নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার দেবহাটার টাউন শ্রীপুর শরৎচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের কিশোরী শিক্ষার্থীরা স্কুলে ক্লাস চলাকালীন সময়ে এক শিক্ষক কর্তৃক নানা ভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে প্রধান শিক্ষক বরাবর অভিযোগ করে হুমকির মধ্যে পড়েছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গত ১১ই অক্টোবর টাউনশ্রীপুর হাই স্কুলের কয়েকজন কিশোরী শিক্ষার্থী স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম আজাদের কাছে এসে শিক্ষক উদয় কৃষ্ণ ঘোষের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তারা প্রধান শিক্ষকের নিকট জানান, শিক্ষক উদয় কৃষ্ণ দীর্ঘ দিন যাবত তাদের বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি করে আসছে। তারা এক পর্যায়ে তাদের অভিভাবকের সাথে বিষয়টি জানালে প্রথমে তারা বিষয়টি আমলে নেননি।
পরে বিষয়টি চরম আকার ধারণ করলে অভিভাবকদের পরামর্শক্রমে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের নিকট অভিযোগ করে। প্রধান শিক্ষক কয়েকজন স্কুল শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধির সামনে বিষয়টি তাদের কাছে শুনে এবং তাদের নাম ও রোল নাম্বার গুলো লিখিত নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থার জন্য আশ্বাস প্রদান করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ই অক্টোবর স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির একটি সভা আয়োজন করে শিক্ষক উদয় কৃষ্ণকে এক সপ্তাহের জন্য সাময়িক ছুটি দেওয়া হয় এবং স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সঞ্জীব কুমার ব্যানার্জিকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত তদন্ত কমিটিকে গত ২৪ শে অক্টোবারের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এই তদন্ত কমিটি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গেলে শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকের সামনে যৌন হয়রানির বিষয়টি জানায় এবং সংক্ষিপ্তভাবে লিখিতভাবে প্রকাশ করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আবারো ম্যানেজিং কমিটি মিটিং এ বসে শিক্ষক উদয় কৃষ্ণকে দোষী সাব্যস্ত করলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবুল ফজল অভিযুক্ত শিক্ষক উদয় কৃষ্ণকে ৬ মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্তের প্রস্তাব দেন।
এদিকে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্কুলের সাথে সম্পৃক্ত কিছু ব্যক্তি ও স্থানীয় প্রভাবশালী এক অভিভাবক সদস্যের নবম শ্রেণীতে পড়–য়া ছেলে সিফাত এর নেতৃত্বে শিক্ষক উদয় কৃষ্ণকে রাখার জন্য অভিযোগকারী ছাত্রীদের উপরে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে বিষয়টি অস্বীকার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে অভিযোগকারী ভুক্তভোগী ছাত্রীরা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে বলে জানা গেছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা ওই ছাত্রকে (সিফাতকে) বুঝায়েছি সে যেন এ ধরনের কোন কাজ আর না করে। অথচ বিগত দুদিন যাবত সে কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ওই সকল অভিযোগকারী ছাত্রীদের হুমকি দিয়ে চলেছে।
ছাত্রীদের যৌন হয়রানির বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে মৌখিকভাবে জানালেও বিষয়টি নিয়ে তিনি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে জানা গেছে।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের নিয়ে বর্তমানে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার আতঙ্কে ভুগছেন। তারা এসময় অভিযুক্ত শিক্ষক উদয় কুমারের যথাযথ শাস্তি প্রদানের জন্য প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।