আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
চীন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দফতরের সিস্টেম হ্যাক করেছে বলে দাবি করেছে দেশটির অর্থ দফতরের কর্মকর্তার। কর্মচারীদের ওয়ার্কস্টেশন এবং কিছু নথিও অ্যাক্সেস করতে সক্ষম হয়েছে চীনা হ্যাকার।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি মাসের শুরুর দিকে এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে দাবি করেছে কর্মকর্তার। চীনা স্পন্সরড হ্যাকার কীভাবে এতো সুরক্ষিত দফতরের নথি হ্যাক করেছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ।
হ্যাক কাণ্ডের পর অর্থ দফতরের পক্ষ থেকে মার্কিন আইন প্রণেতাদের এরইমধ্যে একটি লিখিত চিঠি দেয়া হয়েছে। অর্থ দফতর এই হ্যাকের ঘটনাটিকে ‘গুরুতর সিকিউরিটি ব্রিচ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। এই ঘটনাটি তদন্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
আইনপ্রণেতাদের কাছে পাঠানো অর্থ দফতরের একটি চিঠি থেকে জানা যায়, বিয়ন্ড ট্রাস্ট নামে একটি তৃতীয় পক্ষের সাইবার সিকিউরিটি সেবাদানকারী সংস্থার মাধ্যমে এই হামলা চালানো হয়েছে। বিয়ন্ড ট্রাস্টের ব্যবহৃত একটি ‘সিস্টেম কি অ্যাকসেস’ হ্যাক করে তাদের সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করে সাইবার অপরাধীরা। এরপর সিস্টেমের মূল কার্যক্রমগুলো পাল্টে অর্থ দফতরের কয়েকজন কর্মকর্তার তথ্যের এক্সেস নেয় তারা।
অর্থ দফতরের মুখপাত্র বলেন, বিয়ন্ড ট্রাস্ট সিস্টেমের ওই অংশটির কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। অর্থ সিস্টেম বা তথ্যের এক্সেস এখনো হ্যাকারদের হাতে আছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এই সাইবার হামলা এমন সময় ঘটেছে যখন বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, চীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় হ্যাকাররা এই মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম তিনটি টেলিযোগাযোগ কোম্পানির সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করেছে। ‘সল্ট টাইফুন’ নামে পরিচিত এই হামলায় সাইবার অপরাধীরা আইনপ্রণেতাদের ফোন কল ও টেক্সট বার্তায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিল।
বিয়ন্ড ট্রাস্টের সতর্কবার্তা পাওয়ার পর সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সি (সিআইএসএ), ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এবং তৃতীয় পক্ষের ফরেনসিক তদন্তকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থ দফতর। ঘটনার আরও বিস্তারিত তথ্য ৩০ দিনের একটি সম্পূরক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
অর্থ দফতরের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা সিস্টেম ও সংরক্ষিত তথ্যের বিরুদ্ধে সব ধরনের হুমকিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি। গত চার বছরে আমাদের সাইবার প্রতিরক্ষা উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী হয়েছে এবং আমরা সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।’
অন্যদিকে বিয়ন্ড ট্রাস্ট তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, তাদের রিমোট সাপোর্ট সফটওয়্যারের একটি সমস্যার কারণে কিছু গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এতে একটি ডিজিটাল কি হারাতে হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলমান।
এ সাইবার হামলা প্রসঙ্গে সেনটিনেলওয়ান সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানির থ্রেট রিসার্চার টম হেগেল বলেন, এই হামলার সঙ্গে চীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় চালানো পূর্বের হামলাগুলোর প্যাটার্ন মিলে যায়। একই ধরনের হামলা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে। হ্যাকাররা তাদের দেশের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ পিআরসি (পিপল রিপাবলিক অব চায়না) কোড হিসেবে ব্যবহার করে।
তবে এই সাইবার হামলায় কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার দায় অস্বীকার করেছেন ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের ভিত্তিহীন অভিযোগের তীব্র বিরোধিতা জানাচ্ছে।