হোম অন্যান্যসারাদেশ মাগুরায় খোয়াড় মালিকের অপমান সইতে না পেরে বৃদ্ধ কৃষকের আত্মহত্যা

মাগুরা অফিস :

মাগুরায় খোয়াড় মালিকের লাঞ্ছনার শিকার হয়ে মাগুরা সদর উপজেলার ধর্মদাহ গ্রামে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বৃদ্ধ মসলেম শেখ (৬৫) নামে দরিদ্র এক কৃষক।

নিহতের স্ত্রী আমেনা খাতুন জানান, গত ১০ মার্চ সকালে তার স্বামী তাদের পোষা দুইটি বাচ্চাসহ একটি ছাগল মাঠে ঘাস খাওয়ার জন্য বেধে রেখে আসেন। কিছু সময় পর মাঠে গিয়ে দেখেন ছাগল নাই। পরে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায় তারা জানতে পারে মরিচ ক্ষেতের পাতা খাওয়ার অভিযোগে নজরুল নামে এক প্রতিবেশী ছাগলটি বাচ্চাসহ ধর্মদাহ গ্রামের আবু কালামের খোয়াড়ে দিয়ে এসেছে। এ খবরের ভিত্তিতে তার হতদরিদ্র স্বামী মসলেম শেখ ছাগল আনতে গেলে খোয়াড় মালিক কালামের খোয়াড়ে ছাগল আনতে গেলে কালাম ছাগল ছাড়াতে ১ হাজার টাকা দাবি করে। বাড়ি ফিরে এসে মসলেম শেখ প্রতিবেশীদের কাছ থেকে প্রথমে ২’শ টাকা ধার করে ওই খোয়াড় মালিকের কাছে গেলে সে এক হাজারের নিচে ছাগল দেবে না বলে ফিরিয়ে দেয়।

এ সময় মসলেম আরো একশত টাকা ধার করে ৩’শ টাকা নিয়ে ছাগলটি ফেরত আনতে গেলে তাকে ঘাড় ধাক্কা দেয়াসহ মারধর করে। এ ঘটনায় তার স্বামী লজ্জা অপমানে বাড়িতে ফিরে ঘরের পেছনে একটি গাছের সাথে গলায় মাফলার পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় মসলেম শেখকে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেন সেখানকার চিকিৎসকরা। কিন্তু দারিদ্রের কারণে তাকে ঢাকায় নেয়া সম্ভব না হওয়ায় আবারো মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৭ টায় মারা যান মসলেম শেখ।

প্রতিবেশী ইব্রাহিম আলী জানান, কালাম শেখের খোয়াড়ের সরকারি কোনো অনুমোদন নেই। অথচ অবৈধভাবে গত দুই বছর ধরে তিনি গ্রামের সাধারণ মানুষের গরু ছাগল আটকে রেখে যথেচ্ছা অর্থ আদায় করছে। মাগুরার প্রশাসন বিষয়টি আমলে নেয়নি বলেই একজন বৃদ্ধ মানুষকে জীবন দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

এদিকে নিহতের স্ত্রী আমেনা খাতুনের অভিযোগ গত ১৭ মার্চ তিনি এ বিষয়ে মাগুরা সদর থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অভিযোগের তিনদিন পর গতকাল শনিবার দুপুরে মামলা হিসেবে রের্কড করেন সদর থানার ওসি। উপরন্ত ছাগলটি এখনো অনুমোদনহীন খোয়াড়ে আটক রয়েছে। তিনি তার স্বামীর মৃত্যুর ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

শত্রুজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সনজিত বিশ্বাস বলেন, খোয়াড় নিয়ে এলাকায় বাধ-বিবাধ হয় অনেক। যে কারণে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গত দুই বছর কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। তারপরও কালাম শেখ অবৈধভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এতে সাধারণ গ্রামবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও শুনেছি।

মাগুরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জয়নাল আবেদীন জানান, এ বিষয়ে মসলেম শেখের স্ত্রী আমেন খাতুন খোয়াড় মালিক আবু কালাম ও তার ছেলে নিজাম হোসেনের নামে অভিযোগ দিয়েছেন। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিষয়টি নিয়ে ধর্মদাহ গ্রামের অনুমোদনবিহীন খোয়াড় মালিক আবু কালামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মসলেম শেখকে লাঞ্ছিত ও মারধর করার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

s

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন