জাতীয় ডেস্ক:
রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের বিস্তৃতি ইস্যুতে আতঙ্কিত না হয়ে সাবধানতা অবলম্বনের অনুরোধ জানিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এই সাপের ক্ষতি থেকে বাঁচতে বেশকিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়টি। শনিবার (২২ জুন) এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও মানুষের সাথে রাসেলস ভাইপারের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ- এই সাপ সাধারণত নিচু ভূমির ঘাসবন, ঝোঁপ-জঙ্গল, উন্মুক্ত বন, কৃষি এলাকায় বাস করে। এটি মানুষের বসতি এড়িয়ে চলে। সাপটি মেটে রঙের হওয়ায় মাটির সঙ্গে সহজেই মিশে যেতে পারে। মানুষ খেয়াল না করে সাপের খুব কাছে গেলে তখন বিপদ দেখে ভয়ে এরা আক্রমণ করে। রাসেলস ভাইপার দক্ষ সাঁতারু হওয়ায় নদীর স্রোতে ও বন্যার পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে। তাই সকলকে সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য অনুরোধ জানানো হয় এতে।
রাসেলস ভাইপারের কামড় থেকে বাঁচতে যেসব পরামর্শ মন্ত্রণালয়ের:
যেসব এলাকায় রাসেলস ভাইপার দেখা গিয়েছে সেসব এলাকায় চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
লম্বা ঘাস, ঝোঁপঝাড়, কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কোনো গর্তে হাত-পা ঢুকানো যাবে না। সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করার সময় বুট এবং লম্বা প্যান্ট পরার পরামর্শ দেয়া হয়েছে;
রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চ লাইট ব্যবহার করতে হবে;
বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার ও আবর্জনামুক্ত রাখতে হবে
পরে থাকা গাছ, জ্বালানির লাকড়ি, খড় ইত্যাদি সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
সাপ দেখলে ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না।
যেকোনো প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করা অথবা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে অবহিত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সাপ কামড়ালে যা যা করতে হবে:
কোনো কারণে এই রাসেলস ভাইপার কামড়ালে বাঁচার জন্য যা যা করতে হবে সে পরামর্শও দেয়া হয়েছে বন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে। এই সাপে কামড়ালে যা যা করতে হবে-
দংশন করা অঙ্গ নাড়াচাড়া করা যাবে না। পায়ে দংশন করলে বসে যেতে হবে, হাঁটা যাবে না। হাতে দংশন করলে হাত নাড়াচাড়া করা যাবে না। হাত-পায়ের গিড়া নাড়াচাড়ায় মাংসপেশির সঙ্কোচনের ফলে বিষ দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে বিষক্রিয়া করতে পারে।
আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে হবে।
ঘড়ি, অলঙ্কার বা তাবিজ, তাগা ইত্যাদি থাকলে খুলে ফেলতে হবে
দংশিত স্থান কাঁটা যাবে না। সুই ফোঁটানো কিংবা কোন রকম প্রলেপ লাগানো বা অন্য কিছু প্রয়োগ করা উচিত নয়।
সাপে কাটলে ওঝার কাছে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না
সাপে কামড়ালে দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যেতে হবে
রাসেলস ভাইপারের বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়। তাই কামড়ালে এর প্রতিষেধক নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
রাসেলস ভাইপারের প্রাদুর্ভাব কমাতে করণীয়:
বেজি, গুঁইসাপ, বাগডাশ, গন্ধগোকুল, বন বিড়াল, মেছো বিড়াল, তিলা নাগ ঈগল, সারস, মদন টাক এবং কিছু প্রজাতির সাপ রাসেলস ভাইপার খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এসকল বন্যপ্রাণি নির্বিচারে হত্যার কারণে প্রকৃতিতে রাসেলস ভাইপার বেড়ে যাচ্ছে। তাই বন্যপ্রাণী দেখলেই অকারণে হত্যা এবং এদের আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে, রাসেলস ভাইপার ইঁদুর খেয়ে ফসল রক্ষা করে। পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সাপের বিষ থেকে অনেক জীবন রক্ষাকারী ঔষধ তৈরি হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাসেলস ভাইপার বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন- ২০১২ এর ৬(১) ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত প্রাণী। তাই এই সাপ মারা দণ্ডনীয় অপরাধ। সাপ মারা থেকে বিরত থাকতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।