বাণিজ্য ডেস্ক:
বাংলাদেশের পর্যটন খাতে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলেছে। কক্সবাজারে বিশ্বমানের পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ২ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনসহ ৫ দেশ। এছাড়া সুন্দরবনসহ অন্যান্য স্পটে বিনিয়োগে আগ্রহী বিশ্বব্যাংক, জাপান ও সৌদি আরব। এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী জানালেন, এ খাতের বিকাশে মাস্টার প্ল্যান হাতে নিয়েছে সরকার।
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ; যেন প্রকৃতির রূপসীকন্যা। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি। এখানে আছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, প্রবাল দ্বীপ, শত নদী, শ্যামল পাহাড়, হৃদ, জলপ্রপাত, হাওড়, চা বাগান, উর্বর সমতল ভূমি, বর্ণাঢ্য নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী, হাজার বছরের ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। নির্দিষ্ট একটি ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে রূপবৈচিত্র্যমাখা অমিত সম্ভাবনার এ বাংলাদেশ প্রতিটি মুহূর্তে মোহিত হওয়ার মতো।
দেশজুড়ে ১ হাজার ৫২৯টি পর্যটন স্পটের অস্তিত্ব থাকলেও এ শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান প্রায় তলানিতে। ১৮৮টি দেশের মধ্যে এটি ১৪১তম; এশিয়ায় ৪৬টি দেশের মধ্যে ৪২তম, আর দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবেশীদের তুলনায় বহু পিছিয়ে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, দেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ৩ দশমিক ০২ শতাংশ; আকার ৭৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ১১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ। এছাড়া ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটক এসেছেন ২ লাখ ৯১ হাজার জন।
তবে এ অবস্থার উত্তরণে পর্যটন খাতে মাস্টার প্ল্যান হাতে নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে কক্সবাজারে বিশ্বমানের পর্যটন নিশ্চিত করতে ২ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যৌথভাবে এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে যুক্তরাজ্য, কানাডা, চীন ও ভারত।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, দেশগুলো যে বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে দুটি ৫শ’ কক্ষবিশিষ্ট ফাইভ স্টার হোটেল বানানো হবে, মাউন্ট এলিজাবেথের আদলে হাসপাতাল করা হবে। পাশাপাশি ইনডোর আইসকি স্টেডিয়াম করা হবে। সেই সঙ্গে এ প্রকল্পে থাকবে পোলো গ্রাউন্ট, ক্রুজ শিপ ও কার রেসিং ইভেন্ট।
মন্ত্রী জানান, এছাড়া সুন্দরবনসহ অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলোতে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে জাপান, বিশ্বব্যাংক ও সৌদি আরব। একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বে সৌদির উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল এসেছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া জাপানের বিনিয়োগকারীরাও আসবেন।
এদিকে, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে পর্যটন খাতে জিডিপি ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। পাশাপাশি এর মাধ্যমে নতুন কয়েক লাখ কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।
অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, ‘এ খাতে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। আমরা যদি মহাপরিকল্পনা অনুসারে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে আমাদের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ১০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া কোনো সমস্যাই নয়।’
মহাপরিকল্পনার আওতায় ১ হাজার ৪০০টির বেশি পর্যটন স্পটকে ৫৩টি জোনে ভাগ করে যাতায়াত ব্যবস্থা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রচারণায় বিপুল বিনিয়োগের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে বিদেশি পর্যটকদের জন্য ই-ভিসা চালু করা হয়েছে।