বাণিজ্য ডেস্ক:
ভারতের রফতানি নিষেধাজ্ঞার খবরে হঠাৎ করেই দেশের বাজারে বেড়ে গিয়েছিল পেঁয়াজের দাম। টানা তিনদিন বাড়ার পর রোববার (১০ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে কমতে শুরু করে পেঁয়াজের দর। বিক্রেতারা জানান, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি ক্রেতা না থাকায় কমছে দাম।
অস্থির পেঁয়াজের বাজারে মিলছে স্বস্তির খবর। হঠাৎ করে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। তবু মিলছে না ক্রেতা।
বিক্রেতাদের দাবি, রাজধানীতে পেঁয়াজের বাজারে ধস নেমেছে। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় একদিনে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম কমেছে ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। তারপরও ক্রেতা মিলছে না বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) কারওয়ানবাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে তেমন একটা কেনাবেচা হচ্ছে না। পেঁয়াজের দাম যে হারে বেড়েছে, সেই হারে দাম হু হু করে কমেও যাচ্ছে। ফলে যারা বেশি দামে কিনে ফেলেছেন, তারা এখন আর বেশি দামে বিক্রি করতে পারছেন না। তাই ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। ক্রেতাশূন্য বাজারে লোকসানের হিসাব মেলাতে ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা।
এক পাইকারি বিক্রেতা বলেন, সোমবার (১১ ডিসেম্বর) যে মানের দেশি পেঁয়াজের প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায়, সেই পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় নামার পরও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।
আবহাওয়া ঠিক থাকলে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বাজারগুলোতে পেঁয়াজের কেজি ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় নামবে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছেন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা। কারণ সোমবার যে মানের এক মণ পেঁয়াজ মোকামে বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ টাকায়, মঙ্গলবার তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকায়।
এক বিক্রেতা বলেন, ‘বাজারে কেনাবেচা নেই। ক্রেতাশূন্য বাজার। ফলে দাম ব্যাপকভাবে পড়ে যাচ্ছে। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে। গতকাল যেমনটা বিক্রি হয়েছে, আজ তেমন একটা বিক্রি হয়নি। আজ প্রতি কেজি ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করছি।’
আরেক বিক্রেতা বলেন, আগামীকাল দাম আরও পড়ে যাবে। দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকায় নামবে। কারণ আজ মোকামে যে পেঁয়াজ কেনা হচ্ছে, তা কাল বাজারে চলে আসবে। পেঁয়াজ আজ মোকামে ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে কেনা হচ্ছে। একই মানের পেঁয়াজ গতকাল কেনা হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে।
এদিকে বাজারে বাড়ছে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ। এ বিষয়ে পেঁয়াজ বিক্রেতারা জানান, আবহাওয়া ও পরিবহন স্বাভাবিক থাকলে বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ আরও বাড়বে। এতে পেঁয়াজের দাম আরও কমবে। বাড়ার কোনো কারণ নেই। এখন আমদানি না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই; কারণ দেশি পেঁয়াজের মৌসুম। ফলে দাম কমবেই।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত দুই অর্থবছরের পুরো ১২ মাস ধরে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, এবার গত সাড়ে ৫ মাসেই আমদানি হয়েছে প্রায় সেই পরিমাণ। এ অবস্থায় আমদানি বন্ধ করলেও দেশের বাজারে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানাচ্ছেন আমদানিকারকরা।
এর আগে ৭ ডিসেম্বর অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিত্যপণ্যটির রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। এই নির্দেশনা ৮ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। এর পরেই রাতারাতি বাড়তে বাড়তে প্রতি কেজি ২৫০ টাকার ওপরে উঠে যায় পেঁয়াজের দাম।