মোংলা প্রতিনিধি :
অনেক নাটকীয়তায় ছয়দিন পর নিখোঁজ যুবকেরর লাশ সুন্দরবনের ভেতরে খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) রাত সোয়া ৮ টার দিকে বনের করমজল সংলগ্ন সুন্দরবনের ভেতরে লাশটি সনাক্ত করে তারা। মোংলা চাঁদপাই নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন খাঁন রাত সাড়ে ৯ টায় এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে কীভাবে লাশটি সুন্দরবনের ভেতরে গেলো তদন্ত না করে কিছুই বলা যাবেনা বলে জানান তিনি। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার (১২ এপ্রিল) রাতে মোংলা থানায় সাধারণ ডাইরি করেছেন নিখোঁজ হিলটনের মা বিথিকা নাথ। বনবিভাগের অভিযানের সময় তার ছেলে পশুর নদীতে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হয় বলে সাধারণ ডাইরিতে উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে এদিন দুপুরে যুবক হিলটন নাথের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় যায় খুলনা রেঞ্জের পুলিশের উর্ধ্বতন তদন্তকারী একটি দল। সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে বনরক্ষীদের ধাওয়া খেয়ে গত ৭ এপ্রিল নিখোঁজ হন মোংলা উপজেলার চিলা এলাকার মিঠুন নাথের ছেলে হিলটন নাথ। তবে শুরু থেকেই তা অস্বীকার করে আসছে বনবিভাগ।
গত ১১ এপ্রিল নিখোঁজ হিলটনের লাশ চাঁদপাই রেঞ্জের জোংড়া ক্যাম্পে ঘাটে ভেসে উঠলে হইচই পড়ে যায়। তাৎক্ষণিক ছুটে যান নিখোঁজের স্বজনেরা। এসময় নিখোঁজ হিলটনের মা জোংড়া ক্যাম্পের ওসি আলমগীর হোসেনের পা জড়িয়ে কান্নাকাটি করে তার ছেলের লাশ চায়। কিন্তু তারা কিছু জানেননা বলে স্বজনদের চলে যেতে বলে বনকর্মকর্তা আলমগীর। বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে তিনি তা স্বীকারও করেছেন।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) শেখ মাহবুব হাসান বলেন, গত ৭ এপ্রিল সুন্দরবনের চাঁদপাই এলাকায় অবৈধভাবে মাছ শিকারের সময় তিন যুবককে আটক করে জেলে পাঠানো হয়। এসময় হিলটন নামে কোন যুবককে তার ধাওয়া করে নদীতে ফেলার ঘটনা ঘটেনি।
তবে হিলটন নাথের চাচা শিপন মৃধা বলেন, গত ৭ এপ্রিল বনবিভাগ দুটি স্পীটবোট ও দুটি ট্রলার নিয়ে জোংড়া খালে ঢুকে মাছ ধরা অবস্থায় জেলেদের মারপিট শুরু করে। এসময় জাকির, সাগর ও অসিমকে আটক করে বনরক্ষীরা। তবে এসময় তাদের সাথে থাকা সাগরের ভাই হিলটন বনরক্ষীদের ধাওয়া খেয়ে খালে পড়ে যান। রাতের অন্ধকারে অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে এই তিনজনকে পরদিন ৮ এপ্রিল (শনিবার) আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়। এরপর হিলটনকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন তার স্বজনেরা।
নিখোঁজ এই হিলটনের লাশ অবশেষে সুন্দরবনের মধ্যে খুঁজে পাওয়া গেছে। মোংলা চাঁদপাই নৌ থানার ওসি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন খাঁনের বরাত দিয়ে খুলনার দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জ্বল কুমার দত্ত বলেন, লাশটি উদ্ধার করতে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
এদিকে নিখোঁজ হিলটনের এলাকাবাসী বৃহস্পতিবার রাত ১০ টায় করমজল এলাকায় গিয়ে বিক্ষোভ করে বনরক্ষীদের বিচার দাবি করেন। হিলটনকে বনরক্ষীরা গুলি করে মাটিতে পুঁতে ফেলেছে বলে এলাকাবসীরা জানায়।
নিখোঁজ হিলটনের কী হয়েছে তা জানতে বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে সুন্দরবনের চাঁদপাই এলাকায় যান খুলনা জেলার পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপস কুমার পাল, দাকোনা থানার ওসি উজ্জ্বল কুমার দত্ত ও বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক শেখ মাহবুব হাসান, চিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী আকবর হেসেন। এসময় নিখোঁজ হিলটনের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।