হোম অন্যান্যসারাদেশ মধুমতি নদী ভাঙনে দিশেহারা নড়াইলের ইতনা ইউনিয়নের ৪ গ্রামের শতাধিক মানুষ

মধুমতি নদী ভাঙনে দিশেহারা নড়াইলের ইতনা ইউনিয়নের ৪ গ্রামের শতাধিক মানুষ

কর্তৃক
০ মন্তব্য 134 ভিউজ

মোস্তফা কামাল,নড়াইল :
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের চরপরাণপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ অজিরন নেসার (১১০) মতো এ এলাকার শতাধিক মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ১১০ বছরের এই বয়োবৃদ্ধ নারী অজিরন কানে একটু কম শুনতে পেলেও চোখে দেখেন ঠিকই। তাই এ এলাকার দীর্ঘদিনের নদী ভাঙনের দুঃখ-দুর্দশার জীবন্ত স্বাক্ষী তিনি। মধুমতি নদী ভাঙতে ভাঙতে এবার বয়োবৃদ্ধ এই নারীর খুপড়ি ঘরের কাছেই হানা দিয়েছে। শেষ সম্বল ভিটেমাটিটুকু হারানোর শংকায় চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই তার।

ইউনিয়নের পীরচরসুচাইল গ্রামের শেখ আব্দুল মান্নান বলেন, এ এলাকার বেশির ভাগ মানুষ কৃষক ও শ্রমজীবী। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে মধুমতি নদী ভাঙনে দিশেহারা আমরা। চরসুচাইল, চরপাঁচাইল, চরপরাণপুর ও চরঘোণাপাড়ার লোকজন বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত চরসুচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে স্কুলের এক একর ১০ শতক মাঠ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন করেও কোনো সুফল মেলেনি।

চরসুচাইল গ্রামের আশরাফ শেখ, আজিজুর রহমান, কুলসুম বেগম, মালেকা বেগম, সোহেল মুন্সী ও রাজিবসহ ভূক্তভোগীরা জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে এ এলাকায় নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলেও প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়া চরসুচাইলসহ চারটি গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর, হাজারো গাছপালা ও কৃষি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগারের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক চরসুচাইল গ্রামের আরুক মুন্সী বলেন, এপারে নড়াইল জেলা; ওপারে গোপালগঞ্জ জেলা। বর্তমানে নড়াইলের ইতনা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চরসুচাইল, চরপাঁচাইল, চরপরাণপুর ও চরঘোণাপাড়ার মানুষ নদী ভাঙনে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অনেকে একাধিকবার বাড়িঘর, কৃষি জমি, গাছপালাসহ সহায়-সম্বল হারিয়েছেন। ভাঙনরোধে দ্রæত কাজ না করলে বাড়িঘর হারিয়ে অনেকের ঠাঁই রাস্তায় হবে।

চরসুচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুন্সী কামরুজ্জামান বলেন, ১০ বছর আগে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। প্রথম দিকে ২০০ ছাত্রছাত্রী পেলেও নদী ভাঙনের শিকার হয়ে অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। বর্তমানে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১০জন। স্কুল মাঠটিও নেই, এক বছর আগে নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন টিনশেডের পাঁকাঘরটির কাছেই ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন থেকে মাত্র ১০ ফুট দুরে আছে স্কুলঘরটি। আমাদের দাবি, মাশরাফি বিন মর্তুজা এমপি মহোদয় যেন স্কুলটি রক্ষায় দ্রæত ব্যবস্থা নেন। এ পরিস্থিতিতে স্কুলঘরটির পাশেই গাছপালা কেটে বাঁশ ও টিন দিয়ে ছোট একটি ঘর তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। করোনাসংকট পরবর্তী সময়ে স্কুল খুললে যাতে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করতে পারে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শাহন নেওয়াজ তালুকদার বলেন, চরসুচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ এ এলাকার ভাঙন প্রতিরোধে গত বছর একটি প্রকল্প দাখিল করা হলে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। যা দিয়ে ১৭০ মিটার কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব হলেও ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হতো না। তাই পাউবোর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে মধুমতি নদীর অতিকূল ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পের আওতায় এলাকাটি অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এখানে ৬০০ মিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। এক্ষেত্রে প্রস্তাব অনুযায়ী ৮ কোটি টাকা প্রয়োজন। আশা করা যাচ্ছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি অনুমোদন হতে পারে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন