হোম অর্থ ও বাণিজ্য মৃত ব্যক্তির নামে ব্যাংক ঋণ, তদন্ত কমিটি গঠন

বাণিজ্য ডেস্ক:

কারো মৃত্যু হয়েছে স্বাধীনতার আগে। আবার কেউ কখনো ব্যাংকের ওই শাখাতেই যাননি। অথচ তাদের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে কৃষিঋণ নেয়া হয়েছে। ঋণ খেলাপি হওয়ায় তাদের নামে নোটিশ পাঠানো হলে হতভম্ব হন ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনরা। প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ জানালে টনক নড়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। তবে খুব শীঘ্রই তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

ঋণ পরিশোধ না করায় পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সূর্যমনি ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের ১২ জনের নামে ২০২০ সালে নোটিশ পাঠায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখা। নোটিশে টাকার অঙ্ক উল্লেখ করে তা নির্ধারিত তারিখের মধ্যে পরিশোধের জন্য বলা হয়। ব্যাংকের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৪ সালে এসব ঋণ প্রদান করা হয়েছে।

তবে নোটিশ প্রাপ্তদের মধ্যে কেতাব উদ্দিন হাওলাদারের তিন ছেলে জবেদ আলী, হযরত আলী ও রহম আলী। এরা তিন জনই মারা গেছেন স্বাধীনতার অনেক আগেই। জবেদ আলী ১৯৬০, হযরত আলী ১৯৬৫ ও রহম আলী ১৯৬৬ সালে মারা যান। অথচ ২০১৪ সালে জবেদ আলীর নামে ২৫ ও ৩০ হাজার টাকার দুটি, হযরত আলীর নামে ৪৫ হাজার ও রহম আলীর নামে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে।

আহম্মদ আলী হাওলাদারের ছেলে মো. জয়নাল হাওলাদার মারা যান ১৯৬৯ সালে। তার নামেও ৪০ হাজার টাকার কৃষিঋণ তোলা হয়েছে। এদের মৃত্যুর সময় ব্যাংকের শাখাই ছিল না। তবে তারা ঋণ নিলেন কীভাবে? তাদের নাম ব্যবহার করে কারা ঋণ তুলেছেন এমন প্রশ্ন ভাবিয়ে তুলেছে স্বজনদের।

আবদুল করিম মৃধা নামে এক ব্যক্তির নামে ৩৫ হাজার টাকার ঋণ উত্তোলন দেখানো হয়েছে। গ্রাম কালিকাপুর উল্লেখ করা হলেও তার বাবার নাম উল্লেখ করা হয়েছে রুস্তম আলী মৃধা। অথচ এ নামের কেউ কালিকাপুর গ্রামে নেই।

ভুক্তভোগী মো. মনির হোসেন, মো. বাবুল মৃধা এবং তার ছোট ভাই ফারুক মৃধা পরিবারসহ ঢাকায় থাকেন। তারা কখনই ব্যাংকের ওই শাখায় যাননি। অথচ তাদের নামে ঋণ পরিশোধের নোটিশ আসে। এরপর কয়েক দফায় ব্যাংকে গিয়ে যোগাযোগ করেছেন। সেখানে দেখেন, নাম-ঠিকানা ঠিক থাকলেও ছবি ও স্বাক্ষরে মিল নেই। এটিকে ‘লুটপাটের মহোৎসব’ উল্লেখ করে ব্যাপারটি দ্রুত সুরাহা করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

এদিকে, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক পটুয়াখালী কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আজিজুর রহমানকে প্রধান করে দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ হয়েছে।

কৃষি ব্যাংক কেশবপুর শাখা ব্যবস্থাপক হুসাইন মো. তাইফ আলম বলেন, ‘আমার কাছে বিষয়টি জানালে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। বর্তমানে বিষয়টি তদন্তাধীন।’

তবে খুব শীঘ্রই তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন কৃষি ব্যাংকের পটুয়াখালী আঞ্চলিক শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আজিজুর রহমান।

কৃষি ব্যাংকের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক এম নুরুল আমিন বলেন, ‘এরইমধ্যে আমাদের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সুষ্ঠু তদন্তে অর্থ লোপাটের বিষয়টি পরিষ্কার হবে এবং দুর্নীতিকারীরা শাস্তি পাবে এমন প্রত্যাশা সবার।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন