মোংলা প্রতিনিধি:
জলবায়ু উষ্ণতা রোধে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াও। বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে গত বিশ বছরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি পরিবারের গড়ে ৪ লাখ ৬২ হাজার ৪৯১ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ০.৫ মিটার বাড়লে বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও কক্সবাজারের অনেক উপজেলায় প্রতি বছর ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ২৫ মিলিয়ন ডলারে যেয়ে দাড়াতে পারে। এমতাবস্থায় জলবায়ু ক্ষতি মোকাবেলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উন্নয়নশীল দেশগুলিকে প্রদান করতে হবে। ২৯ নভেম্বর বুধবার সকালে মোংলায় কলেজ মোড়ে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনকে ধরে মোংলা নাগরিক সমাজ, ক্লিন খুলনা ও বৈদেশিক দেনা কর্মজোট বিডাব্লিউজিইডি আয়োজিত রাস্তায় শুয়ে অভিনব কর্মসুচি পালনকালে বক্তারা একথা বলেন।
বুধবার সকাল ১১টায় রাস্তায় শুয়ে অবস্থান কর্মসুচি পালনকালে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মোংলা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক পরিবেশকর্মী মোঃ নূর আলম শেখ। এসময়ে বক্তব্য রাখেন জলবায়ু যোদ্ধা মো: হারুন গাজী, নারীনেত্রী কমলা সরকার, ফাতেমা জান্নাত, নাগরিক নেতা শেখ রাসেল, হাছিব সরদার প্রমূখ। এ সময়ে বক্তারা বলেন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩৫০ গ্রাম কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরন হয়। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ চীন। এই দেশটি বিশ্বের মোট কার্বনের ২৩.৪৩ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করছে। এরপরেই রয়েছে যুক্তরাস্ট্র প্রায় ১৫ শতাংশ, ভারত ৫.৭ শতাংশ। পরিসংখ্যন অনুযায়ি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ গড়ে ০.৫ মেট্রিক টন কার্বন-ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে থাকে। সেখানে আমেরিকার প্রতিটি মানুষ গড়ে নিঃসরণ করছে প্রায় ১৫.২ মেট্রিক টন কার্বন-ডাই অক্সাইড। বাংলাদেশের সাথে তুলনা করলে এটি প্রায় ৩০ গুনের বেশি।
বক্তরা আরো বলেন, গত ২০ বছরে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতি দুর্যোগ আঘাত হেনেছে ফিলিপাইনে, সংখ্যায় ৩২৮টি। এর পরেই রয়েছে বাংলাদেশ, ২২৮ টি দুর্যোগ আঘাত হেনেছে এখানে। তাই বিশ্ব জলবায়ু সমেম্মলনে বকবক না করে অতীতের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রাক শিল্প যুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়ানে সীমবাবদ্ধ রাখতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়তে থাকলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ৩,৪ বা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়ান বাড়বে। এই পরিস্থিতিতে ২০৫০ সালের মধ্যে ৩০ কোটি মানুষের বসবাসের এলাকা সমুদ্রে তলিয়ে যাবে।
সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক নেতা পরিবেশকর্মী মোঃ নূর আলম শেখ বলেন, সুন্দরবন উপকূলের ৭৩% পরিবার সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত। উপকূলীয় অঞ্চলে গত ৩৫ বছরে লবণাক্ততা পূর্বের তুলনায় ২৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারনে ফসল উৎপাদন কমে গেছে, গর্ভবতী নারীরা আক্রান্ত হচ্ছে এবং উপকূলীয় মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। তাই আমরা জলবায়ু ন্যায্যতা চাই। আমরা ঋণ চাই না, ক্ষতিপূরণ চাই। অবস্থান কর্মসুচিতে জলবায়ু যোদ্ধারা জলবায়ু ন্যায্যতা, জ্বালানি রূপান্তরসহ ক্ষতিপূরনের দাবি সংবলিত ব্যানার পোস্টার নিয়ে রাস্তায় শুয়ে ছিলো।