আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
এক নজিরবিহীন প্রতিবাদের সাক্ষী হলো সিটি অফ জয় খ্যাত কলকাতা। শহরের বুকে একদল চাকরিপ্রার্থী নারী-পুরুষ মাথা ন্যাড়া করে অভিনব প্রতিবাদ জানালেন।
প্রায় শতাধিক চাকরিপ্রার্থী সমবেত হয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করছেন ভারতের স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির পাদদেশে বসে।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে এমন অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচির খবর গণমাধ্যমে প্রচারের পরই রাজ্যজুড়ে তুমুল আলোচনার জন্ম হয়। যদিও বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি এখনও মেলেনি।
টিভিতে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী নারী মাথার চুল ন্যাড়া করে ফেলছেন। একই সঙ্গে চাকরিপ্রার্থী পুরুষরা জামা খুলে বসে সমস্বরে চাকরির দাবিতে স্লোগান তুলছেন।
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায় এই প্রতিবাদ চলছে গত ১ হাজার দিন ধরে। মূলত ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও চাকরি পাননি বলে অভিযোগ করে আসছেন এই আন্দোলনকারীরা।
শনিবার সকাল থেকে তারাই এই অভিনব প্রতিবাদে শামিল হন। এদিন প্রতিবাদের এক হাজার দিন পূর্ণ হয়। এক হাজারতম দিনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই এমন অভিনব প্রতিবাদ দেখানো হচ্ছে বলে দাবি আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের।
তারা বলছেন, অযোগ্যরা টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়ে গেছেন। কিন্তু আমরা সরকারিভাবে পরীক্ষা দেয়ার পর উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পাইনি। তাই এখন রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।
২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিবও ছিলেন তিনি। মূলত তার সময় শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে বছর তিনেক আগে।
বিষয়টি গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে। আদালতের নির্দেশে তদন্ত শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকারের তদন্তকারী সংস্থা। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এবং পরবর্তীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বিষয়টি নিয়ে আদালত ও রাজ্য সরকারের মধ্যে এখনও তুমুল আইনি লড়াই চলছে। এরই মধ্যে এই আন্দোলনকারীরা রাজপথে নেমে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের একজন শীর্ষ নেতা সৌগত রায় এই আন্দোলনটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, অনেক সময় আন্দোলনকারীরা আলোচনায় আসতে নাটকীয় অনেক কিছু করে থাকেন। তবে এর বেশি তিনি কিছু জানাতে চাননি।
বিজেপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। রাজ্য বিজেপি নেতা সজল ঘোষ বলেছেন, রাজ্য সরকারের শাসক দল দুর্নীতিতে ডুবে গেছে। সব জায়গাতেই চুরি হচ্ছে। এই আন্দোলনকারীদের ভাগ্য নিয়েও খেলছে তৃণমূল সরকার। তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে রয়েছেন বলেও দাবি করেন।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির সমালোচনা করে এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন শীর্ষ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, আন্দোলনকারীরা রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে, জীবন বিপন্ন করে রাস্তায় বসে ন্যায্য দাবিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। তৃণমূল সরকারের উচিত অবিলম্বে তাদের চাকরি দেয়া।