নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কুশলিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জি.এম নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে জমির খাজনা বাবদ অতিরিক্ত টাকা গ্রহন, কোর্টের রায় অবমাননা করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এক জনের জমি আরেক জনের নামে দখল দেখানো, জাল কাগজ সৃর্ষ্টি, সরকারী রাজস্ব আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। আর এ অনিয়ম দূর্নীতি করে তিনি অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। রাতারাতি হয়েছেন আঙুল ফুঁলে কলাগাছ। তার রয়েছে তিনতলা আলিশান বাড়িসহ নামে-বেনামে একাধিক সম্পত্তি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে এলাকাবাসীরা একাধিক অভিযোগও করেছেন।
নায়েব জিএম নুরুল ইসলাম কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা গ্রামের মৃত মান্দার গাজীর পুত্র।
সরেজমিনে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কালিগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম তার দপ্তরে আসা সাধারণ জনগণকে সরকারী ভূমি সংক্রান্ত সেবা প্রদানের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তিনি সরকারী আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নানা অপকর্ম করে যাচ্ছেন দেদারছে। তাকে থামানোর যেন কারো সাধ্য নাই। কুশলিয়া ভূমি অফিসকে তিনি বানিয়েছেন অপরাধের স্বর্গরাজ্য। যে রাজ্যে একবার কেউ প্রবেশ করলে টাকা না দিয়ে তার হাত থেকে ফিরে আসা সম্ভব নয়। তার রয়েছে একটি শক্তিশালী দালাল চক্র ও গুন্ডা বাহিনী। যাদের নিয়ন্ত্রণ ও দেখভাল করেন তিনি নিজেই। ভুক্তভোগী কয়েকজনের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের মৃত হায়দার আলীর পুত্র ভুক্তভোগী মোঃ আবু জাফর সাপুই জানান, গত ১৪/০৩/২০২৩ তারিখে নায়েব জিএম নুরুল ইসলামের সাথে আমার একটি জমি মিউটেশন করে দেয়ার জন্য দুই লক্ষ টাকার চুক্তি হই। চুক্তি মোতাবেক আমি জমি মিউটেশনের জন্য একটি আবেদনসহ অগ্রিম নগদ ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা প্রদান করি। বাকী টাকা মিউটেশন ও অনলাইন শেষ হলে তাকে দেয়া হবে বলে অমি তাকে জানাই। কিন্তু নায়েব নুরুল বাকি টাকা না পাওয়ায় আমার আবেদন খারিজ করে দেন। কিন্তু আমার কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা তিনি এখনও ফেরত দেননি। নিরুপায় হয়ে সুবিচারের আশায় আমি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিভাগীয় ভুমি কমিশনার, জেলা প্রশাসক, কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহি অফিসারসহ ১৭ টি দপ্তরে আবেদন করেছি।
একই উপজেলার বাজার গ্রাম রহিমপুরের বাসিন্দা গোপী রঞ্জন অধিকারীর পুত্র ভুক্তভোগী শ্যামসুন্দর অধিকারী জানান, কোর্টের কেসের রায় অবমাননা করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নায়েব নুরুল ইসলাম আমার জমি শেখ শাহ জালালের নামে দখল দিয়েছেন। এ কারণে আমি তার বিরুদ্ধে গত ৩১/০৮/২০২৩ তারিখে একাধিক পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ করেছি।
সোনাতলা গ্রামের মৃত এনছার আলীর পুত্র ভুক্তভোগী শোকর আলী জানান, তার কাছ থেকে বিনিময় সম্পত্তির তদন্ত রিপোর্টের জন্য বিশ হাজার টাকা গ্রহন করেছেন।
মাগুরা জেলার সুন্নত আলী সরদারের স্ত্রী ভুক্তভোগী লালু বিবি জানান, তার পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত কুশুলিয়া মৌজার জমির খাজনা রশিদ কাটতে গেলে কুশুলিয়া ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম ১৭৬ টাকার খাজনা রশিদ কাটতে তার কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা নিয়েছেন।
কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর সোনাতলা গ্রামের কামাল হোসেন জানান, আমার ৪২ শতক জমি খাজনা পরিশোধের জন্য ৫ হাজার গ্রহন করেছেন নায়েব নুরুল ইসলাম। অথচ আমাকে যে চেক দিয়েছেন তাতে ৩৭৪০ টাকা লেকা রয়েছে।
উত্তর শ্রীপুর গ্রামের মৃত শামসুর আলী সরদারের পুত্র ভুক্তভোগী মোকসেদ আলী সরদার জানান, তার কাছ থেকে খাজনার চেক কেটে দেওয়ার নাম করে ১০ হাজার টাকা গ্রহন করেন নায়েব নুরুল ইসলাম। টাকার নেয়ার পরও তিনি অন্য নামে চেক কেটে দেন। এ বিষয়ে একটি মামলাও চলমান রয়েছে। একই এলাকার নূর মোহাম্মদ সরদারের পুত্র ভুক্তভোগী হানিফ সরদার জানান, তার কাছ থেকে একটি কাজ করে দেয়ার জন্য ১৮ হাজার টাকা নিয়েও তার কাজ করে দেননি। এমনকি টাকাও ফেরত দেননি।
কুশলিয়া গ্রামের মৃত জানাব আলী ঢালীর পুত্র ভুক্তভোগী আব্দুল হাই জানান, তার কাছ থেকে ৬৩ শতক জমি মিউটেশনের জন্য ৩০ হাজার টাকা গ্রহন করেছেন এই নায়েব নুরুল ইসলাম। এমনিভাবে একাধিক লোকজনের কাছ তিনি খাজনার চেকসহ নানা কাজে মোটা অংকের টাকা ঘুষ গ্রহন করে থাকেন।
এ বিষয়ে জানতে কুশলিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জি.এম নুরুল ইসলামের ব্যবহৃত ০১৭১৫-৬০০২৩৭ নাম্বারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তার ফোনটি রিসিভ করেননি।
কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহি অফিসার রহিমা সুলতানা বুশরা জানান, তিনি একই বিষয় নিয়ে আমাদের উদ্ধর্তন কর্মকর্তার (জেলা প্রশাসকের) কাছে আবেদন করেছেন। বিষয়টি সেখান থেকে তদন্ত করার জন্য উপজেলা ভুমি সহকারী কর্মকর্তাকে (এসিল্যান্ডকে) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে, এ কারনে তিনি আর এটি নিয়ে কোন তদন্ত করছেননা। তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে এসিল্যান্ড বিষয়টি তদন্ত করছেন বলে আমি শুনেছি।