নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে চলাচলের পথ নিয়ে বিরোধের জেরে গোলাম হোসেন (৬০) নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের জাবাখালী গ্রামে এ হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনার পর স্থানীয় জনতার সহায়তায় নয় হামলাকারীকে আটক করেছে শ্যামনগর থানা পুলিশ।
নিহত গোলাম হোসেন জাবাখালী গ্রামের মৃত হামিজ উদ্দিন মোড়লের ছেলে। তিনি পেশায় একজন চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী।
আটককৃতরা হলেন, অভিযুক্ত এমান আলী মোড়লের ছেলে আত্মসমর্পণকৃত বনদস্যু সেলিম মোড়ল (৫০), সাইফুল মোড়ল (৩৫), ফারুক মোড়ল (৩২), বদর উদ্দিন মোড়লের ছেলে রেজাউল মোড়ল (৪০), রেজাউলের স্ত্রী মাছুমা বেগম (৩৫), সেলিম মোড়লের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৪০), সাইফুল মোড়লের স্ত্রী মাহফুজা বেগম (৩০), ফারুক মোড়লের স্ত্রী জহুরা খাতুন (৩০) ও এমান আলীর স্ত্রী সফুরা বেগম (৬৫)।
নিহত গোলাম হোসেনের ভাতিজা জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয়রা জানান, যাতায়াতের চলাচলের পথ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গোলাম হোসেনের সঙ্গে প্রতিবেশী রেজাউল মোড়ল, সাইফুল মোড়ল, সেলিম মোড়ল ও ফারুক মোড়লসহ কয়েকজনের বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে একাধিকবার কথা-কাটাকাটি ও স্থানীয়ভাবে সালিশ হলেও তা সমাধান হয়নি। সর্বশেষ এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে গোলাম হোসেন অভিযোগ দিলে গত ১৮ ডিসেম্বর ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম শুনানির দিন নির্ধারণ করেছিলেন। তবে ওইদিন প্রতিপক্ষরা হাজির না হওয়ায় পুনরায় আগামী বৃহস্পতিবার শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়। এর আগে একই বিষয়ে গোলাম হোসেন সাতক্ষীরার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আদালত নোটিশ জারি করায় ক্ষিপ্ত হয়ে আজ সকালে বিরোধপূর্ণ ওই পথের কাছেই উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে উক্ত প্রতিপক্ষরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র (ছুরি), লোহার রড ও লাঠি দিয়ে গোলাম হোসেনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃতত ঘোষণা করেন।
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ শাকির হোসেন জানান, নিহতের বুকে ও পেটে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গভীর আঘাত করা হয়েছে। এ ছাড়া পিঠে, পায়ে ও কোমরের পেছনে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, হত্যাকান্ডের পর স্থানীয় জনতা হামলাকারীদের ধাওয়া দিয়ে একটি ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পুলিশকে খবর দিলে কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজিবের নেতৃত্বের শ্যামনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৯ জনকে আটক করেন এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করেন। এসময় উত্তেজিত জনতা তাদের ঘরবাড়ি ও ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ভাঙচুর করের। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নিহতের ছেলে হাফিজুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তার বাবার হত্যার বিচার দাবী করেন।
শ্যামনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ বিপ্লব হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতিতি চলছে। এছাড়া নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
