অনলাইন ডেস্ক :
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা ভবন। ওই ঘটনায় এক হাজার ১৩৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত ও পঙ্গু হন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। জীবিত উদ্ধার করা হয় দুই হাজার ৪৩৮ জনকে। বাংলাদেশ তো বটেই, গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয় এই শিল্প দুর্ঘটনা। এ দুর্ঘটনার ১০ বছর পূর্ণ হবে আগামী সোমবার। বর্তমানে শ্রমিক মৃত্যুর মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তবে, ১০ বছরেও শেষ হয়নি এর বিচারকাজ।
অপরদিকে, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আইনে দায়ের করা মামলাটিও হাইকোর্টে স্থগিত হয়ে আছে। ফলে, সেটিও আইনি জটিলতার কারণে মামলার কার্যক্রম আগাচ্ছে না।
শ্রমিক মৃত্যুর হত্যা মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপরে শুরু হয় বিচারকাজ। অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করে আসামিপক্ষ। হাইকোর্টে পাঁচ বছর মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকে। পরে গত বছরের জানুয়ারিতে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। গত বছরের ৩১ জানুয়ারি মামলার বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। গত এক বছর তিন মাসে ৩৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এ মামলায় অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয়েছে ৫৯৪ জনকে।
নথি থেকে জানা গেছে, এ মামলার ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন একজন। তিনি হলেন, রানা প্লাজা ভবনের মালিক সোহেল রানা। জামিনে আছেন ৩২ আসামি। পলাতক ছয়জন। মারা গেছেন দুই আসামি।
হত্যা মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন—রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, রানার বাবা আব্দুল খালেক, রানার মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিন) এ টি এম মাসুদ রেজা, প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসাইন, সাভার পৌরসভার মেয়র মো. রেফাতউল্লাহ, সাভার পৌরসভার সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, সাবেক উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, সাভার পৌরসভার সাবেক টাউন প্ল্যানার ফারজানা ইসলাম, লাইসেন্স পরিদর্শক মো. আব্দুল মোত্তালিব, পৌরসভার সাবেক সচিব মর্জিনা খান, সাবেক সচিব মো. আবুল বাশার, ফ্যান্টম এপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডের এমডি বজলুস সামাদ ও ইথার টেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান।
আদালতের সরকারি কোঁসুলি মিজানুর রহমান সজল বলেন, ‘শ্রমিকদের মৃত্যুসংক্রান্ত মামলা দীর্ঘদিন স্থগিত থাকায় বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে কত দিন লাগবে, সেটা বলা মুশকিল। তবে, যে গতিতে চলছে, তাতে আরও কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, রানা প্লাজা ধসে বিপুলসংখ্যক প্রাণহানি ছাড়াও গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন আরও ১ হাজার ১৬৯ জন শ্রমিক। এ ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে শ্রমিকদের মৃত্যুতে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে মামলাটি করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ইমারত নির্মাণ বিধিমালার মামলাটির তদন্ত শেষে সিআইডি সোহেল রানা ও তাঁর বাবা-মাসহ ১৮ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আসামিদের মধ্যে একমাত্র সোহেল রানা কারাগারে রয়েছেন। পাঁচ আসামি পলাতক, অন্যরা জামিনে আছেন। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন।
আদালতের অতিরিক্ত পিপি আনোয়ারুল কবির বাবুল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মামলায় অভিযোগ গঠনের পর আসামিপক্ষের মামলা বাতিলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী করা মামলাটি আসামি সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র রিফাতুল্লাহর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থগিত রয়েছে। ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হলে মামলার কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।’
অপরদিকে, ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে দুদক। রানা প্লাজা ধসের জন্য ছয়জন সরকারি কর্মকর্তাকে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি না পাওয়ার কারণে তিন বছর ঝুলে ছিল এই মামলা। সে সময় জনপ্রশাসন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুক্তি ছিল, যাঁরা বড় অপরাধ করেননি, তাঁদের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি দিতে পারবে না তারা। শেষ পর্যন্ত সরকারের অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।