অনলাইন ডেস্ক:
জামালপুরের সরিষাবাড়িতে এক কোচিং সেন্টারের টিউবওয়েলের পানি পান করে কমপক্ষে ২১ মেয়ে শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বগারপাড় এলাকার চাইল্ড কেয়ার একাডেমিতে রাত সাড়ে সাতটায় এ ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনার পর রোববার রাতেই ১০ জনকে এবং সোমবার সকালে চার জনকে সরিষাবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সরিষাবাড়ি হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পাঁচজনকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে, দুজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এবং একজনকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে টিউবওয়েলের পানিতে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়েছে কিনা তদন্তের মাধ্যমে খোঁজ নেয়ার দাবি জানান স্থানীয় এলাকাবাসী ও সচেতন মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগারপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাইল্ড কেয়ার একাডেমি কোচিং সেন্টারে লেখাপড়া করে আসছে। রোববার রাতে উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বগারপাড় এলাকার চাইল্ড কেয়ার একাডেমিতে কোচিং চলাকালীন সময়ে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় কমপক্ষে ২১ শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টারের টিউবওয়েলের পানি পান করে। তারপর থেকেই সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ কোচিং সেন্টারে ছেলে-মেয়ে উভয়ই লেখাপড়া করলেও শুধু মেয়ে শিক্ষার্থীরাই অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। এই শিক্ষার্থীদের উপসর্গ বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি শরীর দুর্বল হয়ে পড়া।
অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজনের নাম পরিচয় জানা গেছে। তারা হলো-বগারপাড় এলাকার শফিকুল ইসলামের মেয়ে চৈতি, ফেরদৌসের মেয়ে রাখি, লিমন তরফদারের মেয়ে তিথি, আল আমিনের মেয়ে আশা, ফজলুল হকের মেয়ে অন্তরা , আব্দুল খালেকের মেয়ে নাদিয়া, লাভলু মিয়ার মেয়ে লাবণ্য, আলমাসের মেয়ে তর্জনী, টুকন মিয়ার মেয়ে তমা, তোজাম্মেল হক এর মেয়ে মেঘলা। পরে তাদের সরিষাবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এদিকে অবস্থার অবনতি দেখে লাভলু মিয়ার মেয়ে লাবণ্য, আল আমিনের মেয়ে আশাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও লিমন তরফদারের মেয়ে তিথিকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।
এদিকে সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর ) বগারপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান চলাকালীন সময়ে আজিজুলের মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আঁখি, নুরুল ইসলামের মেয়ে নিরা, আমিনুলের মেয়ে আরফিন, ইমরানের মেয়ে নুসরাত অসুস্থ পড়লে তাদেরকেও সরিষাবাড়ি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে শিক্ষার্থীদের পাশে কোনো শিক্ষককে পাওয়া যায়নি।
শিক্ষার্থীদের এমন অবস্থা দেখে ওই কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা স্কুলে তালা ঝুলিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। তবে পরিচালক কামরুজ্জামান লিটন নিজেও অসুস্থ হয়ে সোমবার দুপুর থেকে সরিষাবাড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিদ্যালয়ে চার শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ার পর থেকেই বিদ্যালয় তালাবন্ধ রয়েছে।
৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আঁখি জানান, পানি আর ঝালমুড়ি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। পায়ে শক্তি পাইতেছি না, মাথা ব্যথা করতেছে। শিক্ষার্থী আরফিন জাহান জানায়, কোচিং সেন্টারে এসে পানি খাওয়ার আধা ঘণ্টা পর বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এরপর শরীর জিমিয়ে দুর্বল হয়ে যায়।
আরেক শিক্ষার্থীর মামা জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ভাগ্নি বিদ্যালয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য সরিষাবাড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসি।
সরিষাবাড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, কোচিং সেন্টারে পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে ১৪ জন শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা খারাপ দেখে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়েছে।
চাইল্ড কেয়ার একাডেমি কোচিং সেন্টারের পরিচালক কামরুজ্জামান লিটনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিজেও অসুস্থ। শিক্ষার্থীরা স্কুলে টিউবওয়েলের পানি খেয়ে কেন অসুস্থ হয়ে পড়ছে আমি কিছুই বুঝে ওঠতে পারছি না।
এদিকে সরিষাবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বদরুল ইসলাম জানান, রোববার রাত ৮টার পর থেকেই হাসপাতালে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। রাতেই আমরা হাসপাতালে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেই এবং তারা স্বাভাবিক হয়ে কয়েকজন বাড়ি চলে যায়। তাদের তিনজন ছাত্রী আবারও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এরা কোন ভয় থেকেই এমন করছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।