হোম জাতীয় সাইদ হত্যায় ৯ বখাটে কারাগারে, রিমান্ডে ১

জাতীয় ডেস্ক:

ফেনীর ছাগলনাইয়ায় ঈদে বেড়ানোর সময় বোনকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বখাটে একদল যুবক ভাইকে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ১০ জনকে আদালতে সোপর্দ করার পর আদালত পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান আসামির ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

শনিবার (১ জুলাই) বিকেলে তাদের ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৩ এ তোলা হলে ছাগলনাইয়া থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন এদের মধ্যে প্রধান আসামি রফিকুল ইসলামের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালতের বিচারক অপরাজিতা দাস রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে রফিকুলের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে আদালতের আদেশে বাকি ৯ আসামিকে ফেনীর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের চম্পকনগর গ্রামের বোরহান উদ্দিনের ছেলে গোফরান উদ্দিন (৩০), মৃত নুরুল আমিনের ছেলে শেফাউল করিম রিহান(২২), জেরু মিয়ার ছেলে বেলাল হোসেন শুভ(২২), হাজী আবু তাহেরের ছেলে ইকবাল হোসেন সাব্বির(২৫), জসিম উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম রাকিব(২১), নাসির উদ্দিনের ছেলে মেহেরাব হোসেন সায়েম(১৮), মৃত মজিবুল হকের ছেলে নাসির উদ্দিন(৪২), রবিউল হকের ছেলে রুবায়েত হোসেন রাফি(১৯), মীর হোসেনের মেয়ের জামাই রফিকুল ইসলাম(২২), নোয়াখালী জেলার চরজব্বর থানার সমিতি বাজার এলাকার ইব্রাহীম হোসেনের ছেলে মো. ইমাম হোসেন(২২)।

শনিবার ভোরে নিহত রবিউল হক সাঈদের মা বিবি মরিয়ম বাদী হয়ে ছাগলনাইয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ঘটনার সময় আকটকৃত ১০ বখাটে যুবকসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৬ জনকে আসামি করা হয়।

পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্র জানায়, শুক্রবার (৩০ জুন) বিকেলে ছাগলনাইয়ার শুভপুর ইউনিয়নের মধ্যম জয়পুর গ্রামের মানিকের ছেলে সাইদ ঈদ উপলক্ষে ছোট বোন সাথীসহ চাচাতো বোন রিয়া, স্বর্ণা ও মিমকে নিয়ে পাশে গ্রামে শমশের গাজীর কেল্লায় বেড়াতে যান। এ সময় একদল বখাটে যুবক সেখানে ছোট বোন সাথীকে উত্ত্যক্ত করলে প্রতিবাদ করে ভাই সাঈদ। একপর্যায় বখাটেদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে সাঈদ।

পরে বিষয়টি সমাধানের জন্য সন্ধ্যায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ফজলুর রহমান সজীব শুভপুর বাজারে তার ব্যক্তিগত অফিসে দুই পক্ষকে ডেকে নেয়। মানিক সেখানে গেলেই পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা বখাটেরা মানিককে ছুরিকাঘাত করে।

পরে স্থানীয়রা আহত সাঈদকে উদ্ধার করে ছাগলনাইয়া উপজেলা কমপ্লেক্সের নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে ঘটনার পরপরই ইউপি সদস্য সজীব স্থানীয়দের সহায়তায় ৯ বখাটে যুবককে শুভপুর বাজারের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মজনুর ব্যক্তিগত অফিসে ঢুকিয়ে বাইরে তালা মেরে পুলিশকে খবর দেয়। সাঈদকে হত্যার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী আটক ৯ জনকে চেয়ারম্যানের অফিস থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এসময় বিক্ষুব্ধরা ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের ওপর বিভিন্ন ড্রিংকসের বোতল ও ইটপাটকে ছুড়তে থাকে। একপর্যায় পুলিশ ১২ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে জনরোষ থেকে উদ্ধার করে আটকৃত ৯ বখাটে যুবককে থানায় নিয়ে আসে। বিক্ষুব্ধদের হামলায় ২ পুলিশ সদস্য আহত হয়। অন্যদিকে পুলিশ একই রাতে ছাগলনাইয়া উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকা থেকে ইমাম হোসনকে আটক করে। ফলে রাতেই আটকের সংখ্যা দাঁড়ায় দশে।

নিহত সাঈদের বাবা একজন রিক্সা চালক। গত ৫/৬ থেকে বার্ধক্যজনিত কারণে রিকশা চালান না। মা বিবি মরিয়মের হাঁসের ব্যবসায় সংসার চচলতো। নিহত সাইদ স্কেবেটর চালনা শিখছিল। সে তিন বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ।

ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুদ্বীপ রায় বলেন, ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় মামলাটি গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।

শনিবার ফেনী ২’শ ৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে নিজ গ্রামে যানাজার পর পরিবারিক করবস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন