হোম ফিচার মহারাজ কী হারিয়ে যাবে? আজ তার ১৩৪ তম জন্মদিন

মোহাম্মদ আরীফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ :

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সেই বিপ্লবী মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী। আজ তার ১৩৪ তম জন্মদিন। ব্রিটিশ শাসকদের ভয়ের কারণ হয়ে থাকা সেই মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর জন্ম- মৃত্যুর দিন গুলো কেটে যায় অনেকটাই নীরবে। সরকারী কোন উদ্যোগ না থাকায় মহারাজ হারিয়ে যাচ্ছে কুলিয়ারচর তথা বাংলাদেশ হতে।

বাংলার নির্যাতিত- নিপীড়িত ও মুক্তিকামী মানুষের প্রিয় এ মহারাজের জন্ম ১৮৮৯ সালের ৫ মে সে সময়ের ময়মনসিংহ জেলায়। যা বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার কাপাসাটিয়া গ্রামে। এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম তার।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন এক পাতানো যুদ্ধে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের মধ্য দিয়ে ইংরেজরা ভারতবর্ষে ক্ষমতায়িত হয়। চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতা হারায় ভারতবাসী। ছিনিয়ে নেওয়া সেই স্বাধীনতা ব্রিটিশদের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনতে জীবনের সবটুকু সময় বিসর্জন দিয়েছেন মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী। এমনকি সারা জীবন তিনি ছিলেন চির কুমার। বছরের পর বছর বন্দি থেকেছেন জেলখানাতে।

জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার বিপুল উদ্যমে সংগঠনের কাজ করেছেন তিনি।

মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল না। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মতো বিশ্ববরেণ্য নেতারা তাকে স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। মহারাজকে শ্রদ্ধা করতেন বাংলার আরেক স্বাধীনতাকামী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী কেবল বিপ্লবী ছিলেন না। তিনি একাধারে লেখক, কবি, চিন্তাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্নেষক ছিলেন। লিখেছেন ‘জেলে ত্রিশ বছর ও পাক- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম’ নামক বই।

জীবনসায়াহ্নে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারত যান ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী। প্রথমে অসম্মতি জানালেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ তদারকিতে ভিসা দিতে সম্মত হয় পাকিস্তান সরকার। ১৯৭০ সালের ২৪ জুন যশোরের বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে মহারাজ ভারতে প্রবেশ করেন। এ সময় সীমান্তে উপস্থিত ভক্তরা অশ্রুসজল নয়নে তাকে বিদায় জানান। ভারতে পৌঁছে নানা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। পুরোনো বন্ধু, সহযোদ্ধা, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করেন। সফরে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ হয় ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে।

প্রায় ৪৭ দিনের ভারত সফরের প্রতিটি দিন পার করেছেন ব্যস্ততার সঙ্গে। ১৯৭০ সালের ৯ আগস্ট রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন এ মহান নেতা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন