হাসপাতালের পার্কিংয়ে থাকা ১৫ গাড়ি ও ১৬ মোটরসাইকেলে আগুন
আগুন পুড়ে ছাই হয়েছে পাশের ফুলগাছও
জাতীয় ডেস্ক:
রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পূর্ব পাশে ২ নম্বর গেটের কাছে শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ফুলগাছ পরিচর্যা করছিলেন হাসপাতালের এক মালি রফিক (ছদ্মনাম)। হঠাৎ হাসপাতালের দক্ষিণ পাশে নাম ফলক আর দরজায় ইটপাটকেলের আঘাতে কাঁচ ভাঙার শব্দে ভয় পান তিনি। রফিক বলেন, কিছুক্ষণ পরই ২ নম্বর গেট ভেঙে ২০-২৫ জন লোক ভেতরে আসেন। তারপর তাণ্ডব শুরু করেন। এই অবস্থা দেখে আমি দৌঁড়ে মোটর বন্ধ করে মেডিসিন ভবনে উঠে যায়।
রোববার এভাবেই সমকালের কাছে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে বিএনপি নেতাকর্মীদের তাণ্ডবের বর্ণনা দেন ওই মালি।
প্রত্যক্ষদর্শী মালি বলেন, ‘রাজারবাগে আমরা ৪-৫ জন মালি কাজ করি। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস ডিউটি। শনিবারও সকাল থেকে ফুলগাছে পরিচর্যা করছিলাম। বাইরের সমাবেশে কোনো খেয়াল ছিল না। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে হাসপাতালের নাম ফলকের গ্লাস ভাঙার শব্দে চমকে উঠি। তাকিয়ে দেখি একদল লোক প্রশাসনিক ভবনের ২ নম্বর গেটের সামনে বিএনপির পক্ষে স্লোগান দিয়ে ভেতরে আসার চেষ্টা করছেন। এর একটু পরেই আরেক দল স্লোগান দিতে দিতে এসে রাজারবাগ হাসপাতালের ২ নম্বর গেট ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেলে। এরপর হুড়মুড় করে ভেতরে প্রবেশ করে অর্তকিত হামলা চালায়। এ সময় প্রশাসনিক ভবনে তেমন কেউ ছিলেন না। পরে হামলাকারীরা ইচ্ছা মতো ভাঙচুর ও পার্কিংয়ে থাকা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এসব দেখে আমি ভয়ে দৌঁড়ে মেডিসিন ভবনের মধ্যে চলে যায়।’
ওই মালি বলেন, ‘তাদের অগ্নিকাণ্ডে আমার কষ্ট করে লাগানো গাছগুলোও আগুনে ভস্মিভূত হয়ে গেছে। আজ সকালে কাজে এসে গাছগুলো দেখে কান্না চলে আসছে। আবার নতুন করে এই গাছ লাগাতে হবে।’
রোববার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজারবাগ হাসপাতালে ৩ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই ডান পাশে বিভিন্ন মডেলের ছয়টি মোটরসাইকেলের পোড়া অংশ পড়ে আছে। এ ছাড়া ২ নম্বর গেটের ডান পাশে আরও আটটি মোটরসাইকেল ও একটি বাইসাইকেল আধপোড়া হয়ে পড়ে আছে। এর পাশেই পাজেরো ভি-৯৬ (দাম ১.২০ কোটি টাকা) মডেলের জিপ পুড়ে ছাই হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এরপর একটি নিশান প্রেটোল জিপ (দাম ২.৫-৩ কোটি টাকা) এবং পাজেরো ভি-৯৬ (দাম ১.১২ কোটি টাকা) মডেলের জিপ ভাঙচুর ও আধপোড়া অবস্থায় পড়ে আছে।
এ ছাড়া, ৩ নম্বর গেটে ছয়টি, ২ নম্বর গেটে আটটি মোটরসাইকেল ও একটি বাইসাইকেল ভস্মীভূত হয়ে পড়ে আছে। পাশেই একটি পাজেরো জিপের ভেতরের অংশে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বাইরে পুড়েছে কম। এর পাশে দুটি অন্য গাড়ির সামনের ও দুই পাশের গ্লাস ভাঙা অবস্থায় দেখা যায়। তবে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলামের দাবি, শনিবার দুটি অ্যামবুলেন্সসহ ১৫টি জিপ-মাইক্রবাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৬টি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
ডিএমপি দাবি করেছে, শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় পুলিশ হাসপাতালের পার্কিং এলাকায় তিনটি অ্যামবুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া একই স্থানে তিনটি জিপ, একটি আইসিইউ অ্যামবুলেন্সসহ ৯টি গাড়ি ও ১৬টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। একই সময় হাসপাতালের বাইরে রাখা পুলিশের সাতটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।
এ ছাড়া ওই গেটের বাম পাশে দুটি অ্যাম্বুলেন্স ভস্মীভূত হয়েছে। এর মধ্যে একটি টয়োটা হায়েস আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স (দাম ১.২০ কোটি টাকা)। এটি বাংলাদেশ পুলিশে একটিই ছিল। এ ছাড়া ডাক্তারদের পরিবহনের জন্য ১৪ সিটের টয়োটা মাইক্রবাস সাধারণ অ্যামবুলেন্স (দাম ৩৭ লাখ টাকা) পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আর পোড়া মোটরসাইকেলগুলোও সচল করা সম্বব হবে না।
অপরদিকে হাসপাতালের তিন তলা প্রশাসনিক ভবনজুড়ে তাণ্ডবের চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে ফুটে আছে। সেখানে দেখা যায়, ওই ভবনের প্রধান গ্লাসের দরজা ভেঙে ফেলা হয়েছে। পুরো এলাকায় কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দরজার ওপরে লাগানো সিসি ক্যামেরাও ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রশাসনের বাম পাশের কনফারেন্স রুমের গ্লাসসহ বিভিন্ন রুমের গ্লাস ভেঙে পড়ে আছে। এরপর ডিউটি পোস্টেও তাণ্ডবের ছাপ রয়েছে।
এদিকে রোববার সকাল থেকে হাসপাতালের দুই নম্বর গেটে নিরাপত্তা জোরদার করেছে কর্তৃপক্ষ। সেখানে পুলিশের ৩-৪ জনের একটি টিম নিরাপত্তার দায়িত্বে কাজ করছে। সকাল ১১টার দিকে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে আসে। তারা পুরো ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছে। এছাড়া গাড়ির নম্বর প্লেট নিয়ে গাড়ির মালিককে খোঁজ করা হচ্ছে। তারা বিকেল তিনটা পর্যন্ত আলামত সংগ্রহ করে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ছাড়া অন্য কার গাড়ি রাখা ছিল সেটাও খোঁজ করা হচ্ছে। কেন সেখানে গাড়ি রাখা হয়, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে।
রাজারবাগ হাসপাতালের ভেতরে বিএনপি নেতাকর্মীদের তাণ্ডবের বিষয়ে জানতে চাইলে, হাসপাতালের কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি। এ বিষয়ে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীর মন্তব্যও পাওয়া যায়নি।