হোম অন্যান্যসারাদেশ শার্শায় পাট ধোয়ার কাছে ব্যস্ত নারীরা । 

শার্শায় পাট ধোয়ার কাছে ব্যস্ত নারীরা । 

কর্তৃক
০ মন্তব্য 127 ভিউজ

মিলন হোসেন ,বেনাপোল:

নাভারন সাতক্ষীরা মহাসড়কের ধারে শার্শা উপজেলার নীলকান্ত মোড় সংলগ্ন বাওড়ে পাট ধোয়ার কাজে ব্যস্ত যশোরের শার্শা উপজেলার সামটা গ্রামের আছিয়া খাতুন (৫২),মমতাজ বেগম(৪০), জুবাইদা খাতুন(৫০),ফতেমা বেগম(৩৫), কুলসুম খাতুন(৩২)হাছিনা বানু(২৮) আর মাখলার বিলে টেংরা গ্রামের তছলিমা খাতুন(৪৫),খুকুমনির এখন দম ফেলার সময় নেই। পাট ধোয়া আর আঁশ ছাড়ানোর কাজে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত তারা। তাদের এই দৃশ্য ক্যামেরাই ধারন করতে গেলে আছিয়া বেগম বলেন,ওগো বিটা, কত্তেছো কী? ফটোক তুলো না। আমাগের নাতিপুতিরও বিয়েশাদি হয়ে গেছে।আমরা এই কাজ কত্তিছি,তারা এই ফটোক দেখলি রাগ করবেনে!
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে শার্শায় পাট কাটা, জাগ দেওয়ার কাজে পুরুষরা ব্যস্ত থাকলেও পাটকাঠি থেকে আঁশ ছাড়ানো ও পাটের আঁশ শুকানোর কাজে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ১৩ হাজার নারী।পুরুষদের পাশাপাশি এই কাজে অংশ নিয়ে কিছুটা বাড়তি আয়ের মুখও দেখছেন তারা। বেনাপোল পুটখালী গ্রামের ময়না বেগম জানান,এক আঁটি পাট ছাড়ালে পাওয়া যায় ২০ টাকা। একজন নারী দিনে ২০ থেকে ৩০ আঁটি পাটের আঁশ ছাড়াতে পারেন। অন্য সময় ক্ষেতমজুর হিসেবে কাজ করলে যে টাকা মেলে,পাট ধোঁয়ার কাজে পাওয়া যায় তার তিনগুণ বেশি টাকা।
এ কারণেই সংসারের কাজের পাশাপাশি পাট মৌসুমে পাট ছাড়ানোর কাজে যোগ দিচ্ছেন নারীরা। অনেকে আবার কাজটি করছেন পাটকাঠি নেয়ার শর্তে। এতে সংসারের ব্যয় নির্বাহে কিছুটা হলেও সহযোগিতা করতে পারছেন তারা। মহিশাকুড়া খালে পাট ধোয়ার কাজে ব্যস্ত বিধবা শবে বিবি(৫০),বাক প্রতিবন্ধী সুফিয়া খাতুন(২৫),দিনমজুর শাকিলা খাতুন (৪৫)। শবে বিবি বলেন,দুপুর অব্দি কুড়ি গল্লা পাট ধুতি পারি।মাঠে জোন দিলি পাই দু’শো টাকা।এখেনে পাচ্ছি চার’শ টাকা। ময়লা পানিতি কাজ করতি হয় তাই গাঁ হাত পা একটু চুলকোয়।বেড়ে পোকায় কামড়ায়,তবুও আয় বেশি তাই এই কাজ করি।

এদিকে উপজেলার অনেক হাট-বাজারে শুরু হয়েছে আগাম পাট বিক্রি। বাগআচড়ার পাটচাষী মোজাম গাজি জানালেন, প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২১০০ টাকায়। প্রতি আঁটি পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
উপজেলার গোড়পাড়া গ্রামের আতিয়ার রহমান জানান,মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি ও আম্পান ঝড়ের কারনে চার বিঘা জমিতে লাগানো পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তবে পরে ফলন ‘মোটামুটি ভালোই’ হয়েছে। চার বিঘা জমি থেকে পাওয়া ৪০ মণ পাট এবার ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন বলেই তিনি আশা করছেন। এ বছর দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করা টেংরা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলি মিলনও ভালো দাম পাওয়া আশায় রয়েছেন।
কৃষি কর্মকর্তা সৌতম বলেন,এবার উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। শার্শায় পাট চাষের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির বিপরীতে চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৬০০হেক্টরে।” গত বছর পাটের উপযুক্ত দাম পাওয়ায় এ মৌসুমে কৃষকরা পাটের আবাদ বেশি করেছে।তিনি আরো জানান, ছয়’শ নারীকে আমরা সরকারিভাবে প্রশিক্ষন,বীজ,সার, কীটনাশক দিয়ে পাট চাষে সহায়তা করেছি তবে উপজেলায় দুই হাজার নারী নিজের জমিতে চাষাবাদ করেন। অন্যের জমিতে মজুর হিসেবে কাজ করেন আরো প্রায় চার হাজার নারী। “তবে মৌসুমে পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানোর কাজ করেন এ জনপদের প্রায় ১৩ হাজার নারী।”

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন