হোম খুলনাযশোর যশোরের অঞ্চলের দুঃখ ভবদহ: অভিশপ্ত এক অধ্যায় খরস্রোতা নদী এখন নালায় পরিণত

যশোরের অঞ্চলের দুঃখ ভবদহ: অভিশপ্ত এক অধ্যায় খরস্রোতা নদী এখন নালায় পরিণত

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 61 ভিউজ

রিপন হোসেন সাজু, মনিরামপুর (যশোর):

১৯৬১ সালে যশোরের অঞ্চলের মরণ ফাঁদ ভবদহ স্লুইস গেটের জন্ম। বছর বিশেক এর সুফল পাওয়া গেলেও আশির দশকে যশোরের মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর উপজেলা ও খুলনা জেলার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার মধ্যবর্তী ভবদহ এলাকার কৃষকরা জলাবদ্ধতার কারণে বিপর্যস্ত হতে থাকে। ১৯৮৮ সাল থেকে এই জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে। এই অঞ্চলে জলাবদ্ধতার মূল কারণে হচ্ছে ভবদহের ভাটিতে নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাওয়া। যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার ভবানিপুর গ্রামের ভবদহ নামকস্থানে শ্রী নদীর উপর ২১ ভেন্ট, ৯ ভেন্ট ও ৬ ভেন্টের নির্মিত স্লুইসগেট জায়ান্ট পাকিস্তান আমলের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ছিল।

১৯৬১ সালে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। তবে সময়ের ব্যবধানে ভবদহকে বর্তমানে ‘যশোরের দুঃখ’ বলা হচ্ছে। যশোর জেলার মনিরামপুর, কেশবপুর অভয়নগর ও সদর উপজেলা, খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার মুক্তেশ্বরী-টেকা-শ্রী-হরি ও আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা নদী দিয়ে বেষ্টিত। যশোর শহরসহ এ অঞ্চলে উল্লেখিত নদী সিস্টেম ও এর সাথে সংযুক্ত খালের মাধ্যমে ৫৩টি বিলের বৃষ্টির ও উজানের পানি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মণিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার বিলবোকড়, বিলকেদারিয়া ও বিল কপালিয়ায় জমা হয়ে ভবদহ স্লুইচগেট দিয়ে ভাটিতে নিঃষ্কাশিত হয়। মুক্তেশ্বরী-টেকা-শ্রী-হরি ও আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা নদী সিস্টেম দুটি কেশবপুর উপজেলার কাশিমপুরে মিলিত হয়েছে এবং মিলিত প্রবাহ ভদ্রা-তেলিগাতী-গ্যাংরাইল নামে শিবসা নদীতে পতিত হয়েছে। সমুদ্রের লোনা পানি প্রতিরোধে এবং কৃষিযোগ্য মিঠাপানি ধরে রাখার জন্য ষাটের দশকে হরি-টেকা-শ্রী নদীর অভয়নগর উপজেলার ভবদহ নামক স্থানে ২১ ভেন্ট স্লুইস নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে আশির দশক পর্যন্ত ভবদহ স্লুইসগেটের সুফল ভালভাবে পাওয়া যায়। সত্তরের দশকের পর হতে এই অঞ্চলে নদীগুলোর মূল উৎস্য প্রবাহ পদ্মা হতে বিছিন্ন হওয়ায় সাগর বাহিত পলি উজানের দিকের নদী ও খালের তলদেশে নিক্ষেপিত হতে থাকে। এ কারণে শুষ্ক মৌসুমে ভদ্রা তেলিগাতি নদীর মাধ্যমে সাগর হতে প্রচুর পলিমাটি বাহিত হয়ে হরি-টেকা-মুক্তেশ্বরী নদী ও আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা নদী ও এর সংযুক্ত খাল গুলোর তলদেশে নিক্ষেপিত হয়ে ভরাট হয়ে পড়ছে।

বছর চারেক আগেও ভবদহ সুইটগেট হতে শিবসা নদী হয়ে বড় বড় মাছ ধরা ট্রলার চলাচল করতে পারতো। কিন্তু অংশীজনদের আপত্তি সত্ত্বেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূল সিদ্ধান্তে ভবদহের স্লুইচ গেট বন্ধ করে সেখানে বিদ্যুৎ চালিত মোটর ব্যবহার করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে জোয়ারের সাথে আসা পলি নদীতেই থেকে যায় বলে দাবী ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয়দের। সরেজমিনে নদী এলাকা ঘুরে দেখা যায় ২১ ভেন্টের উপর ১৩ টি এবং ৯ ভেন্টের উপর ৫টি মোটরপাম্প বসানো আছে, সাথে আরো ৪ টি পাওয়ার পাম্প। আর দীর্ঘদিন খনন প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর মাটি নদীর ভেতরেই রাখা হয়েছে। ফলে নদী পরিণত হয়েছে খালে। ৯ গেটের সামনে দেখা যায় নদীর তলদেশ শুকিয়ে উঁচু হয়ে আছে, কোন প্রকারে নালা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কপালিয়া ব্রিজের কাছে দেখা যায় নদীর প্রস্থ ৫ থেকে ৬ ফুট। নদীর গভীরতা আছে ৩ থেকে ৪ ফুট। সাথে সাথে নদীর পাশে পলি জমে থাকা স্থান দখল করতে শুরু করেছে। অনেকেই নদীর ভিতরে জায়গা দখল করে মৎস্য ঘের তৈরি করে নিয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রনজিত বাওয়ালী বলেন, একজন রাজনীতিক ও আমলাদের ষড়যন্ত্রে, পানি উন্নয়ন বোর্ড এই জনপদকে জলাভুমিতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছে। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, টিআরএম ছাড়া বিকল্প কোন উপায়ে ভবদহের জলাবদ্ধতার সমাধান সম্ভব না। যত দ্রুত সম্ভব টিআরএম প্রকল্প চালুর মধ্য দিয়ে ভবদহে নদী আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন