হোম জাতীয় সিনহা হত্যা: গুলির শব্দ শুনে ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন শহীদুল

জাতীয় ডেস্ক :

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় তৃতীয় দফায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করে আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার অপরাপর সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আগামী ২০ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিন ধার্য করা হয়েছে। এর আগে মামলার দ্বিতীয় দফায় চতুর্থ দিনে ষষ্ঠ সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।

বুধবার (০৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে মামলার দ্বিতীয় দফায় চতুর্থ দিনে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম।

মামলায় ষষ্ঠ সাক্ষী হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি দিয়েছেন ঘটনাস্থলের অদূরে বায়তুল নূর জামে মসজিদের ইমাম শহীদুল ইসলাম।

এর আগে গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত মামলার প্রথম দফায় সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষী ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে একই গাড়িতে থাকা সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাত। এছাড়া রোববার থেকে শুরু হওয়া সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দফায় চতুর্থ দিন পর্যন্ত জবানবন্দি দিয়েছেন আরও চারজন সাক্ষী। এতে মামলায় আরও ৭৭ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ বাকি রয়েছে।

বুধবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে মামলার ১৫ আসামিকে প্রিজন ভ্যানে করে কড়া পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়। সকাল ১০টায় মামলার ষষ্ঠ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ শুরু হয়। তা শেষ হয় সকাল ১১টা ১০ মিনিটে। এরপর আসামিদের আইনজীবীরা তাকে জেরা শুরু করেন। আর সেটা শেষ হয় দুপুর ২টায়।

পিপি ফরিদুল বলেন, সকাল ১০টায় আদালতে বিচার কাজ শুরু হয়। এতে মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দফায় চতুর্থ দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি প্রদান করেছেন ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী বায়তুল নূর জামে মসজিদের ইমাম শহীদুল ইসলাম। মামলায় এ পর্যন্ত ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ছয়জনের জবানবন্দি এবং আসামিদের আইনজীবীর জেরা সম্পন্ন হয়েছে। এরপর পরবর্তীতে মামলার অপরাপর সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আগামী ২০ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিন ধার্য করে আদেশ দেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, মামলায় ১৫ আসামির মধ্যে তিনজন আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) সদস্য রয়েছেন। তারা (এপিবিএন সদস্য) জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছেন তা প্রত্যাহার চেয়ে তাদের আইনজীবীরা তিনটি আবেদন করেছেন। আদালত আবেদনগুলো আমলে নিয়ে নথিভুক্ত করেছেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, সিনহা হত্যা ঘটনার সময় ঘটনাস্থলের অদূরবর্তী মসজিদের ইমাম শহীদুল ইসলাম প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনার সময় তিনি মসজিদের নিচে অবস্থান করছিলেন। পরে গুলির শব্দ শুনে মসজিদের ছাদে উঠে ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।

তবে নির্দেশনা থাকায় আদালতের কাছে শহীদুল ইসলাম যে জবানবন্দি দিয়েছেন সেটার বিষয়বস্তু গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে প্রকাশে অনীহা প্রকাশ করেন বাদীর এ আইনজীবী।

মোস্তফা বলেন, সাক্ষীদের জবানবন্দি গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে প্রকাশ না করতে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। সাক্ষী তার জবানবন্দিতে ঘটনা কিভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন, ঘটনাস্থলে সিনহাসহ আসামিদের মধ্যে কার কী ধরনের ভূমিকা দেখেছেন, সেখানে কী কী ধরনের ঘটনা ঘটেছে; তার প্রকৃত চিত্র আদালতের কাছে উপস্থাপন করেছেন। এতে ঘটনার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে, বলেন বাদীর এ আইনজীবী।

তবে ষষ্ঠ সাক্ষীর জবানবন্দি প্রদানকারী শহীদুল ইসলামের বক্তব্যের সাথে ভিন্নমত প্রকাশ করে আদালতে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন বলে দাবি আসামি ওসি প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশগুপ্তের।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জবানবন্দি প্রদানকারী শহীদুল ইসলাম একই সঙ্গে মসজিদটির ইমাম, খতিব ও হেফজখানার শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন। কিন্তু এসব দায়িত্বে তাকে (শহীদুল) নিয়োগের ব্যাপারে এমন কোনো নিদর্শনপত্র তদন্ত কর্মকর্তাকে যেমন দিতে পারেননি, তেমনি আদালতের কাছে উপস্থাপন করতেও ব্যর্থ হয়েছেন।

তিনি (শহীদুল) বলেছেন, তিনি (শহীদুল) সমস্ত ঘটনাটি মসজিদের ছাদের ওপর থেকে দাঁড়িয়েই দেখেছেন। তিনি এটাও স্বীকার করে নিয়েছেন, মসজিদ এবং কথিত ঘটনাস্থলের সামনে কিন্তু অনেকগুলো গাছ। মসজিদের যে দোতলা ছাদ সেখানে থেকে মেরিন ড্রাইভ অনেক উঁচুতে।

‘সেখানে আমাদের কথাটি হলো, কথিত ঘটনাস্থল থেকে যে দেখা-শোনা, যে কথাগুলো বলেছেন; কে, কী করেছে সেটা দেখার কথা বলেছেন। তার কোনোটাই সত্য নয়।’

আসামির এ আইনজীবী বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমাদের কথাটি হলো, অত দূরে থেকে কানে কানে কথা শোনা, কোনো কিছু ঘটনা দেখা; কাউকেও শনাক্ত করা এগুলো কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’

মাদকপাচার, মানবপাচার, চোরাচালান, সন্ত্রাস ও ডাকাতির বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা হিসেবে দৃঢ় ভূমিকার কারণে একটি অশুভ চক্র ওসি প্রদীপের ওপর ক্ষুদ্ধ ছিল এবং ওই চক্রটির ইন্ধনে মামলার সাক্ষীরা মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত জবানবন্দি দিচ্ছেন বলে দাবি করেন রানা দাশগুপ্ত।

গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

এ ঘটনায় গত বছর ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলার তদন্তভার দেন র‌্যাবকে।

ঘটনার ৬ দিন পর ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ ৭ পুলিশ সদস্য আত্মসমর্পণ করেন। ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

পরে র‌্যাব পুলিশের দায়ের মামলার ৩ সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) এর ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে। সর্বশেষ গত ২৪ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব।

গত বছর ১৩ ডিসেম্বর র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ানের তৎকালীন দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। গত ২৭ জুন আদালত ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এতে সাক্ষী করা হয় ৮৩ জনকে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন