হোম ফিচার লকডাউন শিথিল হলে,করোনার বন্যা বয়ে যেতে পারে !

লকডাউন শিথিল হলে,করোনার বন্যা বয়ে যেতে পারে !

কর্তৃক
০ মন্তব্য 653 ভিউজ

ছোটবেলায় গল্প শুনেছি মানুষ পানীয় পান করেও সাত দিন বেঁচে থাকতে পারে। অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে সময়সীমা রয়েছে। সবচেয়ে বেশিদিন কোন আহার না করেও কাছিম (কচ্ছপ) পৃথিবীতে বেশিদিন বেঁচে থাকে। সেই ছোটবেলার গল্প হঠাৎ মনে পড়ে গেল। কারণ বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে বিভিন্ন দেশে লকডাউন চলছে। এর ফলে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অর্থাৎ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করা শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

ঘর বন্দী এই মানুষগুলো রাস্তায় নামলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে । অপরদিকে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসারের ঘানি টানাও তাদের জন্য দুরূহ হয়ে উঠেছে । দিনমজুর শ্রমজীবী থেকে শুরু করে শিল্পপতি পর্যন্ত সকলেরই এখন রোজগার প্রায় বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে সরকার পড়েছে উভয় সংকটে। শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা। লকডাউন উঠিয়ে দিলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আবার লকডাউন দীর্ঘস্থায়ী হলে নিম্নআয়ের মানুষগুলোর খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে। সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের মুখ থেকে শুনতে পাচ্ছি অর্থনীতি সচল রাখার জন্য লকডাউন শিথিল করা হতে পারে। সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন শনিবার সাতক্ষীরায় একটি সমন্বয় সভা করেন। ওই সভায় সংসদ সদস্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন । অনুষ্ঠিত সভায় করোনা মোকাবেলা ও সার্বিক বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়। এরপর জন-প্রশাসন সচিব সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিং এ মিলিত হন ।

তার কথাই আঁচ করতে পারলাম অচিরেই লকডাউন শিথিল করা হতে পারে। পচনশীল পণ্য পরিবহনে কোন বাঁধা নিষেধ নেই। এমনকি সীমান্তবানিজ্য লকডাউন এর বাইরে রয়েছে। ইতোমধ্যেই জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থা আশঙ্কা করেছে লকডাউন এর কারণে পৃথিবীর তিন কোটি মানুষ খাদ্যাভাবে মারা যেতে পারে। আবার লকডাউন উঠিয়ে দিলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারে। জন-প্রশাসন সচিব এর কথাই মনে হল সরকার অচিরেই লকডাউন শিথিল করতে চলেছে।

রাজধানীর গার্মেন্টস খুলে দেওয়ায় ফেরিঘাটে মানুষের ঢলও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর বিশাল একটি অংশ ঢাকা নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও ইটভাটায় শ্রম-বিক্রি করে দিনাতিপাত করে থাকে। সরকার সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিলে তারা কখনো পায়ে হেঁটে আবার কখনো ট্রাকের মধ্যে লুকিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে আসে। গতকাল শনিবার খবর এলো নারায়ণগঞ্জ ফেরত দাকোপের দুই গার্মেন্টস কর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ।

সাতক্ষীরা, খুলনা,যশোর ও বাগেরহাট জেলার হাজার হাজার গার্মেন্টস কর্মী ও ইটভাটার শ্রমিক তাদের নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছে। যশোর ও খুলনা জেলায় সংক্রমণের হার প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। সাতক্ষীরা জেলায় মাত্র দুইজন নাগরিক করোনায় আক্রান্ত হয়ে হোমকরেইন্টাইনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে জন-প্রশাসন সচিবের দৃষ্টিতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে পিসি আর ল্যাব প্রতিষ্ঠার বিষয়টি উত্থাপন করেন দৈনিক সাতনদী সম্পাদক বন্ধুবর হাবিবুর রহমান।

জবাবে জন-প্রশাসন সচিব বললেন, সাতক্ষীরায় মাত্র দুইজন আক্রান্ত হয়েছে। মেডিকেল কলেজে পিসি আর ল্যাব গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় স্থাপিত হবে। এ সময় তার কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলাম, সাতক্ষীরায় নমুনা পরীক্ষা কম হচ্ছে, তাই আক্রান্তের সংখ্যা কম দেখা যাচ্ছে । নমুনা পরীক্ষার হার বৃদ্ধি পেলে, আক্রান্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, ঢাকায় যখন একমাত্র আরইডিসিআর কেন্দ্রে যখন নমুনা পরীক্ষা কমহত, সে কারণে আক্রান্তের সংখ্যা কম দেখাযেত।

পরীক্ষাগারের বিস্তৃতি লাভ করাই নমুনা পরীক্ষা বেশি হচ্ছে, তেমনি আক্রান্তের সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে । সাতক্ষীরা নমুনা পরীক্ষার জন্য আগে ঢাকায় এখন খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। রিপোর্ট আসতেও তিনদিন সময় পার হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে সাতক্ষীরায় আক্রান্তের সংখ্যা কম বলে আমার সন্দেহ হয়। বিশেষ করে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে আসা গার্মেন্টস কর্মী ইটভাটার শ্রমিক যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ। ব্যাপক হারে যদি নমুনা পরীক্ষার সুযোগ থাকতো তাহলে হয়তোবা আক্রান্তের সংখ্যা দু”এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত না।

আগামী দুই সপ্তাহ এই অঞ্চলের মানুষের জন্য খুবই ডেঞ্জার টাইম বলে কয়েক জন চিকিৎসক মন্তব্য করেছেন । অর্থনীতি সচল করতে গিয়ে যদি মানুষের জীবন অচল হয়ে যায়, তাহলে সেই অর্থনীতির সুফল কে ভোগ করবে ?

কথা বলেছি, মাঠ প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার সাথে। তারা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই তাদের লক্ষ্য। ইতোমধ্যেই ছয় শতাধিক চিকিৎসক নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। একজন চিকিৎসক জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিয়েছে করোনা যুদ্ধের অগ্রজ সৈনিক পাঁচ পুলিশ সদস্যের নাম। আক্রান্ত হচ্ছে সংবাদকর্মীরাও।

এমপি, ডিসি, এসপি কেউ বাদ যাচ্ছেন না। আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করা খুবই কঠিন। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সংস্থা তাদের আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছে। জানি না আমার এই লেখা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে কিনা ? ক্ষুদ্র সংবাদকর্মী হিসেবে আমার আশঙ্কা লকডাউন শিথিল করা হলে করোনার বন্যা বয়ে যেতে পারে!

লেখক : সম্পাদক,দৈনিক সংকল্প, RTV এর নিজস্ব প্রতিনিধি,সাতক্ষীরা।

 

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন