জাতীয় ডেস্ক:
বাংলাদেশ যদি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে চায়, তাহলে রোহিঙ্গা সংকটকে অতি প্রাধান্য না দিয়ে এই জোটের দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখা উচিত বলে মনে করেন সিঙ্গাপুরের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ ইয়াও।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গুলশানে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ‘কসমস সংলাপে’ অংশ নিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন। জর্জ ইয়াও বলেন, আপনাদের দরকার আসিয়ানের অভিপ্রায়ের ওপর জোর দেয়া। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে বিবেচনায় নেয়া। তাই বলে রোহিঙ্গা সংকট বাদ দিয়ে না, আবার এটিকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েও না।
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার যেখানে আসিয়ানের পূর্ণসদস্য, সেখানে সংস্থাটির সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনারের মর্যাদা পেতে চায় বাংলাদেশ। এতে দুইপক্ষের মধ্যে ব্যাপক বাণিজ্যিক, বিনিয়োগ, জলবায়ু ও আন্তঃসীমান্ত নিরাপত্তা ইস্যুতে সহযোগিতার সুযোগ তৈরি হবে।
‘বহুমুখী বিশ্বে আসিয়ান এবং বাংলাদেশ’ শিরেনামের সংলাপে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে চায়। এক্ষেত্রে একটি ইস্যুই প্রধান্য বিস্তার করছে। আমি মনে করি, কূটনৈতিক দক্ষতা কাজে লাগাতে পারলে, অনেক বেশি জটিলতায় না জড়িয়েই সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে পারে বাংলাদেশ।
রোহিঙ্গা সংকটকে মানবিক ট্র্যাজেডি আখ্যায়িত করে সিঙ্গাপুরের সাবেক শীর্ষ এই কূটনীতিক বলেন, এর কোনো সহজ সমাধান নেই। কারণ ইতিহাসের মধ্যেই এই সংকটের শিকড় নিহিত। কাজেই সমাধানও সেখান থেকে বের করতে হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে এই গণহত্যার নিন্দা জানায়নি আসিয়ান। রাখাইনের রাজনৈতিক সংকট থেকে মানবিক সংকটকে আলাদা করে দেখতে চায় আসিয়ান।
এছাড়া কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতেও হস্তক্ষেপ করে না আসিয়ান, বলেন জর্জ ইয়াও। তিনি জানান, আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই ও সিঙ্গাপুর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতিশীল। আবার অন্য দেশগুলো একই দৃষ্টিভঙ্গি বহন করছে না। লাওসের সঙ্গে মিয়ানমারের ঐতিহাসিক গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
রোহিঙ্গা মিয়ানমারে একটি গৌণ সমস্যা হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি প্রধান সংকট বলে জানান সিঙ্গাপুরের সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেন তিনি।
১৯৮৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ২৩ বছর সিঙ্গাপুর সরকারের বাণিজ্য ও শিল্প, স্বাস্থ্য, তথ্য ও শিল্পকলা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জর্জ ইয়াও।
সংলাপের সঞ্চালনা করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র উপদেস্টা ও কসমস ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান।