হোম খুলনাযশোর শৈলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চার শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ : তদন্তের দাবী

শৈলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চার শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ : তদন্তের দাবী

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 56 ভিউজ
নিজস্ব সংবাদদাতা:
ভাগ্যবান যুবক ইস্রাফিল হোসেন! মনিরামপুর উপজেলার শৈলী গ্রামের জালাল উদ্দীনের ছেলে তিনি। একই দিনে দুটি পদে শিক্ষক বনে যান ইস্রাফিল। সেই সাথে সহকারী প্রধান শিক্ষক মিলন কুমার সিংহ ভাগ্যেও কম না, দীর্ঘ ২৭ বছর পর এবার তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে এমপিওভূক্ত হয়েছেন। কিশোর কুমার দেবনাথ এবং শেফালী রানীও রাতারাতি শিক্ষক বনে গেছেন। এসবই শৈলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামের যোগ্যতা বটে! একই বিদ্যালয়ে চারটি পদে কথিত নিয়োগে অভিযোগ উঠলেও কোন কিছুতেই তা আটকাতে পারেননি তাদের। উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোও যেন বেমালুম সব অপরাধ চাপা দিয়ে সরকারী অংশের বেতন পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শেফালী রানী ছাড়াই অন্যারা সবাই এখন এমপিওভূক্তির আওতায়। অভিযোগ উঠেছে, মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে অবৈধ নিয়োগকে বৈধ বলে স্বীকৃতি পেয়ে গেছেন তারা। জানা যায়, ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর ইস্রাফিল হোসেনকে বিজ্ঞান ও গনিত শিক্ষক হিসেবে শৈলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ বোর্ড দেখানো হয়। প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম ইস্রাফিলকে ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর শৈলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান এবং একই দিনে গনিত শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপত্র দেন। যদিও তিনি বর্তমানে গনিত শিক্ষক হিসেবে এমপিওভূক্ত হয়েছেন। প্রধান শিক্ষক এক ব্যক্তিকে একই দিনে পৃথক দুটি পদে দুটি নিয়োগপত্র দেয়া সহ অন্যান্য নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে। একই দিনে ওই বিদ্যালয়ে ব্যবসায়ী শিক্ষায় নিয়োগ দেয়া হয় কিশোর কুমার দেবনাথকে। অষ্টম শ্রেণীর শাখা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় শেফালী রানীকে। অবাক করার বিষয় হচ্ছে, ২০০২ সালের ৫ সেম্পেম্বর সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয় মিলন কুমার সিংহকে। অভিযোগ রয়েছে, এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোন বিধিমালা অনুসরণ করা হয়নি। শিক্ষক মিলন কুমার সিংহ এর আগে দীর্ঘ ২৩ বছর নন-এমপিও সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন উপজেলার পাড়দিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসায়। হঠাৎ করে তিনি শৈলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে এমপিওভূক্ত হয়েছেন। ২০২২-২৩ সালে ব্যানবেইস রেকর্ডে কেবলমাত্র শৈলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়েল শিক্ষক হিসেবে নাম রয়েছে মিলন কুমার সিংহের। অভিযোগ উঠেছে, ২০২৩ সালে বিদ্যালয়টির মাধ্যমিক স্তর এমপিওভূক্ত হওয়ার পত্র পাবার পর রাতারাতি কথিত নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে এসব শিক্ষককে নিয়োগ দেখানো হয়। যদিও কথিত নিয়োগ প্রাপ্ত শেফালী রানী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে এমপিওভূক্তির আবেদন করলে তা আটকা পড়ে। সূত্র মতে, অফিসে দাখিলকৃত শেফালী রানীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করতে গিয়ে অসংগতি ও সন্দেহ সৃষ্টি হয়। যে কারণে বর্তমান মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এএসএম জিল্লুর রশিদ শেফালী রানীর কাগজপত্র আটকিয়ে দিয়েছেন। এমনকি শিক্ষা বোর্ডের চিঠিপত্রও যাচাইয়ের জন্য যশোর শিক্ষা বোর্ডে পাঠান হয়ে বলে জানাগেছে। এ যেন কেচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতো। ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১- মোতাবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্তির পরিপত্র জারি করা হয়। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (ব্যানবেইস) যাদের নাম ২০১৩ সাল থেকে ডকেটভূক্ত রয়েছে, তারাই কেবল এমপিওভূক্ত হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। কিন্তু শৈলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, এদের মধ্যে প্রায় সকলেই ২০২২ এবং ২০২৩ সালে ব্যানবেইস-এর রেকর্ডভূক্ত দেয়া যায়। প্রশ্ন উঠেছে, এসব নীতিমালা উপেক্ষা করে কিভাবে তারা এমপিওভুক্তি হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, এমপিওভূক্ত করতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো মোটা অংকে তুষ্টি হয়ে অবৈধ কাজকে বৈধ করতে সহযোগীতা করেছে। নিয়োগ পাওয়া এসব শিক্ষকদের প্রকৃতভাবে নিয়োগ বোর্ড করা হয়নি। একটি অসাধু চক্র নিয়োগপত্রের যাবতীয় কাগজপত্র তৈরি করে এমপিওভূক্তির করতে সহায়তা করেছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে এমপিওভূক্তি পর্যন্ত কাগজপত্র যথাযথ তদন্ত করলে সকল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে দাবী করছে সচেতন মহল। জানা যায়, ২০২২ সালের ৫ মার্চ শৈলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মিলন কুমার সিংহকে। অথচ, সেই মিলন কুমার সিংহ উপজেলার পাড়দিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসায় দীর্ঘকাল নন-এমপিও সহকারী শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৯৮ সাল থেকে। যা ২০১৩ – ২০২১ সাল পর্যন্ত পাড়দিয়া মহিলা দাখিল মাদসারা সহকারী শিক্ষক হিসেবে ব্যানবেইস রেকর্ডে নাম অন্তভূক্ত রয়েছে। কেবল মাত্র ২০২২-২০২৩ সালে শৈলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান হিসেবে তার নাম পাওয়া যায় ব্যানবেইস রেকর্ড-এ।  প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, অফিসিয়্যাল এসব রেকর্ড থাকতেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মিলন কুমার সিংহকে কিভাবে এমপিওভূক্তির সুপারিশ করেছেন। প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোরের কর্মকর্তাদের সিল-স্বাক্ষর জাল করে বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শাখা এবং ষষ্ট থেকে অষ্টম শ্রেণীর শাখা খোলার অনুমতি পত্রও তৈরি করে নিয়েছেন। ২০১১ সালে ৪ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড,যশোরের স্বারক নং-বিঅ-৬/৬১০৪/৩২১৬ ‘বিজ্ঞান শাখা’ খোলার মঞ্জুরিপত্র, একই তারিখে বিঅ-৬/৬১০৪/৩১৯৪ স্বারক নং-এ অষ্টম শ্রেণীর ‘খ’ শাখা খোলার মঞ্জুরিপত্র বানিয়েছে বলে এমন অভিযোগ প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে রয়েছে।
সূত্র মতে, প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ষষ্ট-সপ্তম শ্রেণীর ‘খ’ শাখা বানিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে রাজ আলী নামে একজনকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। যিনি ২০২৫ সালের ৬ সেম্পেম্বর স্ট্রোক জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। সূত্র জানিয়েছে, ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর থেকে এনটিআরসি নিয়োগ হাতে নেওয়ায় বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা ব্যাগডেটে এদেরকে নিয়োগ দেখিয়ে কাগজপত্র তৈরি করেছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন