হোম খুলনাযশোর যশোর ৫ আসনে সম্ভাব্য ৬ প্রার্থীর নির্বাচনী প্রস্তুতি জোরদার

যশোর ৫ আসনে সম্ভাব্য ৬ প্রার্থীর নির্বাচনী প্রস্তুতি জোরদার

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 58 ভিউজ

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি:

যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে নিয়ে উৎসবমুখর এখন মনিরামপুর রাজনীতির মাঠ। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালি করা ছাড়াও সাধারণ জনগণের মন জয় করতে এবং কাছে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের অবস্থান জানান দিতে কর্মী ও সাধারণ জনগণকে কাছে টানতে তৎপরতা অব্যহত রেখেছেন। প্রতিদিন সভা-সেমিনার ছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে চলেছেন। অপর দিকে রাজনৈতিক নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ জনগণ ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আলোচনায় সরগরম করে তুলেছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ভোটারের কে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন এসব নিয়েও সাধারণ ভোটাররা এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ ও আলোচনায় ব্যস্ত। অভিশপ্ত ভবদহের কারনে মনিরামপুর এই উপজেলাবাসীর সমস্যা নিয়েই সকল রাজনৈতিক দলের নেতারা সারা বছর দেখভাল করলেও নির্বাচনকে সামনে নিয়ে এসব বিষয় প্রাধান্য পাচ্ছে। মূলত এ আসন থেকে আগামী নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য ৬ জন প্রার্থীকে মাঠে ময়দানে বেশি চোখে পড়ছে। এ আসনের সম্ভাব্য ৬ জনের মধ্যে মনিরামপর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শহীদ মোঃ ইকবাল হোসেন, যশোর জেলা জামায়াতে ইসলামের কর্ম পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক, জেলা বিএনপির সদস্য মোহাম্মাদ মুছা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মুফতি আব্দুর রশিদ, সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমান সেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ইফতেখার সেলিম অগ্নি ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আসাদুজ্জামান মিন্টু।
অ্যাড. শহীদ মোঃ ইকবাল হোসেন উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলেছেন দীর্ঘ বছর। ১৯৯০ সাল থেকে তিনি মনিরামপুর বিএনপির রাজনীতিতে এসে অল্প দিনেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের মন জয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করে ভালো অবস্থান সৃষ্টি করেন। তিনি দীর্ঘ দুই যুগের অধিক উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। এর আগে তিনি থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। এরমধ্যে দুইবার পৌর মেয়র নির্বাচিত হন। এছাড়াও মনিরামপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। অ্যাড. শহীদ মোঃ ইকবাল হোসেন ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। বর্তমানে তিনি মাঠ গোছাচ্ছেন আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে লড়বেন এমন প্রস্তুতি নিয়ে। প্রতিদিন সাংগঠনিক কার্যক্রম ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কাজেও সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে তাকে।
অ্যাড. গাজী এনামুল হক বর্তমানে যশোর জেলা জামায়াতে ইসলামের কর্ম পরিষদের সদস্য। তিনি দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সাংগঠনিক কার্যক্রম ছাড়াও প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে সভা-সেমিনার ও গণসংযোগ অব্যহত রেখেছেন। সংগঠনের অভ্যন্তরীন কোন লবিং গ্রæপিং না থাকায় দলের একক প্রার্থী হিসেবে উৎসবমুখর পরিবেশে সংগঠনের নেতাকর্মী নির্বাচনী কর্যক্রম অব্যহত রেখেছেন। নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরতে সাধারণ জনগণের মাঝে বিভিন্ন সামাজিক কাজেও অংশ নিচ্ছেন তারা। ২০১৪ সালের অ্যাড. গাজী এনামুল হক উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়াম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করে সম্মানজনক ভোট পান তিনি।
মোহাম্মদ মুছা মনিরামপুর আসন থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে বর্ষিয়ান নেতা তিনি। ১৯৭৮ সাল থেকে মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর ১৯৯০ সাল পর্যন্ত উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন তিনি। এরপর তিনি অ্যাড. শহীদ ইকবাল হোসেনের সাথে ভোট করে পরাজয় বরণ করে সভাপতি পদ হারান। এরই মাঝে ১৯৮৯ সালে তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বর্ষিয়ান এই নেতা বর্তমানে উপজেলা বিএনপিতে পদ পদবী না থাকলেও জেলা বিএনপির সদস্য হিসেবে রয়েছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে দলের হাইকমান্ডে যোগাযোগ অব্যহত রেখেছেন তিনি।
মুফতি আব্দুর রশিদ জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্বে রয়েছেন। বর্তমানে বিএনপি জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছেন তিনি। সাংগঠনিক কার্যক্রমও থেমে নেই তার। গত ৫জুলাই মনিরামপুর জেলা পরিষদ অডিটরিয়মে সংগঠনের এক সমাবেশে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম তাকে বিএনপি জোটের প্রার্থী ঘোষণা করে গেছেন। আর এ ঘোষণার পরেই সাধারণ জনগণের মধ্যে তিনিও আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছেন। সম্ভাব্য এই প্রার্থী মুফতি আব্দুর রশিদ দেশ বরেণ্য আলেম প্রয়াত মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস -এর ছেলে। মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস এ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে হুইপ ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
ইফতেখার সেলিম অগ্নি যশোর জেলার সাবেক ছাত্র নেতা ছিলেন। ১৯৯১-৯৬ সাল পর্যন্ত যশোর জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক ছাড়াও জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এরপর ১৯৯৯ সালে জেলা যুবদলের আহবায়কের পদ গ্রহন করার পর তুখোড় নেতা হিসেবে তিনি পরিচয় লাভ করেন। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে রয়েছেন তিনি। এ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন এমন প্রস্তুতি নিয়ে তিনিও জনগণের কাছে যাচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নিজের অবস্থানকে জানান দিতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। আসাদুজ্জামান মিন্টু বর্তমানে মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। মনিরামপুর উপজেলা ছাত্রদল ও যুবদলের নেতৃত্ব দিয়ে সম্প্রতি তরুণ এই নেতা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ার বাগিয়ে নিয়েছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে তিনি মনোনয়ন সংগ্রহ করবেন এমনটাই জানিয়েছেন।

যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের আগামী সংসদ নির্বাচন একটি তীব্র প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ লড়াইয়ে রূপ নিতে যাচ্ছে। ছয়জন সম্ভাব্য প্রার্থী ইতোমধ্যেই মাঠে সক্রিয়ভাবে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে কাজ শুরু করেছেন। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসবে, ততই নির্বাচনী উত্তাপ বাড়বে। তবে শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হবেন, তা নির্ভর করবে দলের মনোনয়ন, জনসম্পৃক্ততা এবং মাঠপর্যায়ের রাজনৈতিক কৌশলের ওপর।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন