হোম আন্তর্জাতিক রাজা চার্লস: রাজপরিবারের প্রথম গ্রাজুয়েট থেকে সিংহাসনে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রথম গ্র্যাজুয়েট তিনি। যোগ দিয়েছিলেন নৌবাহিনীতেও। অবশেষে ব্রিটেনের সিংহাসনে মায়ের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন রাজা তৃতীয় চার্লস। তবে জীবনজুড়ে চরাই-উৎরাইও কম ছিল না। বিচ্ছেদের পর প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু ঘিরে তোপের মুখে ভিলেনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় তাকে। তবে সব ছাপিয়ে জলবায়ু নিয়ে কাজের জন্য প্রশংসাও কুড়িয়েছেন।

আনুষ্ঠানিক রাজ্যাভিষেকের জন্য সবচেয়ে বেশি সময় অপেক্ষার পর ব্রিটেনের নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের সিংহাসনে আরোহণ। বিশ্বজুড়ে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন আধুনিক যুগের ব্রিটিশ রাজা। ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের বাকিংহাম প্যালেসে জন্মগ্রহণ করেন চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ। দাদা রাজা ষষ্ঠ জর্জ ১৯৫২ সালে মারা যাওয়ার পর মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বসেন মসনদে। তখন থেকেই পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে নির্ধারণ হয় প্রিন্স চার্লসের নাম। মাত্র ৯ বছর বয়সেই চার্লসকে ‘প্রিন্স অব ওয়েলস’ ঘোষণা করা হয়।

স্কুলজীবনে স্কটিশ বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হলেও মন বসেনি সেখানে। স্কুলে কাটানো সময়কে রীতিমতো বন্দিশিবিরের সঙ্গে তুলনা করতেন তিনি। রাজপরিবারের নিয়ম-নীতি পেরিয়ে ১৯৭০ সালে শেষ করেন গ্র্যাজুয়েশন। অবাক হলেও সত্য, চার্লসই ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া গ্র্যাজুয়েট। এরপর হঠাৎ করেই ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে যোগ দেন সাবেক প্রিন্স চার্লস।

আর এ সময়ের মধ্যেই প্রেমিকা ক্যামিলার অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেলে মর্মাহত হন তিনি। অবসরের পর নৌবাহিনী থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন দাতব্য সংস্থা ‘প্রিন্স ট্রাস্ট’। এতে অবশ্য ব্যাপক প্রশংসাও কুড়িয়েছিলেন তিনি।

তবে কয়েক বছর পর প্রেমিক হিসেবে সুখ্যাতি থাকা চার্লসের দেখা হয় ডায়না স্পিনসারের সঙ্গে। ১৯৮১ সালে লন্ডনের সেন্ট পল ক্যাথেড্রালে জমকালো আয়োজনে সম্পন্ন হয় চার্লস-ডায়নার রূপকথার এক রাজকীয় বিয়ে। পরের বছর এ দম্পতির প্রথম ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম ও ১৯৮৪ সালে দ্বিতীয় সন্তান প্রিন্স হ্যারির জন্ম হয়। একপর্যায়ে রাজকীয় দায়িত্বের চাপ বাড়তে থাকায় চিড় ধরে দুজনের সম্পর্কে। রাজপরিবারের চৌকাঠ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসে তাদের বিচ্ছেদের খবর।

তবে বিচ্ছেদের পর মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় ফ্রান্সের প্যারিসে ১৯৯৭ সালে প্রিন্সেস ডায়নার মৃত্যু ঘিরে তোপের মুখে পড়েন চার্লস। তার ভূমিকা নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। তবে পূর্ণ রাজকীয় মর্যাদায় ডায়ানার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তিনি। ২০০৫ সালে সেই পুরানো প্রেমিকার সঙ্গেই বাগদান সারেন চার্লস। এতে রীতিমতো গোটা ব্রিটেন ক্ষিপ্ত হয় তার ওপর।

সব ছাপিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চার্লসকে পরিবেশ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। সর্বপ্রথম ১৯৬৮ সালে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব নিয়ে সোচ্চার হন। ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অন্যতম সমর্থক ছিলেন তিনি। ২০২১ সালের নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ-২৬ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সমাধান বের করতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করার জন্য দেশগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন রাজা তৃতীয় চার্লস।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন