হোম এক্সক্লুসিভ লিটন মন্ডল থেকে চিলা-জয়মনির মানুষ মুক্তি পাবে কবে?

মোংলা প্রতিনিধি:

বনবিভাগের এক মামলায় জেলে খেটে বের হয়েছেন ২০ দিন হলো। আরও দুটির মামলা ঘাড়ে ঝুলছে। এরপর প্রতারণা করে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করা এক প্রকার নেশায় পরিনত হয়েছে তার। সরকারি চাকরী, ভিজিডি কার্ড, আবাসনে সরকারী ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে এখন পলাতক আছেন গুনধর এই ব্যক্তি। তার নাম লিটন মন্ডল (৪০)। মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি গ্রামের মৃত অতুল মন্ডলের ছেলে সে।

এই লিটনের বিরুদ্ধে তার এলাকায় সাধারণ মানুষের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। ভুক্তভোগিরা বলছেন, কখনো সে মানবাধিকার কর্মি, কখনো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স আবার কখনো উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার ঘনিষ্ট আত্মীয়ের পরিচয় দিয়ে থাকেন। প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে এসব তকমা লাগিয়েই মানুষকে বোকা বানায় সে। চতুর লিটন এতটাই কৌশলী, সহজে ধরার উপায় নেই। কিন্তু লিটনের সব প্রতারণা একে একে ধরা পড়লে একজোট বেঁধেছে তার প্রতারণরা শিকার কয়েক’শ মানুষ। আর তা বুঝেই ততক্ষণে আত্মগোপনে চলে গেছেন লিটন। কোথায় আছেন সে খবর কেউ জানেনা।

শনিবার (৫ আগষ্ট) বেলা ১১টায় তার বিচার চেয়ে চিলা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে এসময় যোগ দেয় স্থানীয় আওয়ালীগের নেতৃবৃন্দ, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বরা।

লিটনের বিচার চাইতে এসে মিনাল কান্তি রায় নামে এক ভূক্তভোগী বলেন, তার জমির কাগজ ঠিক করে দিবে বলে দুই মাস আগে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে কোন ফয়সালা দেয়নি। এখন টাকাও দিচ্ছেনা। বাড়িতে গিয়েও না পেয়ে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

চিলার কাটাখালী গ্রামের বলয় রায় ও আলম গাজী বলেন, ভিজিডি কার্ড পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তাদের দু’জনের কাছ থেক ৬০ হাজার টাকা নিয়ে এখন উধাও হয়ে গেছে। সরকারী আবাসনের ঘর দেওয়ার কথা বলে, জয়মনি গ্রামের অজিত রায়, সুরঞ্জন রায়, বিকাশ রায়, মানিক শিকদার ও আলম ফকিরের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন লিটন। এখন লিটনের হদিস মিলছেনা।

সবির কুমার বাড়ৈ নামে গ্রাম পুলিশ বলেন, তার ছেলেকে উপজেলায় চাকরী দেওয়ার কথা বলে প্রথমে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। এরপর সরকারী ঘর দেওয়ার কথা বলে আরও ১০ হাজার টাকা নেয় সে। কিন্তু ঘর কিংবা চাকরী কোনটাই কপালে জোটেনি সবিরের কপালে। এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিটনের বিচার চান তিনি।

ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আকবর হোসেন বলেন, চিলা ইউনিয়নে মাদকের প্রথম ব্যবসা নিয়ে আসেন এই লিটন মন্ডল। এলাকায় যুবককে মাদক ধরিয়ে দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ তাকে আটকও করে। জামিনে বের হয়ে এলাকার বিভিন্ন লোকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সরকারি ঘর, পানির ট্যাংক ও ভিজিডি কার্ড দিয়ে বেড়ায় বলে শুনেছি। তার ফাঁদে পা দিয়ে টাকা দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এসব সুবিধা পাইনি। প্রতারণা করে এই এলাকার নিরীহ মানুষের নিঃস্ব করেছে সে। তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি। এসময় চিলা ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি মিহির ভান্ডারি ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল হাওলাদারও লিটন মন্ডলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন এবং শাস্তি চান।

জানতে চাইলে লিটন মন্ডলকে ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার বিষয়ে খোঁজ নিতে তার এলাকায় গেলে লিটন ঢাকায় আত্মগোপনে আছে বলে তার প্রতিবেশীরা জানায়।

এ প্রসঙ্গে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপংকর দাশ বলেন, লিটন মন্ডলের বিরুদ্ধে মৌখিক অনেক অভিযোগ শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন