হোম ফিচার যশোর ডিবি পুলিশের ওপর হামলা বাহিনীর প্রধান শাহ আলম ওরফে ইয়াবা শাহ আলম ধরা ছোয়ার বাইরে

যশোর অফিস :

যশোর শহরের মণিহার বাসস্ট্যান্ড সিটি কলেজের সামনে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাঁধা দেওয়ার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে হামলার মূল অভিযুক্ত মণিহার এলাকার ত্রাস কুখ্যাত অস্ত্র-মাদক ব্যবসায়ী শাহ আলম ওরফে ইয়াবা শাহ আলম রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য জখম হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুই কেজি গাঁজা, মোটর সাইকেল, বার্মিজ চাকু জব্দ করেছে।

এছাড়া ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে শ্রমিক নেতা হারুনার রশিদ ফুলু ও মিজানুর রহমানকে রাতেই স্বাক্ষী হওয়া এবং মুচলেকার বিনিময়ে ছাড়া পান বলে পুলিশ জানায়।

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে শহরের মণিহার বাসস্ট্যান্ড সিটি কলেজ গেট এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান চালায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অভিযানের নেতৃত্ব দেন এসআই আরিফুল ইসলাম, এসআই রইচ আহমেদ, এএসআই নির্মল কুমার ঘোষদের সমন্বয় একটা চৌকস টিম। অভিযানের সময় ডিবি পুলিশের ওপর হামলা চালায় শাহ আলমের নেতৃত্বে তার ছোট ভাই শাহীন ওরফে পিচ্চি বাবু। হামলার সময় ডিবি পুলিশ আহত হওয়ার ঘটনায় কোতয়ালি থানার পুলিশ গিয়ে অভিযানে যোগ দেয়। সেসময় ৬জনকে গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় পালিয়ে যায় শাহ আলম ওরফে ইয়াবা শাহ আলম, হুরাইয়া, কামরুলসহ আরো বেশ কয়েক জন হামলাকারী। এ ঘটনার পর রাতেই শ্রমিক নেতা হারুনার রশিদ ফুলসহ আরো একজন মুচলেকায় ছাড়া পান। পরে পুলিশ যশোর কোতয়ালি মডেল থানায় সরকারি কাজে বাঁধাদান ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা দায়ের করে।

মামলার আসামিরা হলেন শাহ আলমের বড় ভাই শাহজাহান মীর, আলামিন ওরফে সম্রাট হোসেন, হৃদয় হোসেন ওরফে লিমন এবং শাহিন ওরফে ছোট বাবু। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২ (দুই) কেজি গাঁজা, একটি মোটরসাইকেল, একটি বার্মিজ চাকু উদ্ধার করে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানার মামলা নং-১১৫ (০৮)২১, ধারা-মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ৩৬(১) এর১৯(ক) এবং কোতোয়ালি মডেল থানার মামলা নং- ১১৬(০৮)২১, ধারা- ১৪৩/৩৪১/৩৩২/৩৫৩/৩৪ পেনাল কোড।

কে এই শাহ আলম ওরফে ইয়াবা শাহ আলম?

শহরের মণিহার বাসস্ট্যান্ড বৌ বাজার এলাকার বাসিন্দা শহিদুল্লাহ। শহিদুল্লাহর চার ছেলে। তারা হলেন শাহজাহান, শাহ আলম, জামাল ও শাহীন ওরফে পিচ্চিু বাবু। শহিদুল্লাহর আদি বাড়ি জেলার মণিরামপুর উপজেলায়। অভাবের কারণে যশোর শহরে আশ্রয় নেন। সেসময় মণিহার বাসস্ট্যান্ড বেশ জমজমাট। শহরে এসে বিস্কুট কারখানায় চাকরি নেন শহিদুল্লাহসহ তার ছেলেরা। এরপর বেকারির চাকরি ছেড়ে দিয়ে মণিহার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চা দোকান দেন। সেই সাথে শহিদুল্লাহসহ তার ছেলে শাহজাহান, শাহ আলম ও জামালও চা দোকান দেন। শাহ আলমের চা দোকানটি শহীদ মিনারের সামনের গেটে।

শাহ আলমের উত্থান :

হঠাৎ করেই শাহ আলমের উত্থান ঘটেছে। তিন বছরের মধ্যে শাহ আলম কোটি পতি বনে গেছেন। চা দোকান থেকে রাতারাতি তিনতলা বিল্ডিং করেন শাহ আলম। শুধু তাই নয়, মণিহার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আবাসিক হোটেল রাজ মহল, পরিবহন কাউন্টার, যশোর বাস মালিক সমিতির নতুন বিল্ডিং এর পুরোটাই লিজ গ্রহণ। চোখের পলকেই এসব হওয়ার অনেকের মনে সন্দেহ হয়। কিন্তু কেউ কোন কথা বলতে সাহস পায় না শাহ আলমের বিরুদ্ধে।
মনিহার এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, শাহ আলমের মাথার ওপর রয়েছে এক অদুশ্য শক্তি। যে শক্তি পুরো মনিহার বাসস্ট্যান্ড এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে।

পুলিশের ওপর বারংবার হামলা :

যশোর পুলিশের ওপর বৃহস্পতিবার রাতেই নয়, বার বার হামলা চালিয়েছে শাহ আলম ও তার বাহিনী। যশোর সদর ফাঁড়ির এস আই শরিফুল একবার মাদক বিরোধী অভিযান চালালে সেবার এস আই শরিফুলের ওপর হামলা চালায় শাহ আলম বাহিনী। সেই সেসময়ও শাহ আলম ও তার ছোট ভাই শাহীন ওরফে পিচ্চি বাবু হামলা চালায়। এতে এস আই শরিফুল লাঞ্ছিত হন। শুধু তাই নয়, এর আগেও কয়েকবার শাহ আলম বাহিনী পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে।

টোকাই সিন্ডিকেট :

মনিহার বাসস্ট্যান্ড কেন্দ্রিক শাহ আলমের রয়েছে একটি টোকাই সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা মূলত চাঁদাবাজি ও টোল আদায় করে থাকে। মনিহার বাস স্ট্যান্ড এলাকায় যদি কোন কোন দোকান বসায়, তাহলে তাকে নিদিষ্ট পরিমান চাঁদা দিতে হয়। শাহ আলম দোকান বুঝে চাঁদা নির্ধারণ করে দেয়। এসব ভাসমান দোকান বসিয়ে ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা প্রত্যেক দিন চাঁদা দিতে হয় ব্যবসায়ীদের। এরপর টোকাইরা সেই চাঁদা আদায় করে থাকে। কেউ চাঁদা না দিলে তাকে মনিহার বাসস্ট্যান্ড থেকে সরে যেতে হয়। থাকতে হলে শাহ আলমকে চাঁদা দিতে হবে। মনে হয়, মনিহার বাসস্ট্যান্ডটি শাহ আলমের বাপের পৈতিক সম্পাদ।

যশোর বাস মালিক সমিতির মাঠ নিয়ন্ত্রণ :

যশোর বাস মালিক সমিতির মাঠ দখল করে রেখেছে শাহ আলম ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। বাস মালিক সমিতির মাঠে কেউ বাস কিম্বা কোন গাড়ী রাখলে গাড়ী প্রতি দুই থেকে তিনশত টাকা চাঁদা দিতে হয় শাহ আলমের বাহিনীকে। এই টাকা না দিলে কেউ বাস কিম্বা কোন গাড়ী রাখতে পারে না।

ছিনতাইকারী চক্র নিয়ন্ত্রণ :

শাহ আলমের নেতৃত্বে রয়েছে মনিহার, সিটি কলেজ পাড়া, কোল্ড স্টোর মোড়, নীলগঞ্জ, ঢাকা রোড এলাকায় ছিনতাইকারী চক্র। এই ছিনতাইকারী চক্রটি ছিনতাইয়ের জমা হয় শাহ আলমের কাছে। শাহ আলম হোটেল রাজ মহলে বসে তার ভাগবাটোয়ারা করে থাকে।

মাদক বিক্রি :

যশোরের আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন তালেব। তালেবের পর যশোরে এখন সব চেয়ে বড় মাদক স¤্রাট শাহ আলম। শাহ আলম তার হোটেল রাজ মহলে বসে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। এখানে সকল প্রকার মাদক পাওয়া যায়। ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজাসহ দেশি-বিদেশী সকল প্রকার মাদক পাওয়া যায় শাহ আলম ও তার সিন্ডিকেটের কাছ থেকে। শুধু তাই নয়, হোটেলে বসে সেবনও করা যায় নির্বিঘ্নে। করোনার সময়ে যশোরের মাদক সেবনকারীরা এই হোটেলে বসে আরামে মাদক সেবন করেছে। যা এখনো চলমান রয়েছে।

অস্ত্র-নারীর দেহ ব্যবসা :

শাহ আলমের রয়েছে নারীদের দেহ ব্যবসা। তার হোটেল রাজ মহলে এই দেহ ব্যবসা চলে। এছাড়া শহরের সুন্দরী ও আলোচিক দুই ডজন কলগার্ল রয়েছে শাহ আলমের কাছে। খদ্দের বুঝে কলগার্লদের খবর দেওয়া হয়। আবার অনেক সময় খদ্দেরদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শহরের মোল্লাপাড়া,
বারান্দিপাড়া, সিটি কলেজ পাড়া, নীলগঞ্জ, মুড়লি এলাকার সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের যোগান দেন এই শাহ আলম। তার হোটেলে বসে অস্ত্র কেনাবেচা হয়ে থাকে।

প্রভারশালীদের সাথে সম্পর্ক :

প্রভাবশালীদের সাথে শাহ আলমের রয়েছে দহরম-মহরম সম্পর্ক। প্রভাবশালীদের শাহ আলম বিভিন্নভাবে আত্মীয় বানিয়ে নিয়েছে। কেউ তার বেয়াই, কেউ শ্বশুর, কেউ বন্ধু, কেউ দোস্ত, কেউ ভাই, কেউ ভাইরা এভাবে সম্পর্ক করে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে শাহ আলম।

সুদের ব্যবসা :

শাহ আলমের রয়েছে জমজমাট সুদে ব্যবসা। মনিহার এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে অন্তত: ৫০ লাখ টাকা সুদে দেওয়া রয়েছে শাহ আলমের। চড়া সুদে টাকা লাগিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন শাহ আলম। অনেকে টাকা নিয়ে বাড়ি-ঘর বিক্রি করে শাহ আলমের টাকা পরিশোধ করেছে এমন নজিরও রয়েছে।

শাহ আলমের গ্রেফতার সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের এস আই আরিফুল ইসলাম বলেন, শাহ আলমের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তার ট্রেস পেলেই গ্রেফতার করা হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন