নিউজ ডেস্ক:
দেশের ৯ হাজার ৪৩৬টি মাদ্রাসায় গ্রামীণ ফোন লিমিটেডের করপোরেট মোবাইল নম্বর সরবরাহ করেছিল বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। এই সিম দিয়ে শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে অর্ধেকের বেশি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই নির্দেশনা মানছে না। আর সে কারণে নতুন নির্দেশনা দিয়ে গ্রামীণ ফোন লিমিটেডের করপোরেট মোবাইল নম্বর ব্যবহার মাদ্রাসাগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা জারি করেছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে দাখিল, আলিম ও কামিল মাদ্রাসাসহ দেশের ৯ হাজার ৪৩৬টি এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারী (ইআইআইএন) মাদ্রাসায় গ্রামীণ গ্রামীণ ফোন লিমিটেডের করপোরেট প্রি-পেইড মোবাইল নম্বর সরবরাহ করা হয়। তবে ৫ হাজার ১১৫টি মাদ্রাসা নম্বরগুলো নিয়মিত ব্যবহার করেনি।
কারণ হিসেবে মাদ্রাসাগুলোর সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত নম্বর আগে থেকেই রয়েছে। সেই নম্বর ব্যবহার করে সরকারি অফিসিয়াল যোগাযোগ এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়। আগের মোবাইল সেটে নতুন সরবরাহ করা সিম নিয়মিত চালু রাখলে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। সে কারণে গ্রামীণের করপোরেট নম্বর ব্যবহার করতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনাগ্রহ দেখা দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদ্রাসা প্রধান বলেন, “প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত নম্বরটি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় আগের নির্ধারিত নম্বর দিয়ে। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ নম্বর পরিবর্তন সমস্যা তৈরি করছে। তবে খুব দ্রুত মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা মেনে গ্রামীণের নম্বর নিয়মিত ব্যবহার শুরু করা হবে।”
শিক্ষা বোর্ডের সরবরাহ না করা ৫ হাজার ১১৫টি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে গ্রামীণ ফোনের করপোরেট নম্বরগুলো ব্যবহারে আবারও নির্দেশনা দিয়ে গত ২৯ জুলাই অফিস আদেশ জারি করেছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ছালেহ আহমাদ সই করা অফিস আদেশে গ্রামীণ ফোনের এ সংক্রান্ত একটি পত্রের উল্লেখ করা বলা হয়।
অফিস আদেশে বলা হয়, “মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারী (ইআইআইএন) ৯ হাজার ৪৩৬টি মাদ্রাসায় গ্রামীণ ফোন করপোরেট প্রি-পেইড মোবাইল নম্বর সরবরাহ করা হয়। মোবাইল নম্বর সরবরাহের মূল উদ্দেশ্যে বলা হয়, বোর্ডের সঙ্গে সকল অফিসিয়াল যোগাযোগ, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও প্রেরণ, বোর্ডের ওটিপি গ্রহণ এবং সব সরকারি অফিস থেকে মাদ্রাসা প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করা।”
অফিস আদেশে আরও বলা হয়, “দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে ৫ হাজার ১১৫টি মাদ্রাসা নিয়মিতভাবে এই মোবাইল নম্বরগুলো ব্যবহার হচ্ছে না, যার ফলে জরুরি সময়গুলোতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এমতাবস্থায় বোর্ড কর্তৃক সরবরাহ করা এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারী (ইআইআইএন) ভিত্তিক করপোরেট সিম (প্রি-পেইড) আবশ্যিকভাবে ব্যবহারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “করপোরেট সিমে সুবিধা বেশি, খরচ কম। বিভিন্ন অপারেটর হলে নেটওয়ার্ক সমস্য দেখা দেয়। এই কারণে করপোরেট সিম ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
সরকারের মালিকানাধীন টেলিটক থাকতে গ্রামীণ ফোনের করপোরেট সিম ব্যবহারের নির্দেশনা কেনো জানতে চাইলে অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক বলেন, “এই সিদ্ধান্ত তো আমি আসার (চেয়ারম্যান হয়ে) আগে থেকে।”
অফিস আদেশে স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজ্রিস্ট্রার অধ্যাপক ছালেহ আহমাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “গ্রামীণ ফোনের সঙ্গে একটি চুক্তি চুক্তি করা হয়েছিল। সে কারণে এই নির্দেশনা।”
সরকারি টেলিটক থাকতে গ্রামীণ ফোনের সঙ্গে চুক্তি কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটি আগে থেকে হয়ে আসছিল।”
এদিকে, ছালেহ আহমাদ’র সই করা অফিস আদেশে আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১০ম সভার কার্যবিবরণী উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সভার কার্যবিবরণী ওয়েবসাইটে প্রকাশ বা অফিস আদেশের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি।
