হোম অন্যান্যসারাদেশ লুটে নেওয়া হচ্ছে লালমাই পাহাড়ের মাটি, উজাড় হচ্ছে গাছপালা

লুটে নেওয়া হচ্ছে লালমাই পাহাড়ের মাটি, উজাড় হচ্ছে গাছপালা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 9 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:
ইতিহাস-ঐতিহ্য আর অমূল্য প্রত্নসম্পদে ভরা লালমাই পাহাড়ের উঁচু-নিচু টিলা কেটে সাবাড় করছে সংঘবদ্ধ মাটিদস্যু চক্র। মাটি কেটে টিলাগুলোর গাছগাছালি অবাধে লুটে নিয়ে লালমাইকে ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত করা হচ্ছে। এছাড়া এ পাহাড়ে দিনে দিনে বাড়ছে জনবসতি, শিক্ষা, বিনোদন ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। এতে ক্রমেই ছোট হয়ে নান্দনিকতা হারাচ্ছে এ পাহাড়, বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।

পরিবেশবিদরা বলছেন, কুমিল্লা অঞ্চলের পরিবেশ-প্রকৃতির ফুসফুস বা প্রাণখ্যাত বিস্তীর্ণ এ পাহাড়ের অধিকাংশ স্থানে এখন চোখে পড়ে শুধুই ধ্বংসলীলার দৃশ্য। এভাবেই মাটিখেকোদের আগ্রাসনে পড়ে ধ্বংসযজ্ঞে যেন পালটে যাচ্ছে মুগ্ধতা ছড়ানো অপরূপ সৌন্দর্যের লালমাই পাহাড়ের ভূপ্রাকৃতিক মানচিত্র।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, লালমাই পাহাড় কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত একটি বিচ্ছিন্ন উঁচু-নিচু পর্বতশ্রেণি। প্রায় ২৫ লাখ বছর আগে প্লাইস্টোসিন যুগে এই পাহাড় গঠিত হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। সে হিসেবে এটি বাংলাদেশের বরেন্দ্রভূমি, মধুপুর ও ভাওয়াল গড়ের সমকালীন। এ পাহাড়ের দৈর্ঘ্য ৮ কিলোমিটার, সবচেয়ে চওড়া অংশ ৪.৮ কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা ৪৬ মিটার। পাহাড়টির দক্ষিণ অংশ লালমাই এবং উত্তর অংশ ময়নামতি পাহাড় নামে পরিচিত।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, অপরিণামদর্শী লোভী মানুষেরা আগ্রাসী হাতে নির্বিচারে লালমাই পাহাড়ের উঁচু নিচু টিলা কেটে-খুঁড়ে-ছেঁটে সমতল করতে গিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের চরম সর্বনাশ হচ্ছে। দিনে দিনে পাহাড়ের অনেক টিলা ও গাছপালা বিলুপ্ত হয়ে গেছে অথবা বিলুপ্তির পথে। এতে হরেক প্রজাতির পাখপাখালি, জীবজন্তু, জীববৈচিত্র্যের বিচরণ ও বংশবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ের মাটি যাচ্ছে ইট ভাটায়। আর সেই ভাটায় পুড়ছে পাহাড়ি কাঠও। একেকটি আস্ত পাহাড় কেটে সমতল করে নির্মিত হয়েছে ও হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানা ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি পাকা ভবন। গত কয়েক বছরে বিনোদন পার্ক ও রিসোর্ট নির্মাণ, শত শত ঘরবাড়ি-স্থাপনা তৈরি হয়েছে। অধিকাংশ স্থান ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। এখন আর লালমাই পাহাড় অক্ষত খুঁজে পাওয়া যাবে না।

সুশোভিত পাহাড় টিলারাশি নির্বিচারে ধ্বংস করে লোভী মানুষেরা ডেকে আনছে মহাবিপদ। প্রশাসনের নাকের ডগায় পাহাড়-টিলা-বৃক্ষরাজি উজাড় হলেও তারা যেন অন্ধ, বধির-এমন অভিযোগ প্রকৃতিপ্রেমী অনেকের। সরেজমিন ঘুরে মাটি লুটের ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে শ্রীবিদ্যা, জামমুড়া, পাহাড়ের চন্ডীমুড়া, বড় ধর্মপুর, সালমানপুর, রাজারখোলা, লালমাই, বিজয়পুর, হরষপুরসহ পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায়। এখন পাহাড়ের সর্বত্র যেন ধ্বংসলীলার একই দৃশ্য। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি সিসিএন বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা ফিজিক্যাল কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানার বিভিন্ন স্থাপনা তৈরিতে পাহাড় কাটা হয়েছে, বর্তমানেও চলছে। পাহাড় কাটা ও বনজসম্পদ লোপ হওয়ায় বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ।

অসবরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক অধ্যাপক মীর শাহ আলম জানান, ‘একসময় লালমাই পাহাড়ের বনে ঢুকতে গা ছমছম করত। সেই বন এখন দেখতে ন্যাড়া মাথার মতো হয়েছে। একেকটি টিলা যেন মানুষের হিংস্র থাবার ক্ষতের জানান দিচ্ছে। পাহাড় কেটে মাটি ও গাছগাছালি সরিয়ে নেওয়ার পর বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। এ পাহাড় রক্ষায় প্রশাসনসহ সকলকে আন্তরিক না হলে শুধু পাহাড়ের মানচিত্রের সংকোচন নয়, একসময় এর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পাহাড়ের টিলা ও বৃক্ষ নিধনকারীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের অস্তিত্বের স্বার্থে পাহাড়ের সুরক্ষা ও বনায়ন জোরদার করার বিকল্প নেই।’

পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব বলেন, ‘পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে মাটি কাটা প্রতিরোধে প্রায় সময় স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে আসছি। যে কোনো মূল্যে প্রাকৃতিক সম্পদ এ পাহাড় রক্ষা করতে হবে। এজন্য প্রশাসনের পাশাপাশি সকল মহলকে সচেতন হতে হবে।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন