মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি:
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মাছনা খানপুর গ্রামের হাফেজ হাফেজ বেলাল হুসাইনের এবের পর এক পল চাষ করে সফল হয়েছেন।পরিচিতি লাভ করেছেন আদর্শ চাষী হিসেবে,খেতাব পেয়েছেন ফল চাষী বিলাল নামে। তিনি এখন চাষ ও চাষীর জন্য আইডল। তিনি শিক্ষিত বেকার যুবকদের এখন উদাহরণ। বিলালের সফলতার গল্পটি বেশ চমকপ্রদ। মনিরামপুর উপজেলার প্রান্তিক চাষী নজরুল ইসলাম ও গৃহিনী মাতা আলেয়া বেগম চার ছেলে মেয়ের মধ্যে বিলাল হুসাইন বড়। বিলাল স্থানীয় মাছনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম ও মনিরামপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৭ম শ্রেণী পাস করে মাছনা মাদ্রাসায় মক্তব বিভাগে ভর্তি হন। তারপর কুরআনের হেফজ শেষ করে সাতক্ষীরা তালা উপজেলা আল আমিন ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২০১১ সালে বিজ্ঞানে দাখিল পাস করেন। এরপর মনিরামপুর ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম শেষ করে যশোর এম এম কলেজ থেকে ইসলামিক স্টাডিজ এ অনার্স শেষ করেন।এদিকে মনিরামপুর ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস করে মনিরামপুর লাউড়ি কামিল মাদ্রাসা থেকে কামিল শেষ করেন। বর্তমানে দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় কর্মরত আছেন। উচ্চ শিক্ষিত বিলালের ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল স্বনির্ভর হয়ে মানুষের জন্য কিছু করা । সেই স্বপ্ন তাকে সব সময় তাড়না করে বেড়াতো। প্রান্তিক চাষীর ছেলে হয়েও জীবনের চড়াই উৎরাই পার করে লেখাপড়ার সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছেন বিলাল। অদম্য ইচ্ছা শক্তি দিয়েই অর্জন করেছেন তিনি। সেই স্বপ্ন তাকে কোন বাঁধায় আটকাতে পারেনি।এখন স্বপ্ন নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ও মানুষের জন্য কিছু করা। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ইচ্ছা শক্তি ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে বছর পাচেক আগে এক বন্ধুর পরামর্শে দুই বিঘা জমি লীজ নিয়ে মাল্টা চাষ শুরু করেন। মাল্টা বাগানের মধ্যে কুল ও পেয়ারা লাগিয়ে মূলতঃ মিশ্র ফলের চাষের যাত্রা শুরু হয়।ওই আবাদে খরচ বাদেও লাভবান হন বিলাল।এরপর ৫বিঘা জমিতে শুরু করেন ড্রাগন চাষ।তাতেও লাভবান হন তিনি।সেই থেকে একের একর পর এক নতুন নতুন ফলের আবাদ শুরু করেন বিলাল। গড়ে তোলেন “শুকরিয়া এগ্রো ফার্ম”।এবার হাফেজ বিলাল ঝুঁকে পড়েন বিভিন্ন বিদেশি ফলের দিকে।আঙ্গুর,স্ট্রবেরি, আনার, ত্বীনফল, মালবেরি, লটকন, বারমাসি আম,বারমাসি মাল্টা,বারমাসি লেবু,বিভিন্ন জাতের রঙিন আম,পাশাপাশি সাইট্রাসের বিভিন্ন জাত নিয়ে কাজ করেন তিনি। তিনি শুধু এর আবাদ করেননি ,বরং বিভিন্ন জাতের চারা উৎপন্ন করে তা বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন তিনি। মিশ্র ফলের পাশাপাশি শসা,টমেটো,বিভিন্ন জাতের কপি,বেগুন,মরিচ ইত্যাদির চাষ করে থাকেন। গত বছর ২০ শতক জমিতে রাবি-৩ ও আমেরিকান ফেস্টিভ্যাল স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। এর পাশাপাশি অন্ততঃ ২০ জাতের আঙ্গুর চাষ করেছেন।এতে প্রায় জাতে ফুলের দেখা গেেেছ।শুকরিয়া ফার্মে এলাকার শ্রমজীবি মানুষ কাজের সুযোগ পাচ্ছে। মিশ্র ফল চাষী হাফেজ বিলাল বলেন, আলহামদুল্লিাহ,আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে আমি যখন যে ফলের চাষ করেছি তাতে লাভবান হয়েছি। মাল্টার সাথে কুল ও পেয়ারাতে লাভবান হয়ে ড্রাগনের আবাদ করি তাতেও লাভবান হয়েছি। বর্তমানে স্ট্রবেরি চাষে লাভবান হচ্ছি। এবার অন্ততঃ ২০জাতের আঙ্গুর চাষ করেছি, ফুল এসেছে আশা করছি এ চাষেও ইনশাআল্লাহ লাভবান হবো।
বিলালের বাগানের শ্রমিক ইউনুস আলী বলেন, বিলাল ভাই বাগান করেছিলেন বলে আমরা ১০-১৫জন শ্রমিক নিয়মিত কাজের সুযোগ পাচ্ছি এবং পরিবার পারজন নিয়ে খেয়ে পরে বেঁচে আছি। স্থানীয় মাছনা গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক সায়ফুল আলম বলেন,প্রবল ইচ্ছা শক্তি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সবকিছু অর্জন করা যায়,তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো হাফেজ বিলাল।তিনি বেকার যুবকদের জন্য একজন উদাহরণ। মনিরামপুর উপজেলা উপসহকারী কৃষি অফিসার মোঃ সালাউদ্দীন আহমেদ বলেন, হাফেজ বিল্লাল একজন আদর্শ ও মিশ্র ফল চাষী,তিনি কৃষি ও কৃষকদের জন্য আইডল। তার দেখে এলাকার বেকার যুবক ও চাষী বিভিন্ন ফলের আবাদ করছেন।
মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋমোছাঃ মাহমুদা খাতুন বলেন, এখানকার মাটি,জলবায়ু,পরিবেশ ফল চাষের জন্য উপযোগী। এখানে বানিজ্যিকভিত্তিতে ‘মালটা,ড্রাগন,কুল ,পেয়ারা,আমসহ বিভিন্ন ফলের চাষ হচ্ছে। হাফেজ বিলাল একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষ। তিনি নতুন নতুন ও মিশ্র ফল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তার স্ট্রবেরি দেখতে চমৎকার ও বেশ সুস্বাদু । তিনি বিভিন্ন জাতের আঙ্গুর ও অন্যান্য বিভিন্ন ফলের আবাদ করেছেন । কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়।