হোম খুলনাযশোর মনিরামপুরে শহীদ হন ৫ সূর্য সন্তান, স্মৃতি রক্ষার্থে নেয়া হয়নি উদ্যোগ

রিপন হোসেন সাজু, মনিরামপুর (যশোর) :

২৩ অক্টোবর ১৯৭১ রাজাকাররা রাইফেলের বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ও পরে গুলি করে প্রাণ নেয় যশোরের ৫ সূর্য সন্তানের। দীর্ঘ ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও স্বাধীনতা-পরবর্তী কোনো সরকার এসব শহীদের যথাযথ মর্যাদা দেয়নি। স্মৃতি রক্ষার্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, শহীদ হওয়া পাঁচজনই বাম ঘরানার হওয়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা রাখেনি। ফলে শহীদদের সমাধি ও স্মৃতিচিহ্ন যুগের পর যুগ পড়ে আছে অবহেলায়। তবে প্রতি বছর এ দিনটিতে স্থানীয় কিছু বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদদের স্মরণ করেন। তারা শুধু সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাান। আর আগের দিন ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচ্ছন্ন ও রঙ করা হয়।

এ দিন শহীদ হয়েছিলেন: আসাদুজ্জামান আসাদ, সিরাজুল ইসলাম শান্তি, আহসান উদ্দীন খান মানিক, আশিকুর রহমান তোজো ও ফজলুর রহমান ফজলু। ওই নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে এখনো সাক্ষী হিসেবে বেঁচে আছেন চিনাটোলা বাজারের মুটে ব্যবসায়ী শ্যামাপদ নাথ।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ২৩ অক্টোবর সকালে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রত্মেস্বরপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র ছয় যুবক। কিন্তু পাকহানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকারদের চোখ এড়াতে পারেননি তারা। রাজাকাররা ছয় যুবককের গ্রেপ্তার করে। এরপর চোখ বাঁধা অবস্থায় আনা হয় মনিরামপুর উপজেলার চিনাটোলা বাজারে। বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের শরীরে লবণ দেওয়া হয়। অমানবিক নির্যাতন চালানো হয় ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত। রাত ৮টার দিকে নেয়া হয় সৈয়দ মাহমুদপুর গ্রাম সংলগ্ন হরিহর নদের তীরবর্তী স্থানে। সেখানে থেকে নদীতে লাফ দিয়ে একজন পালিয়ে যায়। কিন্তু রাজাকারদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি অপর ৫ যুবক। কিছুক্ষণ পর বাঁশি বাজতেই বন্দুকের কয়েকটি গুলির আওয়াজ শোনা যায়। একে একে মুক্তিসেনা আসাদ, তোজো, শাস্তি, মানিক ও ফজলুকে হত্যা করা হয়। নদীর তীরে যেখানে তাদের হত্যা করা হয়, পরদিন সকালে সেখানে তাদের সমাহিত করা হয়। পাঁচ সূর্য্য সন্তানের বর্বর হত্যাকান্ডের স্মৃতি আজো ভুলতে পারেনি শ্যামাপদ নাথ। তার আক্ষেপ স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশমাতৃকার জন্য যারা অকাতরে শহীদ হলো তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে আজ পর্যন্ত কোনো সরকার কিছু করল না। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে শহীদদের সেই বধ্যভূমি। এদিনটি স্বরণ করতে পরিচ্ছন্ন ও রঙ করান হয়েছে শহীদদের সমাধিস্থল।

রোববার ধোয়ামোছার কাজ করছিলেন ওমর আলী। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে তিনি সিরাজুল ইসলামের তত্বাবধানে পরিচ্ছনতার কাজ করে আসছেন। মনিরামপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার গাজী আবদুল হামিদ বলেন, সরকারিভাবে পাঁচ সূর্য্য সন্তানকে মনে রাখা হয় না। শুধুমাত্র ফজলুকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নেয়া হয়েছে। তিনি অন্যদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম উঠানোর দাবি জানান। একই সাথে এদেরকে স্মরণ করতে সরকারিভাবে স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে উদ্যোগ নিতে বলেন আবদুল হামিদ।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আলাউদ্দিন বলেন, স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির কর্মসূচিতে আমরা মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ অংশ নিয়ে থাকি। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, উপজেলার সব শহীদদের স্মৃতি ও বধ্যভূমি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে বলা হবে। আজ পাঁচ শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে এ সূর্য সন্তানদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন