রাজনীতি ডেস্ক:
বগুড়া সদরের বাঘোপাড়ায় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালালো হয়েছে। এতে আহত হয়েছে দুই পুলিশ ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন।
এ সময় হরতাল সমর্থকরা বগুড়া সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফিরোজা পারভীন ও রোগীবাহী মিনিবাসে হামলা চালিয়েছেন। এতে রোগীবাহী মিনিবাসে থাকা তিনজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গুলি ছোড়ে। এতে দুই শিশু ও পাঁচ হরতাল সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে বাঘোপাড়ার খোলারঘরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিন সাংবাদিকও আহত হয়েছেন।
গুলিবিদ্ধ শিশুরা হলো- বগুড়া সদর উপজেলার বাঘোপাড়া খোলারঘরে আব্দুর রবের ছেলে মহিউদ্দিন মাহি (৮) ও মাকসুদুরের ছেলে আওলাদ (১৫)। তাদের মধ্যে শিশু মাহি বেসরকারি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজে ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি পাঁচজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
পিকেটারদের হামলায় আহত তিন সাংবাদিক হলেন- দৈনিক করতোয়ার মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার রাহাত রূপান্তর, দৈনিক জয়যুগান্তরের সাব্বির শাকিল ও এনসিএন নামে এক অনলাইন নিউজ পোর্টালের রিপোর্টার ববিন রহমান। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
আহত ডিবি পুলিশের দুই সদস্য হলেন- ইসমাইল ও মোস্তাফিজুর। তারা সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ ছাড়াও রোগীবাহী মিনিবাসে থাকা তিন রোগী হলেন- সাগরিকা (৩০), নাহিদা (৩৫) ও লুৎফন্নেছা (৫৫)। তারা টিএমএসএস মেডিকেল কলেজে ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলের ডাকা হরতালের সমর্থনে মহাসড়কে খোলারঘর এলাকায় স্থানীয় প্রায় শতাধিক ব্যক্তি সকাল থেকে পিকেটিং শুরু করে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ বুঝিয়ে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এরপরে আবারও তারা মহাসড়কে পিকেটিং শুরু করে। এ সময় কয়েকটি বাস, ট্রাক ও অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়। বগুড়া সদর উপজেলার ইউএনও ফিরোজা পারভীন লাহেড়িপাড়া ইউনিয়নে একটি মন্দির পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে তার সরকারি গাড়িতে হামলা চালানো হয়। একই সময় রোগীবাহী দুটি মিনিবাসও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় পিকেটারদের হামলায় মিনিবাসে থাকা জয়পুরহাটের তিনজন রোগী আহত হন। খবর পেয়ে বগুড়া সদর থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের দুটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ছোড়ে। এতে দুই শিশু ও পাঁচ হরতাল সমর্থক গুলিবিদ্ধ হন।
পরে বাঘোপাড়ার উত্তরপাড়া জামে মসজিদ থেকে ডিবি পুলিশের সদস্যদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। এ সময় মাইকে বলা হয়, ‘ডিবি পুলিশের ভাইয়েরা আপনারা এলাকা থেকে চলে যান। আপনাদের গুলিতে শিশুরা আহত হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে, এলাকাবাসীও সরে যান।’
এর পরই শতশত ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপরে হামলা চালান। এ সময় তিন সাংবাদিক ও দুই ডিবি পুলিশের সদস্য আহত হন। গোকুল ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়ার কথা সত্য। তবে কে বা কেন এ ঘোষণা দিয়েছেন তা জানি না। এলাকার পরিস্থিতি এখনো থমথমে। এলাকাবাসী কাউকেই ঢুকতে দিচ্ছেন না।’
বগুড়া সদর উপজেলার ইউএনও ফিরোজা পারভীন বলেন, একটি মন্দির পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। গাড়ির কাঁচ ভেঙে গেছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। এই ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বগুড়া ডিবি পুলিশের ওসি মোস্তাফিজ হাসান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি করতে বাধ্য হয়েছে। তারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে। অতিরিক্ত ফোর্স পাঠানো হয়েছে। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করে সংঘর্ষে জড়িয়ে যান। তাদের সরিয়ে দিলে পুলিশের ওপর চড়াও হন। এ সময় কয়েকজন আহত হন। এর মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।