খুলনা অফিস :
সম্প্রতি পথচলা শুরু হয়েছে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুকৃবি)। দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি মাছ, কাঁকড়া, পাট, সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র, রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অনেক কিছু নিয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে এখনকার শিক্ষার্থীদের। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণা কার্যক্রম আরো বেশি গতিশীল করতে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার (মৃত) আনা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। যা নিয়ে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মধ্যে উৎফুল্লতার বহিপ্রকাশ পাচ্ছে। খুব দ্রুত “এনাটমি মিউজিয়াম” বাস্তবায়িত করার পর রয়েল বেঙ্গল টাইগারের পুরো দেহের কঙ্কালটিকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মোচন করা হবে।
জানা যায়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার জন্য খুলনার জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃক একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার (মৃত) প্রদান করেছে। গত ২০ জানুয়ারি ভোরে ক্যান্টনমেন্টের বনবিলাস চিড়িয়াখানায় বাঘের মৃত্যু হয়। ১৪/১৫ বছর বয়স হওয়ায় বাঘটির মৃত্যু বার্ধক্যজনিত কারণে হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ মৃত বাঘটিকে মাটি চাপা না দিয়ে ভেটেরিনারি শিক্ষায় সহায়তার ইচ্ছা পোষণ করেন। খুকৃবি কর্তৃপক্ষ উক্ত খবরটি খুলনা প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে জানতে পারে।
খুকৃবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো: শহীদুর রহমান খান’এর নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি, এনিম্যাল এন্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি মেডিকেল টিম চিড়িয়াখানায় মৃত বাঘটিকে বুধবার দুপুরে পরিদর্শন করেন। উপস্থিত ছিলেন খুকৃবির এনিম্যাল নিউট্রিশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো: তসলিম হোসেন, ফিজিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এম এ হান্নান, ডাঃ পাপিয়া খাতুন, ডাঃ জান্নাত হোসেন, ডাঃ স্বরূপ কুমার কুন্ডু, ডাঃ শাহাবুদ্দীন আহমেদ, ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ্, ডাঃ শারমিন জামান, নাজমুল হক অপু সহ শিক্ষার্থীরা।
এরপর জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে বাঘটিকে খুকৃবির ভেটেরিনারি, এ্যানিমেল এন্ড বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের নিকট হস্তান্তর করা হয় । পরবর্তীতে নগরীর দৌলতপুরে অবস্থিত খুকৃবির অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বাঘটির চামড়া, কংকাল, ও অভ্যন্তরিন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সমূহকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। যা ভবিষ্যতে ভেটেরিনারি, এ্যানিমেল এন্ড বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের ব্যাবহারিক পাঠদানে ও গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এনাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগের প্রস্তাবিত “এনাটমি মিউজিয়াম” বাস্তবায়িত হলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের পুরো দেহের কঙ্কালটিকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মোচন করা হবে।
এ বিষয়ে ভেটেরিনারি, এ্যানিমেল এন্ড বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের (ব্যাচ-১) শিক্ষার্থী মাহিরুল হক শিলং বলেন, গবেষণার জন্য রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাওয়ার অনুভূতি আমাদের জন্য সত্যিই আনন্দদায়ক ও গর্বের বিষয়। আমাদের জাতীয় পশু নিয়ে নবীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান এবং আগামীর শিক্ষার্থীরা গবেষণা করার সুযোগ এত অল্প সময়েই পাবে তা আশা করিনি। বাঘটি পাওয়ার মাধ্যমে ভেটেরিনারি শিক্ষা ও গবেষণায় খুকৃবিতে নতুন একটি দ্বার উন্মোচিত হবে।
খুকৃবি’র ফিজিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এম এ হান্নান জানান, আমরা সংবাদ পাওয়ার পর বাঘটি দেখতে যাই। কোন ধরনের রোগ ছাড়াই বাঘটি বার্ধক্যজনিত কারণেই মারা গেছে। দক্ষিণাঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বাঘ নিয়ে গবেষণার কাজ আরো গতিশীল হবে। বাঘের মাংসগুলো পুঁতে রাখা হয়েছে। এছাড়া বাঘের চোখ, হাড়, চামড়া, ফুসফুস, লেবার, কিডনিসহ প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রতঙ্গ গবেষণার জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে।
খুকৃবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো: শহীদুর রহমান খান বলেন, রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাওয়ায় ভেটেরিনারি শিক্ষা ও গবেষণায় খুকৃবিতে নতুন একটি দ্বার উন্মোচন হল। বাঘটি সরবরাহ এবং সংরক্ষণের জন্য যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বাঘ নিয়ে গবেষণার সুযোগ পাওয়াটা আসলেই গর্বের। আমি মনে করি, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাঘ নিয়ে গবেষণার কাজে আরো বেশি গতিশীল হবে।
