আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চারটি ফোনকল ধরেননি বলে জানিয়েছে জার্মান সংবাদপত্র ফ্রাঙ্কফুর্টার অ্যালগেমিইন জেইতুং (এফএজেড)। পত্রিকাটি দাবি করেছে, শুল্ক নিয়ে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এটি মোদির ‘গভীর ক্ষোভ এবং কূটনৈতিক সতর্কতার বহিঃপ্রকাশ’। একইসঙ্গে জাপানি দৈনিক নিক্কেই এশিয়াও জানিয়েছে, মোদি ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাম্পের ফোন এড়িয়ে যাচ্ছেন, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টের হতাশা আরও বাড়াচ্ছে।
বুধবার (২৭ আগস্ট) এ তথ্য দিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি।
শুল্ক উত্তেজনা ও ভারতের প্রতিক্রিয়া
সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছেন। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপও অন্তর্ভুক্ত। এ সিদ্ধান্তে নয়াদিল্লি–ওয়াশিংটন সম্পর্ক নতুন করে উত্তেজনার মুখে পড়েছে। ভারত জানিয়েছে, তারা এই চাপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছেন, কৃষকদের স্বার্থের সঙ্গে কোনোভাবেই আপস করা হবে না।
এফএজেড জানিয়েছে, বাণিজ্য বিরোধে নয়াদিল্লি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রাম্পের আচরণে মোদি অপমানিত বোধ করছেন এবং ফোনে কথা বলতে অনীহা তার বিরক্তির মাত্রাই প্রকাশ করছে।
পাকিস্তান প্রসঙ্গ ও ট্রাম্পের কূটনীতি
ট্রাম্প সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের ইঙ্গিত দেওয়ার পর ভারতে তার ভাবমূর্তির বড় পরিবর্তন এসেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। মে মাস থেকে বারবার ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার মধ্যস্থতায় ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধ এড়ানো গেছে। তবে নয়াদিল্লি এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। নিক্কেইর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের ‘চুক্তিনির্ভর ও প্রদর্শনমুখী কূটনীতি’ দুই দেশের সম্পর্কে নতুন চাপ তৈরি করছে।
চীন প্রসঙ্গ ও আঞ্চলিক সমীকরণ
এফএজেড–এর সঙ্গে আলাপকালে বিশ্লেষক মার্ক ফ্রেজিয়ার বলেছেন, ভারতকে ইন্দো-প্যাসিফিক জোটের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ভাবা হলেও সেই ধারণা ভেঙে যাচ্ছে। তার মতে, নয়াদিল্লি কখনোই বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের পাশে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করেনি। বরং বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে ভারত ও চীনের স্বার্থ মিল রয়েছে।
ফ্রেজিয়ার মনে করেন, চীনা বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি ভারতের শিল্পখাতকে এগিয়ে নিতে পারে, আর ভারতও বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, ‘এটি শুধু মার্কিন শুল্কের প্রতিক্রিয়া নয়, বরং ভারতের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। যুক্তরাষ্ট্র সরে যাচ্ছে, তাই বৈশ্বিক প্রভাব ও শিল্প প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভারত ও চীনের অভিন্ন স্বার্থ সামনে আসছে।’
মোদির আসন্ন চীন সফর
আগস্টের শেষে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী মোদি চীন সফরে যাচ্ছেন। এটি হবে তার প্রথম বেইজিং সফর। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সফর চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র–চীন সম্পর্কের অনিশ্চিত পরিস্থিতির ওপর নজর রাখারও অংশ।