হোম অন্যান্যসারাদেশ র‍্যাব-৪ এর সফল অভিযান-ধরা খেলেন চাকরিদাতা আব্দুল মালেক, বাকিরা পলাতক!

সদয় দাশ, সিনিয়ার রিপোর্টার, ঢাকা :

রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে চাকরি দিয়ে এবং দেয়ার নামে জাল সনদ-সিল ব্যবহার করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক আব্দুল মালেক’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪, এসময় তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জাল কাগজপত্রাদি ও সিল জব্দ করা হয়।

র‍্যাব-৪ এর সদস্যরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারেন,একটি সংঘবদ্ধ পেশাদার চক্র সাধারণ জনগণকে চাকুরী দিয়ে এবং চাকুরী দেয়ার নামে প্রতারণার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। উক্ত অভিযোগ যাচাই-বাছাই ও সরেজমিনে অনুসন্ধান করেন এবং এর সত্যতার আলোকে র‌্যাব-৪,সিপিএসসি এর একটি আভিযানিক দল ১৯/০৭/২০২১ ইং তারিখ রাত ০১.৩০ ঘটিকায় রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন মনিপুরীপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত জালসনদপত্র ও বিভিন্ন নথিপত্রসহ প্রতারকচক্রের মূলহোতাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ আব্দুল মালেক (৪২), জেলাঃ কুষ্টিয়া। তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত আলামত হিসেবে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র- ১টি,ভুয়া জন্মসনদ- ৬০টি, ভুয়া নাগরিকত্ব সনদপত্র- ১৮টি,এতিমখানার ভুয়া প্রত্যয়নপত্র- ০৮টি,৫৫ লক্ষ টাকার এফডিআর কপি,ব্যাংক চেক বই- ০৬টি,সরকারি কর্মকর্তার ভুয়া সিল- ০৬ টি,ক্লিপ চার্ট- ১টি,ল্যাপটপ- ১টি,কম্পিউটার সিপিইউ- ১টি, প্রিন্টার- ১টি,নগদ ২১০৮৫ টাকা সহ ০১টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেন। মোঃ আব্দুল মালেক ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া জেলায় জম্মগ্রহন করে। দাখিল ও আলিম পাশ করে স্থানীয় একটি কলেজ থেকে বি.কম এবং এম.কম ডিগ্রী লাভ করে। সে শিক্ষাজীবন শেষ করে _২০০৪ সালে “বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর” খামারবাড়ী, ফার্মগেট এ “অফিস সহাকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর” পদে চাকরী_ পায়। মূলত চাকুরী লাভের পর থেকে চাকুরীপ্রার্থীদের সাথে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতে থাকে। এক পর্যায়ে ২০১০ সালে বিভিন্ন _অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে তাকে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের সত্যতা প্রাপ্তি সাপেক্ষে তাকে ২০১৫ সালে চাকুরীচ্যুত করেন।এরপর থেকে তিনি এ কাজে লিপ্ত হন।

তার প্রতারণার কৌশল ছিলো অভিনব। সে নিজ এলাকাসহ দেশের _বিভিন্ন জেলায় এজেন্ট নিয়োগ করে চাকরিপ্রার্থীদের সংগ্রহের কাজ শুরু করেন।সরকারী চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে সে অধিক সংখ্যক চাকুরীপ্রার্থী সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালে *_”এমবিশন” নামে একটি কোচিং সেন্টার চালু_ করেন এবং সেখান থেকে চাকরীপ্রার্থীদের মধ্য থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের কোটা যেমন জেলা কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, এতিম কোটা, আনসার কোটা প্রভৃতি শ্রেণিকরণ করতেন এবং উক্ত তালিকা অনুযায়ী প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি যাচাই-বাছাই করে_স্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে টাকা অথবা জমির দলিল জমা রাখার শর্তে চাকরীপ্রার্থীদের সাথে সে চুক্তিবদ্ধ হইতেন এবং চুক্তিশেষে বিভিন্ন মাধ্যম যেমন- লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থীর ছবি পরিবর্তন, প্রশ্নফাস, এমন কি প্রার্থীকে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পাশ করানো; নাগরিক সনদপত্র পরিবর্তন, জন্মসনদ পরিবর্তন, চারিত্রিক সনদপত্র, এতিমখানার সনদপত্র, প্রতিবন্ধী সনদপত্র, চেয়ারম্যান প্রত্যয়নপত্র পরিবর্তন সহ যে সব জেলায় অধিক সংখ্যক জনবল নিয়োগ করে থাকেন এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে সে সকল জেলার প্রার্থীর ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করতেন এবং কোন চাকুরীপ্রার্থী চুক্তিবদ্ধকৃত টাকা দিতে না পারলে তার জমাকৃত জমির দলিলের মাধ্যমে প্রার্থীর জমি দখল পর্যান্ত করতেন। এছাড়াও যারা এই প্রক্রিয়ায় চাকুরী পেতেন তাদের’কে জিম্মি করার উদ্দেশ্যে তাদের সব ধরনের কাগজপত্র জমা রাখা হইতো এর ফলে পরবর্তীতে তাদের কেউ ঝামেলা করলেই তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে চাকুরী পাওয়ার অভিযোগ দিতেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী তার কৃত অপকর্মের বিষয়টি স্বীকার করেছে। এছাড়াও তিনি পলাতক আসামী আব্দুর রাজ্জাক (৫০), আল-আমিন (২৫) এবং অবিনাষ (৩২) সহ তার অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় তার এই প্রতারণার কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো। র‌্যাবের
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, আসামীর ঢাকায় অভিজাত এলাকায় তিনটি ফ্ল্যাট ও ধামরাইয়ে ৮.২৫ শতাংশ জমি ছাড়াও কুষ্টিয়া তে একটি সুপার মার্কেট, একটি পাকা বাড়ি, ৪টি ট্রাক, একটা বাস ও ২৫ বিঘা জমি রয়েছে।

তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে র‌্যাব ৪ এর অধিনায়ক জানান।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন