বিনোদন ডেস্ক:
ভক্ত-অনুরাগীদের হৃদয়ের গহীনে প্রিয় তারকার জন্য যে এত শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা লুকিয়ে ছিল, সেটা ভারতের প্রয়াত সংগীতশিল্পী জুবিন গার্গের শেষযাত্রা না দেখলে বোঝাই যেত না। জুবিনের মৃত্যুর খবর প্রচারিত হওয়ার পর থেকে অনুরাগীরা প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাননি। দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে ষড়যন্ত্র থেকে শাস্তির দাবি- কিছুই বাদ যায়নি। রাগ, ক্ষোভের প্রশমন হতে নিজ মাতৃভূমি আসামে এসে পৌঁছেছে প্রিয় শিল্পী, প্রিয় মানুষ জুবিনের মরদেহ। ব্যস। যাবতীয় অবিশ্বাস, ক্ষোভ, রাগ, ভালোবাসা- সব পরিণত হয়েছে চোখের পানিতে।
জুবিন গার্গ ছিলেন আসামের সত্যিকারের ‘জনতার তারকা’, সেটা তার মৃত্যুর পর আরও একবার প্রমাণিত হলো। সম্প্রতি সিঙ্গাপুর সফরে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন বলিউডের জনপ্রিয় এই গায়ক। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এই তারকার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর এ শিল্পীর মরদেহ আসামে পৌঁছতেই রাস্তায় জনতার ঢল নামে। প্রিয় শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে রাস্তায় নেমেছিল যেন গোটা আসাম। শেষকৃত্যের দিনেও একই চিত্র। লাখো ভক্তের উপস্থিতিতে সম্পন্ন করা হয় তার শেষকৃত্য। এসময় একবারও মরদেহের কাছ থেকে সরেননি স্ত্রী গারিমা।
জুবিনের কোনো সন্তানাদি নেই। তাই অনেকের প্রশ্ন ছিল, মুখাগ্নি কে করবেন? এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দিল তার উত্তর। সেখানে দেখা যায়, চন্দন কাঠে সাজানো হয়েছিল অন্তিম শয্যা। নিথর গায়কের মুখে আগুন দেন ছোট বোন পামী বড়ঠাকুর।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বের মোট চারজন ব্যক্তির শেষযাত্রায় এমন জনসমুদ্র দেখা গেছে, জুবিন তাদের মধ্যে অন্যতম। মৃত্যুর পর বিশ্বরেকর্ড গড়লেন জুবিন।
প্রিয় তারকাকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে রোববার থেকে আসামের পথে নেমেছে লাখ লাখ মানুষ। সেই অনুরাগীর সংখ্যায়ই নজির সৃষ্টি করেছে জুবিনের অনন্তযাত্রায়। তালিকায় সবার ওপরে রয়েছেন মাইকেল জ্যাকসন, দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস, তিন নম্বরে ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ এবং চতুর্থ নম্বরে ভারতের জুবিন গার্গ।
তিনদিন ধরে কার্যত আসাম অচল। মঙ্গলবার জুবিনের শেষকৃত্যের যাত্রার জন্য গুয়াহাটির জাতীয় সড়কেও যান চলাচল বন্ধ ছিল। গায়কের এই শেষকৃত্যের বাঁধভাঙা জনসমুদ্রই বিশ্বের সর্ববৃহৎ চতুর্থ জমায়েত হিসেবে নাম লেখাল ‘লিমকা বুকস্ অফ রেকর্ডে’।
তারা বলছেন, প্রিয় গায়ককে শেষবিদায় জানাতে রাস্তায় নেমেছিল প্রায় ১৭ লাখ মানুষ। ভারতের বুকে এর আগে কোনো তারকার জন্য এমন বিপুলসংখ্যায় মানুষ নেমেছে বলে নজির নেই। যদিও উত্তমকুমারের মৃত্যুর সময় কলকাতার রাস্তায় নেমেছিল হাজার হাজার মানুষ। রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের সময়ও এমনই জনসমুদ্র দেখেছিল ভারতবাসী। তবে সেই পরিসংখ্যান জানা নেই।
এদিকে, জুবিন গার্গের আকস্মিক মৃত্যু এখনো মেনে নিতে পারছেন না তার অনুরাগীরা। আসামে এখনো শোকের আবহ বিরাজমান। প্রয়াত গায়ককে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় উপচে পড়েছিল গায়কের কাহিলপাড়ার বাড়িতে। গায়কের স্মৃতিতে তার পায়ের ছাপ তুলে রাখলেন শিল্পী দিগন্ত ভারতী।
প্রসঙ্গত, সিঙ্গাপুরের নর্থ-ইস্ট ফেস্টিভ্যালে ২০ এবং ২১ সেপ্টেম্বর পারফর্ম করার কথা ছিল জুবিনের। কিন্তু তার আগে ১৯ তারিখ তিনি সুরের যাত্রা ছেড়ে চিরতরে বিদায় নিলেন। জানা গেছে, জুবিনের মৃগী রোগের সমস্যা ছিল। পানির তলদেশে স্কুবা ডাইভিং করতে নেমে তা উসকে ওঠায় প্রাণ হারান তিনি। তবে আসল কারণ জানতে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী।