রিপন হোসেন সাজু:
ঘন-লম্বাকৃতির শেওলা (কচুরিপনা) কেটে দুই দিকে ফেলছে। ফাঁকা হয়ে যাওয়া কচুরিপনার ভিতর দিয়ে বয়ে চলেছে ডিঙ্গি নৌকা। এই ডিঙ্গি নৌকার ওপর বিশেষ কায়দায় ইঞ্জিনসহ অন্যান্য উপকরণ বসিয়ে শেওলা কাটা (কচুরিপনা) মেশিন আবিষ্কার করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন প্রদীপ বিশ্বাস। ইতোমধ্যে তার তৈরীকৃত মেশিন গোপালগঞ্জ পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) কিনে নিয়ে গেছে।
এছাড়া দেশের নানা প্রান্ত হতে প্রতি মুহূর্তে মোবাইলে যোগাযোগ করে মেশিন ভাড়া, ক্রয় ও তৈরির অর্ডার পাচ্ছেন। প্রদীপ বিশ্বাস যশোরের মনিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কুচলিয়া গ্রামের মৃত. প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাসের ৪ ছেলের মধ্যে ছোট সন্তান। বাবা ছিলেন অভয়নগর উপজেলার একটি জুট মিলের নামকরা মেকানিক। তার মেধার কারনে পন্ডিত নামেই বেশি পরিচিতি ছিলেন। বাবার হাত ধরেই এ পথে আসা। সুন্দলী বাজারে রয়েছে প্রদীপ বিশ্বাসের ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ। পড়ালেখার গন্ডি বেশি দুর এগোয়নি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালিন বাবা প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাসের হাত ধরে এই মেকানিক লাইনে এসেছেন। সরেজমিন মনিরামপুর উপজেলা সদর হতে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সুন্দলী বাজারে গেলে দেখা যায় প্রদীপ বিশ্বাস নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘কুচলিয়া পিকেবি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক’-এ এক মনে কাজ করছেন। শেওলাকাটা মেশিনের কথা বলতেই তিনি জানান, পাশেই বিল বোকড়ে এক ঘের মালিক শেওলা কাটতে তার মেশিন ভাড়া করে নিয়ে গেছেন। হাতের কাজ শেষ হলে তাকে নিয়ে পায়ে হাটা পথে রওনা হই মেশিন নিয়ে কাজ করা সেই মাছের ঘেরে। প্রায় আধাঘন্টা পায়ে হাটার পর সেই বিলে গিয়ে দেখা যায় একটি মাছের ঘেরে মেশিন দিয়ে শেওলা কাটা হচ্ছে। ঘেরে দায়িত্ব থাকা আদিত্য মন্ডল জানান, শেওলার কারনে ঘের হতে মাছ ধরা না যাওয়ায় মেশিনটি ভাড়া নিয়ে শেওলা কাটা হচ্ছে।
এ সময় উপস্থিত মেশিন আবিষ্কারক প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, ভবদহের প্রভাবে এ অঞ্চলের নদী-খালগুলোতে পলি জমায় নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় খাল-বিল ও নদীতে প্রচুর শেওলা জন্মেছে। যা সারা বছরই থাকে। এতে করে খাল-বিল ও নদীতে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। মূলত এই শেওলা থেকে পরিত্রানের উপায় বের করার চিন্তার মধ্যে দিয়ে তিনি মেশিন আবিষ্কারে নেমে পড়েন। তিনি আরও জানান, দুই বছর আগে ২২ হর্স-পাওয়ারের ইঞ্জিন, এঙ্গেল, পাত, কাঠ, চেইন, পেনিয়াম, গিয়ারবক্স, পেনসিড ও ১৯ টি বিচালি কাটা ছুরি দিয়ে মেশিন বানালেও ঘন শেওলা কাটতে গেলেই মেশিন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ডিঙ্গি নৌকা চালাতে ১১ হর্সপাওয়ার ও শেওলা কাটতে ২২ হর্সপাওয়ারের পৃথক দুইটি ইঞ্জিনহ ৯ টি ছুরি পাতের মধ্যে বিশেষ কায়দায় সেট করে মেশিনটি বানানো হয়। প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যায় সাপেক্ষে মাস খানেক কাজ করে তৈরিকৃত মেশিন শেওলা কাটার উপযোগী হয়। কেটে ফেলা কুচি কুচি শেওলা দিয়ে জৈব সার তৈরী সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। ইতোমধ্যে তার তৈরীকৃত মেশিন গোপালগঞ্জ পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) কিনে নিয়ে গেছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ ধরনের উন্নত মানের মেশিন তৈরি সম্ভব।