হোম জাতীয় রমজানে চাহিদা কমায় ডিমের দরপতন, ক্ষতির মুখে পোলট্রি খামারিরা

রমজানে চাহিদা কমায় ডিমের দরপতন, ক্ষতির মুখে পোলট্রি খামারিরা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 9 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:
এবারের রমজানে ডিমের দাম কমায় ভোক্তারা খুশি হলেও বিভিন্ন পর্যায়ের পোলট্রি খামারিরা বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন। ১০ টাকা ব্যয়ে উৎপাদিত প্রতিটি ডিম খামারিরা ব্যবসায়ীদের কাছে আট টাকা (কখনো তার চেয়ে কম) দরে বিক্রি করছেন। ফলে ডিমপ্রতি দুই টাকা করে লোকসান গুনছেন। আবার বিভিন্ন হাত বদলে দোকানিরা সে ডিম আবার ১০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি দরে বিক্রি করছেন।

বাজারের সাম্প্রতিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত কয়েক মাস আগে অর্থাৎ গত বছরের (২০২৪) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসেও বাজারে ডিমের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ঘাটতি ছিল। এছাড়া ঐ সময় দেশের বিভিন্ন এলাকা বন্যায় অনেক ডিমের খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ফলে ডিমের উৎপাদন ও সরবরাহে ভাটা পড়ে। তখন প্রান্তিক খামারিরা ১২ টাকা বা তার চেয়ে বেশি দরে ডিম বিক্রি করেছিলেন।

রাজধানীর নিকটবর্তী পোলট্রি খামার পূর্ণ জেলা নরসিংদীর লেয়ার খামারিদের মতে, বর্তমানে প্রতি ডিমের উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে ন্যূনতম ১০ টাকা। রমজানের কারণে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় খামার থেকে আট টাকার বেশি দরে ডিম বিক্রয় হচ্ছে না। উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে খামারিরা বলেছেন, গত কয়েক মাস আগে যখন ডিমের বাজার চড়া ছিল তখন লাভের আশায় অনেক উদ্যোক্তা তাদের খামার সম্প্রসারণ করেছেন। আগে বন্ধ থাকা খামারগুলোও ফের চালু করা হয়েছে। ফলে ডিমের উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু চাহিদা কম থাকায় ডিমের দরপতন ঘটেছে বলে খামারিরা মত ব্যক্ত করেছেন।

অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বরাবরই রমজান মাসে ডিমের চাহিদা কম থাকে। কারণ হিসেবে তারা জানান, ঐতিহ্যগতভাবেই ইফতারে ডিম খাওয়ার প্রচলন নেই। তার ওপর অস্বাভাবিক হারে মূল্যস্ফীতি ঘটায় অনেকে ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছেন। এতে করে ডিমসহ অনেক নিত্য ভোগ্যপণ্যের চাহিদায় টান পড়েছে। ফলে চাহিদা কমার প্রভাব পড়েছে দামে।

খামারি ও ব্যবসায়ীরা শীতকালে ডিমের চাহিদা কমারও একটি যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তারা বলছেন, শীত মৌসুমে বাজারে হরেক রকম শাকসবজির সরবরাহ বেশি ও সহজলভ্য থাকে। যা খাবারের সঙ্গে ডিমের বিকল্প হয়ে ওঠে। তখনো ডিমের চাহিদা কমে যায়।

সম্প্রতি নরসিংদী জেলার শিবপুর থানাধীন কমরাব বাজার এলাকায় পোলট্রি খাতের তরুণ উদ্যোক্তা শাহ আলমের সঙ্গে কথা হয় ইত্তেফাক প্রতিনিধির। ১২ হাজার লেয়ার মুরগির খামার থেকে তিনি ৮ টাকা ৫ পয়সায় ডিম বিক্রি করেছেন।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি আরো জানান, খাদ্য, ওষুধ, বিদ্যুৎ, শ্রম এবং বিনিয়োগের হিসেবে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৩০ পয়সা। তিনি বলেন, ‘গত দুই মৌসুমে আমরা মুনাফা পেয়েছি। তা দেখে অনেক খামারি নতুন করে লেয়ার ফার্ম শুরু করেছেন। আবার ভালো লাভের আশায় কেউ কেউ খামারের পরিধি ও বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। আমার মনে হয়ে উৎপাদন বাড়লে দাম কমে যায়, বিশেষ করে যখন চাহিদা কমে যায়। ডিমের দাম এরকম অব্যাহত থাকলে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাবে বলেও তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।

বর্তমানে পোলট্রি পণ্যের কম দাম সম্পর্কে কাজী ফার্মস লিমিটেডের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান ইত্তেফাককে বলেন, রমজান মাসে ভোক্তারা তাদের খাদ্য বাজেটের বেশির ভাগ ব্যয় করেন ইফতার বাবদ। যেখানে খেজুর, ছোলা, হালিম এবং জিলাপি প্রাধান্য পায়। এর ফলে মুরগির মাংস বা ডিমের মতো খাবারে বাজেট কম থাকে। সে কারণে রমজান মাসে মুরগি এবং ডিমের চাহিদা ও দাম কমে যায়। এ চিত্র প্রতি রমজানে ফিরে আসে।

তার মতে, ঈদের ছুটির প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে বাজারে মুরগির চাহিদা বেড়ে যায়। কারণ, ঈদ ও ঈদের ছুটিতে মুরগির মাংসের চাহিদা বেড়ে যায়।

তাছাড়া ঐ সময় সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে ভাবনা থেকে ভোক্তারা এক সঙ্গে বেশি করে মুরগি কিনে রাখেন। ফলে বাজারে মুরগির দামও বেড়ে যায়। জাহিন হাসান আরো বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে ডিমের চাহিদা কমেছে। একই সঙ্গে অন্যান্য অনেক ভোগ্যপণ্যের চাহিদাও কমেছে।

নরসিংদী জেলার শিবপুরের কুন্দরপাড়ায় ৩ হাজার ৬০০ লেয়ার এবং ২ হাজার ব্রয়লারের খামারি ফারুখ মৃধা পোলট্রি ব্যবসায় নিজের লোকসান তুলে ধরে জানান, রমজান মাসে ডিম ও মুরগি উভয়ের চাহিদা কম থাকায় দামও কমে যায়। ‘আমি আগে যে লাভ করেছি তা দিয়ে এখানো টিকে আছি। কিন্তু খামার পর্যায়ে দ্রুত দাম না বাড়লে এ ব্যবসা চালিয়ে রাখা দুরূহ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।’

নরসিংদীর জেলা পর্যায়ে পোলট্রি খাতের পণ্য বিপণনে দেড় দশকের অভিজ্ঞ তৌহিদুজ্জামান বলেন, টানা গত দুই বছর ডিমের বাজারদর ভালো থাকায় বন্ধ খামারগুলো নতুন করে উৎপাদনে ফিরেছে। সেই সঙ্গে নতুন করে লেয়ার খামারে বিনিয়োগ করেছেন অনেকে। ফলে দেশের লেয়ার খামারের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি ডিমের উৎপাদন বেড়েছে। এবং কল্পনাতীত ভাবে দাম কমেছে।

খামারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, যখন বাজারে ডিমের দাম বেশি ছিল তখন এক শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা কৃত্রিমভাবে সিন্ডিকেট করে দর বৃদ্ধির অভিযোগ তুলেছিলেন। তবে, ঐ অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, ডিম উৎপাদন ও ব্যবসার সঙ্গে হাজার হাজার উৎপাদক ও ব্যবসায়ী সম্পৃক্ত। এ বাজারে দর নির্ভর করে চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে। যখন সরবরাহ চাহিদার চেয়ে বেশি থাকে তখন দাম কম হবে আবার যখন চাহিদা সরবরাহের চেয়ে বেশি হবে তখন দামও বেশি হবে। তবে পোলট্রি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দামের পরিবর্তনের বিষয়টি চাহিদা ও সবরাহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন