মনিরামপুর প্রতিনিধি:
যশোর-চুকনগর মেইন সড়কের ৫টি ব্রীজ-কালভার্টের পানি নিস্কাশনের মুখ ইটের দেয়াল তৈরি করে লোহার কপাট দিয়ে সুলতান মোড়ল নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির রানা মৎস্য খামার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মনিরামপুর উপজেলার টেপুর বিলে অপরিকল্পিতভাবে ১২শ বিঘা জমিতে এই মৎস্য খামার করার কারণে পাঁচ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রতিবছর জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে আসছে। বর্তমানে ব্রীজ-কালভার্টের মুখ বন্ধ থাকায় পানি বের হতে না পারায় এলাকার ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় প্রতিকার গত ২৩ ডিসেম্বর সোমবার সকালে এলাকার ভুক্তভোগিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে জানা গেছে, যশোর-চুকনগর সড়কের পশ্চিম পাশে মনিরামপুর উপজেলায় টেপুর বিল। এই বিলে উপজেলার হাসাডাঙ্গা গ্রামের সুলতান মোড়ল নামে এক ব্যক্তি প্রায় ১২শ বিঘা জমি নিয়ে রানা মৎস্য খামার করেছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ সুলতান মোড়ল মেইন সড়কের ৫টি ব্রীজ-কালভার্টের পানি নিস্কাশনের মুখ ইট দিয়ে গেথে লোহার কপাট দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে। যার কারনে শ্যামকুড় ইউনিয়নের আমিনপুর, শ্যামকুড়, চিনাটোলা, নাগোরঘোপ ও হাসাডাঙ্গা গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বাড়ি-ঘরে পানি বন্দি হয়ে পড়ে। বাড়ি-ঘর থেকে পানি শুকিয়ে গেলে মাঠের ফসলী জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বর্তমানে এলাকার ভুক্তভোগিরা বিল থেকে পানি নিষ্কাষণ করে চলতি বোরো মৌসুমের বীজতলা তৈরি করবেন। কিন্তু ব্রীজ-কালভার্ট গুলো মুখ বন্ধ থাকায় বিলের পানি নিস্কাশন হয়ে শাতেনতলা ব্রীজের খাল হয়ে হরিহর নদীতে পড়তে পারছে না। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে মৎস্য খামারের কারনে ওই সমস্ত এলাকার পানি বের হতে না পেরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয় জমির মালিক ও ভুক্তভোগিরা সোমবার জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও সেনা কর্মকর্তা বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগী আমিনপুর গ্রামের ফজলুর রহমান ও নাগোরঘোপ গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, মৎম্য খামারের কারনে ব্রীজের মুখ বন্ধ করার ফলে ৫টি গ্রামের পানি বের হতে পারে না। যার জন্য এলাকার বাড়ি-ঘর ও মাঠে জলাবদ্ধতা হয়ে আবাদী জমিতে ফসল হচ্ছে না। তারপর পানি নদীতে বের হওয়ার শাতেনতলা খালের ব্রীজের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে অন্য পাশ দিয়ে নদীতে পানি বের হয়ে যাওয়ারও কোনো পথ নেই। রানা মৎস্য ঘের করায় প্রতিবছর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে শীতকালেও জমিতে পানি থাকায় বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কায় আছি। নাগোরঘোপ এলাকার বাবু ও আলমগীর বলেন, এমনভাবে ঘের কেটেছে তাতে এলাকার পানি বের হওয়ার কোনো পথ নেই। তারপর ব্রীজের মুখ বন্ধের প্রতিবাদ করলে ঘের মালিক এক শ্রেণির মানুষ দিয়ে মামলা দেয়াসহ খুন-জখমের বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেওয়া হয়। অভিযুক্ত ঘের মালিক সুলতান মোড়ল বলেন, এলাকার জলাবদ্ধতার জন্য আমি একা দায়ী না, পাশে আরও অনেক ঘের রয়েছে। তাদের ঘেরের পর আমার ঘের। আর ব্রীজ-কালভার্টের মুখ বন্ধ করলেও পানি নিস্কাশনের কোন সমস্যা হচ্ছে না। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না বলেন, ব্রীজ-কালভার্টের মুখ বন্ধ করে এলাকা মানুষের জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে দেওয়া যাবে না। তাছাড়া কৃষি জমি ও মানুষের সম্পদ নষ্ট করে এ ধরনেণর মাছের ঘের কেউ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।