হোম জাতীয় রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে মিয়ানমারের নতুন পাঁয়তারা

রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে মিয়ানমারের নতুন পাঁয়তারা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 63 ভিউজ

জাতীয় ডেস্ক:

রাখাইনে বসবাসরত অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে নতুন পাঁয়তারা শুরু করেছে মিয়ানমার। রাখাইনে নতুন করে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে জান্তা বাহিনীর লড়াইকে নাটক বলছেন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।

তারা বলছেন, প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত ও আন্তর্জাতিক চাপ এড়াতে কৌশল অবলম্বন করছে মিয়ানমার। আর কোনো রোহিঙ্গাকে নতুন করে আশ্রয় দিতে রাজি নন স্থানীয়। তবে, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।

সীমান্ত ঘেঁষে একের পর এক আকাশে উড়ছে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার। আর থেমে থেমে করা হচ্ছে মর্টার শেলের গোলা নিক্ষেপ। হচ্ছে গোলাগুলিও। এরই মধ্যে মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া ১৩টি মর্টার শেল এবং ১ রাউন্ড বুলেট বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও এসে পড়েছে।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘাত চলছে সে দেশের সেনাবাহিনীর। নতুন করে এই সংঘাতে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন অঞ্চল। তাই মিয়ানমারে থাকা অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের শঙ্কা রয়েছে।

এমন পরিস্থিতি একজন রোহিঙ্গাও নতুন করে বাংলাদেশ প্রবেশ করুক, তা চায় না সীমান্তের স্থানীয়রা বাসিন্দারা। বলছেন, দীর্ঘ সময় আশ্রিত ১২ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে বিপাকে রয়েছেন তারা।

হোয়াইক্যংয়ের স্থানীয় বাসিন্দা আবু তালেব বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আমরা অতিষ্ঠ। রোহিঙ্গারা এমন কোন অপরাধ নেই যা তারা করে না। বিশেষ করে হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ ও মাদক কারবারে রোহিঙ্গারা জড়িয়ে দেশের খুবই ক্ষতি হচ্ছে।

আরেক বাসিন্দা আবু ছৈয়দ বলেন, আর একজন রোহিঙ্গাও বাংলাদেশ প্রবেশ করুক এটা আমরা চাই না। যারা আশ্রিত আছে তাদেরকেও যেন দ্রুত তাদের ফেরত পাঠানো হয়।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রাখাইনে নতুন করে সংঘাতে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন কক্সবাজারে উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। তাদের দাবি, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও জান্তা সরকার পরিকল্পিতভাবে সংঘাতের নাটক সাজিয়ে প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত ও আন্তর্জাতিক চাপ এড়াতে কৌশল অবলম্বন করছে।

লম্বাশিয়া ক্যাম্পে মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, ‘এরা তো লড়াই করছে না, তারা তারা পরিকল্পনা করে মুসলিম পাড়ায় আক্রমণ করছে। তারা তো মগ পাড়ায় যায় না লড়াই করতে।’

ক্যাম্প-১ ইস্টের বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসন বলেন, আমরা কিভাবে মিয়ানমারে যাব কোনো রাস্তা পাচ্ছি না। আমরা এক মুহুর্তেও ক্যাম্পে থাকার ইচ্ছে নেই। আমরা এখন পারলে এখনই চলে যেতে চাই। এটা কোনো আমাদের দেশ নয়, তাই আমরা এখানে থাকতে চাই না।

ক্যাম্প-১ এর বাসিন্দা ছলিম উল্লাহ বলেন, মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যে লড়াই চলছে বলা হচ্ছে, এটার খবর আমরা রাখছি। আমাদের আত্মীয়-স্বজন রাখাইনে রয়েছে। এটা সত্যিকারের মারামারি নয়, আমরা রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারের ফিরে যেতে না পারি তার জন্য পরিকল্পনা করছে।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবাইর বলেন, মিয়ানমার আমাদেরকে একবার গণহত্যা চালিয়ে দেশ ছাড়া করে। তখন বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছে। মিয়ানমার আমাদের স্বদেশে নিয়ে যাচ্ছে না, তারপরও বাংলাদেশ চীনকে সঙ্গে নিয়ে স্বদেশ মিয়ানমারের ফেরাতে কাজ করছে। মিয়ানমার আমাদের নিয়ে যাবেও বলেছে। কিন্তু মিয়ানমারের আমাদের নিয়ে যেতে রাজি নয়, জোরপূর্বক নিয়ে যেতে হচ্ছে তার কারণে আরকান আর্মিকে মিয়ানমার জান্তা সরকার সামনে এনে লড়াই করছে।

এদিকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে আরো কড়াকড়ি প্রয়োজন বলে জানালেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।

উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের ‍উখিয়া ও টেকনাফে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এর মধ্যে আর কোনো নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করুক এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। তাই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কড়াকড়ি করা প্রয়োজন।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রোববার (২৮ জানুয়ারি) সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন