হোম রাজনীতি সরে দাঁড়াতে পারেন তারেক-খালেদা, বিএনপিতে নতুন নেতৃত্বের জল্পনা

সরে দাঁড়াতে পারেন তারেক-খালেদা, বিএনপিতে নতুন নেতৃত্বের জল্পনা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 84 ভিউজ

রাজনীতি ডেস্ক:

নেতৃত্ব নিয়ে আস্থার সংকটে ভুগছে প্রায় দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই এখন দলে সর্বেসর্বা। কিন্তু গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে তার নেতৃত্ব বিএনপিকে দুর্বল থেকে দুর্বলতার করেছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক চাপ এবং নেতাকর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত বিএনপির মূল নেতৃত্ব থেকে সরে যেতে পারেন জিয়া পরিবারের সদস্যরা। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে, তারেক জিয়া বিএনপির নির্বাহী দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন।

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, এখনও যারা সক্রিয়ভাবে মাঠে থেকে বিএনপির রাজনীতি করছেন তাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব বাছাই করার জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বিষয়টি নিয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে তার দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে বলেও একাধিক সূত্র দাবি করেছে।

তবে তারা বলছেন, বিএনপির নির্বাহী দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেও দলের সঙ্গে জিয়া পরিবারের সম্পর্ক থাকবে। আর এই সম্পর্কটা এতটাই মজবুত থাকবে যে, তাদের কথাই হবে দলের শেষ কথা।

২০১৮ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর বেগম জিয়া কার্যত দলের নেতৃত্বে নেই। তখন থেকেই দল পরিচালনা করছেন লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া। জেল থেকে বা ফিরোজায় থেকে বেগম জিয়া বিএনপি নেতাদের মাঝেমধ্যে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যদিকে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন উপদেশ দেন তারেক রহমান। এর ফলে দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠে, দূর থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের বাস্তবতা না বুঝে আন্দোলন পরিচালনা করা বা নেতৃত্ব দেয়া কতটুকু যৌক্তিক?

এই অবস্থায় বিএনপির গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন এনে নেতৃত্বের পরিবর্তন হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন দলের কোনো কোনো নেতা। সেক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়াকে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এবং তারেক রহমানকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে।

বিএনপির নেতৃত্ব থেকে জিয়া পরিবার কেন সরে যেতে পারে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যেকোনো দেশের রাজনীতিকে এখন আর বৈশ্বিক রাজনীতির হিসেব-নিকেশ থেকে আলাদা করে ভাবলে চলবে না। বৈশ্বিক শক্তিগুলো তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী নয়। কূটনীতিকরাও তার সঙ্গে কথা বলতে চান না।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে যে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এত দৌড়ঝাঁপ করলেন সেই দেশেও ঢুকতে পারেন না তারেক রহমান। তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে না দেয়ার জন্য অনেক আগেই ওয়াশিংটনকে সুপারিশ করেছিল ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি করায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে উল্লেখ করে ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক গোপন বার্তায় এই সুপারিশ করা হয়েছিল।

বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়র্টি পাঠানো রিপোর্ট ফাঁস করে দিয়েছিলো উইকিলিকস। এতে দেখা যায়, তারেক রহমানকে আমেরিকার ইমিগ্রেশেন ও ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ২১২ (এফ)-এর আওতায় এবং প্রেসিডেন্সিয়াল প্রোক্লেমেশান ৭৭৫০-এর আওতায় আমেরিকায় প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়, দূতাবাস বিশ্বাস করে, তারেক রহমান খুবই খারাপ ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত একজন রাজনীতিবিদ। তাকে আমেরিকায় ঢুকতে দিলে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আমেরিকার ইমিগ্রেশান ও ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট প্রণীত হয়েছিল ১৮৮২ সালে। তাদের এই ইমিগ্রেশন আইনে ২১২ (এফ) যোগ হয় ১৯৫২ সালে। এখানে বলা আছে, যদি কোনও বিদেশি নাগরিক আমেরিকার জন্যে ক্ষতির কারণ হন, তাহলে প্রেসিডেন্ট আমেরিকায় তার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবেন। অন্যদিকে ২০০৪ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের জারি করা প্রেসিডেন্সিয়াল প্রোক্লেমেশন ৭৭৫০ এর ভূমিকা হিসেবে বলা হয়, বর্তমানের মুক্ত বাণিজ্যের পৃথিবীতে বিশ্বশান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে আমেরিকার পাবলিক ইনস্টিটিউশনগুলোকে শক্তিশালী করতে দুর্নীতিমুক্ত রাখার স্বার্থে এই আইন প্রণীত হচ্ছে।

ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত জে এফ মরিয়র্টি তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন, এই প্রোক্লেমেশন অনুযায়ী তারেক রহমানকে আমেরিকায় প্রবেশ করতে দেয়া যায় না। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, তারেক রহমান আমেরিকার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য হুমকিস্বরূপ। তাকে আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং কুখ্যাত ব্যক্তি হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।

২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। জানা গেছে তার ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা এখনও বলবত রয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পারসন নন-গ্রাটা হিসেবেই চিহ্নিত।

বাংলাদেশের প্রতিবেশী এবং এশীয় দেশগুলোও সন্ত্রাস এবং জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে তারেক রহমানকে ভয়ংকর ব্যক্তি হিসেবেই বিবেচনা করে থাকে। এই ইস্যুগুলো বিএনপির তৃণমূলের অনেকেই না জানলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বিষয়গুলো স্পষ্ট।

যদিও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই মনে করেন, জিয়া পরিবারের বাইরে বিএনপির অস্তিত্ব নেই। ফলে দলের নেতৃত্ব থেকে তাদের কোনোভাবেই বাদ দেয়ার সুযোগ নেই।

এমন দাবি করলেও একজন নেতা এই বিষয়টি স্বীকার করেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে এখন রাজনীতি থেকে দূরে। তারেক জিয়াও দেশে নেই। এই অবস্থায় মাঠের একজন সক্রিয় নেতা দরকার, যিনি দলকে নেতৃত্ব দেবেন। তিনিই দলের নেতাদের সঙ্গে মিলেমিশে তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন।

প্রতিবেশী দেশ ভারতে কংগ্রেসে নেহরু পরিবার, বিশেষ করে রাহুল এবং সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন সমালোচনার পর পরিবারের বাইরে থেকে দলের সভাপতি নির্বাচন করা হয়। দলের কাউন্সিলরদের ভোটে নেতৃত্বে আসেন মল্লিকার্জুন খড়গে। তবে পেছন থেকে নেহরু পরিবারের সদস্যরাই কলকাঠি নাড়েন। এরকম একটি পরিবর্তন নিয়ে কথাবার্তা চলছে বিএনপির ভেতরে। তবে দলের নেতৃত্ব ছাড়বেন কিনা তা নির্ভর করছে তারেক রহমানের ইচ্ছার ওপরই।

এর আগে বেগম জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর তারেক রহমানের জায়গায় তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকেও নেতৃত্বে তুলে আনার বিষয়ে বিএনপির মধ্যে কথাবার্তা হয়েছিলো। বিষয়টি একরকম চূড়ান্ত করে ফেলেছিল দলটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের প্রায় সব পর্যায়ের নেতাকর্মী জোবাইদা রহমানকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলো কিন্তু তারেক রহমানই স্ত্রীকে নেতৃত্বে আসতে দেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, নেতৃত্বে পরিবর্তনের কথা বেশ কিছুদিন থেকেই চলছে। কিন্তু তিনি (তারেক রহমান) তো নেতৃত্ব ছাড়ছেন না।

যখন কোনো আন্তর্জাতিক মহল থেকে কোনো ইস্যুতে বিএনপি নেতাদের প্রশ্ন করা হচ্ছে তখন তারা সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর দিতে পারছেন না। এজন্য তাদের তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে লন্ডনের দিকে। তাই নেতৃত্বে পরিবর্তনের প্রশ্নটি উঠছে বিএনপির ভেতরে। বিএনপির এক নেতা দাবি করেন, এর ফলে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে যে সমালোচনা রয়েছে তা বন্ধ হবে, একই সঙ্গে দলে তারেক রহমান বা জিয়া পরিবারের কর্তৃত্বও বহাল থাকবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন