হোম আন্তর্জাতিক যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের যৌথ ঘাঁটিতে ইরানের হামলা

যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের যৌথ ঘাঁটিতে ইরানের হামলা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 28 ভিউজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তেল আবিবের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি গোপন ইসরায়েলি-মার্কিন সামরিক কমান্ড সেন্টার সরাসরি আঘাতপ্রাপ্ত হয় গত ১৩ জুন।

অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গ্রেজোন’ জানায়, তেল আবিবের বিলাসবহুল ‘দা ভিঞ্চি টাওয়ার্স’ কমপ্লেক্সের নিচে নির্মিত এই ঘাঁটি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে পরিচালনা করত। ‘সাইট ৮১’ নামে পরিচিত এই স্থাপনাটি ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যার নকশা ও নির্মাণ তত্ত্বাবধান করেছিল মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ এক দশক আগে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরপরই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তেল আবিবের উত্তরাঞ্চলের আঘাতপ্রাপ্ত এলাকা সিল করে দেয় এবং সাংবাদিকদের ছবি তুলতে বাধা দেয়। এমনকি ফক্স নিউজের সাংবাদিক ট্রে ইয়ংস্টসহ একাধিক সাংবাদিককে হাকিরিয়া কমপ্লেক্স ও আজরিলি সেন্টার এলাকার কাছ থেকে জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া হয়।

কয়েক ঘণ্টা পর ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ঘোষণা করে, এটি ইসরায়েলি হামলার ‘প্রতিশোধমূলক অভিযানের’ অংশ ছিল এবং সামরিক ও গোয়েন্দা স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। গুগল ও ইয়ানডেক্স ম্যাপের স্যাটেলাইট চিত্রে ওই স্থানটি ঝাপসা দেখা যায় এবং স্ট্রিট-ভিউ অ্যাক্সেস বন্ধ, যা তেল আবিবে চলমান সামরিক সেন্সরশিপের ইঙ্গিত দেয়।

‘দ্য গ্রেজোন’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দা ভিঞ্চি কমপ্লেক্সটি ২০১৩ সালের মার্কিন আর্মি কর্পস অব ইঞ্জিনিয়ার্সের একটি প্রকল্পের অংশ ছিল, যার মাধ্যমে ‘সাইট ৮১’-কে প্রায় ৬ হাজার বর্গমিটার আয়তনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সিল্ড গোয়েন্দা বাঙ্কারে রূপান্তর করা হয়। ভূ-অবস্থান বিশ্লেষণ, ফাঁস হওয়া ইমেইল এবং পাবলিক রেকর্ডের সমন্বয়ে এই স্থাপনাটির অবস্থান নিশ্চিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই সামরিক বাঙ্কারটি একটি শিশুদের খেলার মাঠ ও কমিউনিটি সেন্টার থেকে ১০০ মিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত—যা আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ তৈরি করেছে। সমালোচকদের দাবি, ইসরায়েল ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এমন সংবেদনশীল সামরিক স্থাপনা বসিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, যে অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে তারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে তুলে এসেছে।

দ্য গ্রেজোন আরও জানায়, সাবেক ন্যাটো কমান্ডার জেমস স্ট্যাভ্রিডিস এবং ইসরায়েলের সাবেক সামরিক প্রধান গাবি আশকেনাজির মধ্যে ফাঁস হওয়া একাধিক চিঠিপত্রে ‘সাইট ৮১’-এর সামরিক গুরুত্ব স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। ২০১৫ সালের এক চিঠিতে স্ট্যাভ্রিডিস উল্লেখ করেন, মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থিঙ্কলজিক্যাল ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (IDF) সঙ্গে ‘সাইট ৮১’-এ বড় একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছে।

তেল আবিবের এই দা ভিঞ্চি কমপ্লেক্সে ইসরায়েলি-মার্কিন বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীগুলোর অর্থায়ন রয়েছে, যাদের অনেকেই ইসরায়েলি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চেক পয়েন্ট টেকনোলজিস ও এআই২১ ল্যাবস, যার শেষোক্ত প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা ইউনিট ‘৮২০০’-এর সাবেক সদস্যরা।

ফ্রান্স টয়েন্টিফোরের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, হামলার পর ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো সেন্সরশিপের আওতায় আসে। ‘হারেৎজ’ পত্রিকায় দা ভিঞ্চি কমপ্লেক্সের ছবি প্রকাশ পেলেও আঘাতের খবরটি প্রায় দুই সপ্তাহ দেরিতে প্রকাশ করা হয়, যা হামলার গুরুত্ব আড়াল করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সূত্র: মেহের নিউজ এজেন্সি

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন