (মিলন মল্লিক) আটক করেন, বাকী দুইজন পালিয়ে যান।
পরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলেও আসলে ওই চাঁদাবাজকে পুলিশে দেন স্থানীয়রা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আটক ওই চাঁদাবাজকে ছেড়ে দেন পুলিশ। এছাড়াও ছেড়ে দেন কাঁকড়ার নৌকাগুলো। ওই নৌকাগুলোতে কয়েক লাখ টাকা মূল্যের কাঁকড়া ছিল বলে জানান স্থানীয়রা। জেলেরা অবৈধভাবে সুন্দরবনের আন্ধারমানিক এলাকা থেকে এ কাঁকড়া আহরণ করেন। জেলেদের দাবি, তারা কতিপয় বন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই নিষিদ্ধ সময়ে অবৈধভাবে কাঁকড়া আহরণ করছেন।
এ বিষয়ে চটেরহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে প্রথমে ফাঁড়ির টহল পুলিশ পাঠাই। এরপর থানা থেকেও একটি টিম পাঠানো হয় সেখানে। একপর্যায়ে আমিও যাই ঘটনাস্থলে। কিন্তু উপজেলার শীর্ষ স্থানীয় এক বিএনপি ও এক জামায়াত নেতার তদবিরে চাঁদাবাজকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর মানবিক কারণে ছেড়ে দেয়া হয়েছে কাঁকড়া ধরা জেলেদেরকেও’।
এদিকে ঘটনাস্থলে যায় থানার পুলিশও। যদিও থানার পুলিশ ওসির (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) অনুমতি ছাড়া কোথাও যেতে পারেন না। কোথাও গেলেও ওসিকে অবগত করেই যেতে হয়। কিন্ত মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, আমি এসব বিষয়ের কিছুই জানিনা।
অপরদিকে সুন্দরবনের মাছ ও কাঁকড়া আহরণে গত ১লা জুন থেকে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে জেলেরা বনবিভাগকে ম্যানেজ করেই অবৈধভাবে কাঁকড়া  আহরণ করছে। কাঁকড়া ধরা জেলেরা বলেন, বনবিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই নিষিদ্ধ সময়ে আমরা কাঁকড়া ধরি। এ বাবদ নৌকা প্রতি সাত হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয় বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক টহল ফাঁড়ির ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) অভিক চৌধুরীকে। এছাড়া পথে পথেও বিভিন্ন জায়গা দিতে হয় ঘুষ, যার ফলে নিষিদ্ধ সময় হলেও আমাদেরকে কেউ ধরেন না।
এ বিষয়ে জানতে বন কর্মকর্তা অভিক চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
এদিকে নিষিদ্ধ সময়ে কাঁকড়া আহরণ ও ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম বলেন, ‘এমন তো হওয়ার কথা না। এটা আমার নলেজে নেই। এটা সত্য কিনা আমার তদন্ত করতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো যখন যাকে (জেলে) জিজ্ঞেস করা হয় তখন তারা বাঁচার জন্য এটা বলে আমরা যোগাযোগ করে আসছি। এটা এখন একটা কমন প্রাকটিস হয়ে গেছে। তারপরও আমি বিষয়টি চেক করে দেখছি’। #a

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন