হোম জাতীয় শেষ সময় ঘনিয়ে এলেও সাড়া নেই হজ নিবন্ধনে

শেষ সময় ঘনিয়ে এলেও সাড়া নেই হজ নিবন্ধনে

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 8 ভিউজ

সংকল্প ডেস্ক:
আগামী হজের জন্য প্রাথমিক নিবন্ধনের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। এ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে হজের প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। প্যাকেজ ঘোষণার একমাস হলেও নিবন্ধনে সাড়া মেলেনি। আর পাঁচদিন বাকি থাকলেও কোটার মাত্র ১৮ শতাংশ পূরণ হয়েছে।

চলতি বছর হজে যেতে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় হজের প্রাথমিক নিবন্ধন। শুরুর পর দু-একজন করে নিবন্ধন করছিলেন। তখন এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, হজের খরচ কত হচ্ছে সেটা না জানলে মানুষ নিবন্ধন করবে না, প্যাকেজ ঘোষণা হলে নিবন্ধনের হার বাড়বে। আগামী বছর হজের খরচ একলাখ টাকা কমছে। কিন্তু প্যাকেজ ঘোষণার একমাস হলেও নিবন্ধনে সাড়া মেলেনি।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছরের মতো আগামী বছরও (২০২৫ সাল) বাংলাদেশ থেকে একলাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে ১০ হাজার ১৯৮ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি একলাখ ১৭ হাজার হজযাত্রী যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (২৫ নভেম্বর) পর্যন্ত ২২ হাজার ৫শ জনের মতো হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন, যা কোটার প্রায় ১৮ শতাংশ। এখনো ৮২ শতাংশ হজযাত্রী নিবন্ধন করেননি।

চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে একলাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের বিপরীতে হজে গিয়েছিলেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন। ৪১ হাজার ৯৪১ জন হজে যাননি অর্থাৎ কোটার প্রায় ৩৩ শতাংশ খালি ছিল। আগামী বছর কোটার প্রায় অর্ধেক খালি থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ৩০ অক্টোবর সরকারি ও বেসরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। পরে হজ এজেন্সির দুই গ্রুপ ৬ ও ৭ নভেম্বর প্যাকেজ ঘোষণা করে। ঘোষিত প্যাকেজ অনুযায়ী খরচ গত বছরের চেয়ে কমেছে।

হজ এজেন্সির মালিক ও সংশ্লিষ্টরা জানান, এবার হজের প্রাথমিক নিবন্ধনের টাকা বেশি হয়ে গেছে। হজের এখনো ছয় মাস বাকি, এত আগে অনেকেরই টাকা গোছানো নেই। কিন্তু গত বছর থেকে হজের প্রস্তুতির কার্যক্রম আগেই করতে হচ্ছে। তাই অনেকেই না বোঝার কারণে ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে পারছেন না।

এছাড়া রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট বড় একটা শ্রেণি হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন বা করতে বাধ্য হয়েছেন বলেও মনে করছেন তারা। কারও কারও হজে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্যে কুলাচ্ছে না, তারা প্রাক-নিবন্ধন করেই থেমে গেছেন। কারও আবার টাকা জমা থাকলেও ব্যাংকগুলো রুগণ অবস্থায় চলে যাওয়ায় টাকা তুলতে পারছেন না।

এরই মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য কয়েক দফা তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের পর প্রাথমিক নিবন্ধনের কোনো সুযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক নিবন্ধনের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। তবে শেষ সময়ে নিবন্ধনের হার বেড়ে যায়। তাই পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এজেন্সিগুলোর সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) কমিটি বাতিল করে সেখানে প্রশাসক বসানো হয়েছে। এজেন্সি মালিকরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেছেন। তারাও আলাদা করে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

নিবন্ধনে সাড়া না মেলার কারণ-

হাবের বাতিল হওয়া কমিটির মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার। ‘সাধারণ হজ এজেন্সির মালিকবৃন্দ’ ব্যানারে তারা এখন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য যে টাকাটা এবার ধরা হয়েছে, সেটা বেশি। প্রাথমিকভাবে এমন প্রস্তুতি মানুষের থাকে না। কারও সন্তান হয়তো বিদেশ থেকে টাকা পাঠাবে। কেউ সম্পত্তি বিক্রি করে, গরু-ছাগল বিক্রি করে হজের খরচ জোগাড় করবেন। অন্য বছর তো শুরুতে বিমান ভাড়ার টাকাটা দিয়েই প্রাথমিক নিবন্ধন করা যেত। এবার এটা তিন লাখ টাকা ধার্য করার জন্য একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়া সরকার পরিবর্তন হওয়ার কারণে একটি শ্রেণি হাতে টাকা থাকলেও চাপে আছে। তাদের এবার হজে যাওয়ার নিয়ত থাকলেও কিন্তু তারা পারছেন না বলে আমাদের ধারণা। এ শ্রেণির মধ্যে এবার হজে যাওয়ার প্রবণতা কম।’

অর্থনৈতিক কারণে অনেকের বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমা ছিল, সেটাও তো অনেকে তুলতে পারছেন না। সবকিছু মিলিয়ে এবার হজে যাওয়ার আগ্রহ কম বলে মনে করেন গোল্ডেন বেঙ্গল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলের মালিক ফরিদ।

এ এজেন্সি মালিক আরো বলেন, প্রাথমিক নিবন্ধনের টাকা কমানোর জন্য আগের সচিব (মু. আ. হামিদ জমাদ্দার) কমিটমেন্টও করেছিলেন, কিন্তু কমাননি। তিনি বলেন, ‘শেষ দিকে নিবন্ধন বেশি হয়। টেনেটুনে হয়তো এবার নিবন্ধন ৫০ হাজারের মতো হতে পারে। কোটার বড় অংশ ফাঁকা থাকবে বলে আমরা মনে করছি। তবে সার্বিক বিষয়ে আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শিগগির কথা বলবো। সরকার কী চিন্তা করছে আমরা শুনবো।’

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক বলেন, ‘হজ হলো দ্বি-রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। এটি পুরোপুরি আমাদের হাতে নেই। প্রাথমিক নিবন্ধনের জমা নেয়া টাকা কমানোর কথা বলা হচ্ছে। তবে যে টাকা নেয়া হচ্ছে, সেটা শুধু বাংলাদেশ প্রান্তের খরচের জন্য নেয়া হচ্ছে না। বাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন খরচের জন্য সৌদি আরবে খরচের একটা অংশ তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হয়। ঐ টাকাটা সময়মতো পাঠাতে না পারলে ওখানকার কাজগুলো পিছিয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘গত বছর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটা তহবিল ছিল, সেখান থেকে সেই টাকাটা পরিশোধ করে পরে সমন্বয় করা হয়েছিল। এবার সেই তহবিলটা নেই। তাই মিনিমাম এ টাকাটা প্রাথমিক নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে। গত বছর টাকা কম নেয়ায় সমস্যা হয়েছিল বলে সহকর্মীরা জানিয়েছেন।’

সচিব আরো বলেন, ‘যারা হজ করতে যাবেন, তারা হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেন না। তাদের একটা পরিকল্পনা থাকে। অর্থের সংস্থানটা কোথায় থেকে হবে সেটাও ঠিক করা থাকে। নিবন্ধনের সবশেষ অবস্থা দেখে, উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে আমরা নিবন্ধনের সময় বাড়াবো কি না সেই সিদ্ধান্ত নেবো। পরিস্থিতির আলোকেই পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হবে।’

আফতাব হোসেন আরো বলেন, ‘আমরা বিমান মন্ত্রণালয় ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে আবার কথা বলবো। অনেকে বিমান ভাড়া রিভিউ করার জন্য বলেছেন। হাজিদের একটু রিলিফ দিতে পারলে আমাদের ভালো লাগবে। তবে জাহাজে হজযাত্রী পরিবহন এবছর আর হবে না।’

গত ৩০ অক্টোবর সরকারিভাবে দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ঘোষিত সাশ্রয়ী সাধারণ প্যাকেজ-১ অনুযায়ী খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর চলতি বছরের প্যাকেজ-১ এর চেয়ে এক লাখ ৯ হাজার ১৪৫ টাকা কম খরচ হবে। অন্য প্যাকেজে (প্যাকেজ-২) খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। এ হিসাব খাবার খরচ ছাড়া। এ বছর সরকারিভাবে হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৩৮৭ টাকা খরচ হয়েছিল। বিশেষ হজ প্যাকেজের মূল্য ছিল ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। এবার বিশেষ প্যাকেজ করা হয়নি।

সরকার বেসরকারি মাধ্যমে সাধারণ হজ প্যাকেজ মূল্য ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা (খাবার খরচ ছাড়া) নির্ধারণ করে দিয়েছে। সাধারণ হজ প্যাকেজ গ্রহণ করে এজেন্সি একটি অতিরিক্ত বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে বলেও ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।

পরে ৬ নভেম্বর হাবের বাতিল হওয়ার কমিটি আগামী বছর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করে। ‘সাধারণ হজ এজেন্সির মালিকবৃন্দ’ ব্যানারে তারা এ প্যাকেজ ঘোষণা করে। খাবার খরচ যুক্ত করে সাধারণ হজ প্যাকেজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার এবং বিশেষ হজ প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। পরদিন ৭ নভেম্বর ‘বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সি মালিকরা’ তিনটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে। তাদের ঘোষণা করা প্রথম প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে ৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা, দ্বিতীয় প্যাকেজের মূল্য ৫ লাখ ৮৫ হাজার এবং বিশেষ হজ প্যাকেজ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন