হোম অন্যান্যসারাদেশ মনিরামপুরে নিজ ঘর থেকে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী মিনহাজুল আবেদীনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।

মনিরামপুর( যশোর) প্রতিনিধি :

মনিরামপুরে মিনহাজুল আবেদীন (২৬) নামে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর নিজ ঘর থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা। স্বজনদের দাবি, তিনি ফ্যানের সঙ্গে মাফলার পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

মৃত মিনহাজুল আবেদীন উপজেলার সালামতপুর গ্রামের স্কুলশিক্ষক ফারুক হোসেনের ছেলে। তিনি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) গণিত বিভাগের ছাত্র ছিলেন। রোবটিক্স বিষয়ক সংগঠন’ রোবোআড্ডার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতিও ছিল মিনহাজুল। গত ১৫-১৬ দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়িতে আসেন তিনি।

মৃতের বাবা ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে সব সময় রোবট নিয়ে গবেষণা করত। প্রায় প্রতিদিনই সারা রাত ঘুমাত না। রাত জেগে রোবট নিয়ে কাজ করত। ভোর হলে ঘুমাত। রোবট নিয়ে কাজ করতে করতে সে মানসিক রোগী হয়ে যায়। আমরা তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার দেখিয়েছি। অপরদিকে, এবার অনার্স শেষ বর্ষে পরীক্ষায় সে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল। এ নিয়েও হতাশায় ছিল।’

ফারুক হোসেন আরও বলেন, ‘গতকাল বুধবার রাতে খাবার খেয়ে নিজ ঘরে দরজা বন্ধ করে অনলাইনে মিটিং করছিল আমার ছেলে। পরে আমরাও ঘুমিয়ে পড়ি। ভোরে উঠে আমার স্ত্রী ছেলের ঘরে আলো জ্বলতে দেখেন। তখন তিনি জানালা দিয়ে দেখতে পান আমার ছেলে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে। পরে দরজা ভেঙে আমরা মরদেহ উদ্ধার করি।’

এ বিষয়ে মিনহাজুলের সহপাঠী ওমর ফারুক বলেন, ‘তাঁর আত্মহত্যার বিভিন্ন কারণ ছিল। সে রোবোআড্ডায় সময় দিতে গিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারত না। বিভাগের কয়েকটি কোর্স ড্রপ ছিল। তা ছাড়া প্রেমঘটিত কারণও রয়েছে। এসব কারণে তাঁর মনে বিষণ্নতা সৃষ্টি হয়েছিল।’

মিনহাজুল মায়ের বরাত দিয়ে অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রশীদ বলেন, ‘মিনহাজুলের মা আজ সকালে কল দিয়ে আমাকে জানান যে, সে আত্মহত্যা করেছে। শুধু তাই নয়, বাড়িতে যাওয়ার পরপরই সে ফেসবুকে কয়েকবার আত্মহত্যা করার মতো করে হতাশার ও বিষণ্নতার পোস্ট দিয়েছিল। এরপর তাঁর মায়ের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি, খোঁজ নিয়েছি। তাঁর মায়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল।’

আরেক শিক্ষক এসএম সাইদুর রহমান বলেন, ‘গত কয়েক দিন আগে ফেসবুকে সে একটি হতাশার পোস্ট দেয়। পরে কাউন্সেলিংয়ের জন্য তাঁর মাকে বলেছিলাম। তাঁর মা জানিয়েছিল যে, ডাক্তার দেখে গেছে। কিন্তু আজ সকালে তাঁর মা জানাল যে, সে আত্মহত্যা করেছে।’

যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হামিদুর হক শাহীন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় মিনহাজুল আবেদীন বাংলাদেশের হয়ে প্রথম রানারআপ হয়েছিল। সে রোবোআড্ডা নামে ওই সংগঠনের হয়ে রোবটকে কীভাবে মানবকল্যাণে কাজে লাগানো যায় ও শিক্ষার্থীদের কীভাবে বিজ্ঞান মনস্ক করার জন্য প্রতি জেলায় সেমিনার করত। সেমিনারের মধ্য দিয়ে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়।’

খেদাপাড়া ক্যাম্প পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সমেন বিশ্বাস বলেন, ‘ওই ছাত্রের আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। তাঁর পরিবারের সদস্যরা আমাদের জানিয়েছে, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১০ শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল। অন্যরা চলেও গেছে। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে মিনহাজুল যেতে পারেনি। এ নিয়ে কিছুটা হতাশায় ছিল।’

এসআই আরও বলেন, ‘অতি মেধাবী হওয়ায় রোবট নিয়ে কাজ করতে যেয়ে সে মানসিক রোগী হয়ে গেছেন। এর আগেও একাধিকবার আত্মহত্যার কথা বলেছিল সে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাঁর বাবা-মাকেও সতর্ক করেছিল। এ ছাড়া পরিবারের সঙ্গে তাঁর কোনো সমস্যা ছিল না বলে জানা গেছে।’

এ ব্যাপারে মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে আজ দুপুরে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন