বাণিজ্য ডেস্ক:
লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে শ্রমিকদের দুগ্রুপের বিরোধের কারণে পাঁচদিন ধরে বন্ধ রয়েছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। তবে পাসপোর্টে যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
শ্রমিকদের দুগ্রুপের প্রতিনিধিদের নিয়ে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বৈঠক করলেও কোনো সমাধান হয়নি।
জানা যায়, শ্রমিকদের একটি পক্ষের দাবি মজুরীর টাকা সরদারদের মাধ্যমে দিলে নিবে না। সরাসরি লেবার হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার বা প্রতিনিধির মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে, না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য লোড-আনলোড কাজ বন্ধ থাকবে।
এর আগে সঠিক মজুরী না দেওয়া, পারিশ্রমিকের টাকা কেটে নেওয়া, টাকার হিসাব না দেওয়া, নির্বাচনের মাধ্যমে শ্রমিক সংগঠনের কমিটি গঠন না করে স্বজনপ্রীতিসহ নানা বৈষম্যের অভিযোগে শ্রমিক সরদারদের বিচার ও পদত্যাগের দাবিতে একাধিকবার লোড-আনলোড বন্ধ রেখে মহাসড়ক অবরোধ ও ধর্মঘট করে শ্রমিকরা।
এর ধারাবাহিকতায় গত ১২ সেপ্টেম্বর শ্রমিকদের মজুরীর টাকা না দেওয়া ও সাধারণ শ্রমিকদেরকে কাজের সিরিয়াল দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিক ও সরদার গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলামকে প্রায় ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে শ্রমিকেরা।
পরে এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ ৫ সদস্যের একটি টিম গঠন করেন। এ টিমের আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান। অন্যান্য সদস্যরা হলেন- লালমনিরহাট সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) ফরহাদ ইমরুল কায়েস, পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম, পাটগ্রাম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ, বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) গিয়াস উদ্দিন।
কমিটি রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সাধারণ শ্রমিকদের ১০ জনের প্রতিনিধি দল ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুজ্জামান সায়েদকে নিয়ে বৈঠক করেন। শ্রমিকদের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ বুড়িমারী স্থলবন্দর শাখার সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন।
বৈঠকে স্থলবন্দর শ্রমিকদের চলমান সমস্যা নিরসনে সরদারপক্ষ, ঠিকাদার ও শ্রমিকপক্ষের মাধ্যমে লোড-আনলোড, মজুরী পরিশোধের প্রস্তাব করা হলে শ্রমিকেরা এ প্রস্তাবে রাজি হয়নি। ফলে কোনো প্রকার সুরাহা ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলাম বলেন, গঠিত কমিটি ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিদেরকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু রাখতে। এ জন্য পণ্যবাহী গাড়ি লোড-আনলোড শ্রমিকদেরকে রাজি করানো হচ্ছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুর হাসান কবির বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি রফতানি কার্যক্রমে স্থবিরতা থাকলেও যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে।
লালমনিরহাট বুড়িমারী স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, স্থলবন্দরে শ্রমিকদের দু’গ্রুপের বিরোধের কারণে বন্ধ রয়েছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, আশা করা যাচ্ছে বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে।