হোম জাতীয় যানবাহনে অগ্নিসংযোগ প্রতিরোধ: মানা হচ্ছে না ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা

জাতীয় ডেস্ক:

হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকায়ও একের পরএক বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর হরতাল ও অবরোধকে ঘিরে যানবাহনে আগুন দেওয়া প্রতিরোধে পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের ১০ নির্দেশনা দিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। এসব নির্দেশনার কোনোটিই মানছেন না পরিবহন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এসব নির্দেশনা মানার ক্ষেত্রে পুলিশেরও তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

গত ১৩ নভেম্বর ডিএমপি কমিশনার ১০টি নির্দেশনা দেন। উল্লেখ্য, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ১০৮টি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

পুলিশ জানায়, ঢাকায় আগুন দেওয়া অধিকাংশ বাসই পার্ক করা অবস্থায় ছিল। এ কারণে রাতে এলোমেলোভাবে বাস পার্ক না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি উন্মুক্ত স্থানে একাধিক বাস রাখলে নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়। এ ছাড়া রাতে বাসে পরিবহনশ্রমিক কেউ যাতে না ঘুমান, সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সরেজমিন ঘুরে এবং পুলিশ ও পরিবহন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ এই তিন নির্দেশনার কোনোটিই মানা হচ্ছে না।

গত রোববার রাত ১১টার দিকে মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনালের বাইরে মূল সড়কে যত্রতত্রভাবে বাস পার্ক করে রাখা হয়েছে। মহাখালী আইসিডিডিআরবি থেকে শুরু করে তিব্বত মোড় পর্যন্ত মূল সড়কের উভয় পাশে একাধিক সারি করে বাস পার্ক করে রাখা হয়েছে। বাস রাখার কারণে মূল সড়কই সরু হয়ে গেছে। এসব বাসে পরিবহনশ্রমিকদের ঘুমাতেও দেখা গেছে। বাসগুলোর নিরাপত্তায় নিজস্ব কোনো ব্যবস্থাই চোখে পড়েনি। সে সময় ওই সড়কে যানবাহন চলাচল অনেক কম ছিল। কিন্তু যত্রতত্র বাস পার্ক করার কারণে ওই সড়কে যানজটও তৈরি হয়। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকেও একই পরিস্থিতি ছিল মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকায়।

সোনার মদিনা পরিবহনের একটি বাসের চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন মো. মাছুম। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হরতাল ও অবরোধে সড়কে গাড়ি কম চলে। এ কারণে অধিকাংশ বাস পার্ক করে রাখতে হয়। টার্মিনালের ভেতরে জায়গা না থাকায় রাস্তাতেই বাস রাখতে হয়। আর রাতে পরিবহনশ্রমিকদের ঘুমানোর কোনো ব্যবস্থা নেই টার্মিনালে। অগ্নিসংযোগের আশঙ্কা থাকলেও বাধ্য হয়েই শ্রমিকদের বাসে ঘুমাতে হয়। ওই চালক মো. মোশারফ হোসেনও প্রায় একই ধরনের কথা বললেন।

ট্রাফিক পুলিশের মহাখালী অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হরতাল ও অবরোধের কারণে খুব কমসংখ্যক আন্তজেলা পথের বাস টার্মিনাল ছেড়ে যাচ্ছে। এতে করে টার্মিনালে সব বাসের জায়গা হচ্ছে না। তিনি বলেন, রাত সাড়ে ১০টার পর ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি থাকে না। ফলে রাতে বাসে পরিবহনশ্রমিকেরা ঘুমাচ্ছেন কি না, সেটি নজরদারি তাঁরা করতে পারেন না।

ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় যাত্রী ও বাসের ছবি তুলে রাখা এবং নির্ধারিত স্থান ছাড়া (স্টপেজ) যাত্রী না ওঠানো বা না নামানোর বিষয়ে বলা হয়েছিল। পুলিশ বলছে, যাত্রীদের ছবি তোলার বিষয়ে যে নির্দেশনা, সেটি পরিবহন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পালন করার কথা। পাশাপাশি বিভিন্ন স্টপেজে যাত্রী ও বাসের ছবি তুলবে ট্রাফিক পুলিশ। আর নির্ধারিত স্টপেজে যাত্রী ওঠা-নামার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন পরিবহন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ট্রাফিক পুলিশ ও পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবহন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যাত্রীদের কোনো ছবি তুলছেন না। তবে কোনো কোনো স্টপেজে ট্রাফিক পুলিশ বাস ও যাত্রীদের ছবি তুলছে।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় কথা হয় আলিফ পরিবহনের (ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার থেকে গুলশান হয়ে ধানমন্ডিতে চলাচলরত বাস) চালক আনিছুর রহমানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীদের ছবি তোলার বিষয়ে তাঁকে কেউ নির্দেশনা দেয়নি। তিনি বিষয়টি জানেন না। আনিছুরের মতো একই কথা বলেন ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার থেকে গাবতলী রুটে চলাচলরত অছিম পরিবহনের চালক মো. শামীম।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মগবাজার মোড়ে বাস ও যাত্রীদের ছবি তুলছিলেন ট্রাফিক পুলিশের রমনা অঞ্চলের সার্জেন্ট হাদী আল সাঈদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সব বাসের ছবি তোলা সম্ভব হয় না। দিনে তিনি প্রায় ৪০টি বাসের ছবি তুলতে পারেন। ট্রাফিক রমনা অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্টে বাস ও যাত্রীদের ছবি তুলছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।

ডিএমপি কমিশনারের অন্যান্য নির্দেশনা যেমন বাসের দুটি দরজা থাকলে পেছনের দরজা অবশ্যই বন্ধ রাখা, বাসে সচেতনতামূলক স্টিকার লাগানো এবং চালক ও তাঁর সহকারী বাস রেখে একসঙ্গে খেতে বা বিশ্রামে না যাওয়া ও সহকারী ছাড়া চালককে একা গাড়ি চালাতে না দেওয়ার নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না বলে জানান পরিবহন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন